Monday, January 31, 2011

দেশের মোবাইল ফোন কম্পানিগুলোতে বিদেশি জনবল নিয়োগের পরিমাণ মোট জনবলের ১ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। আর সিইও (প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা), সিএফও (প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তা) এবং সিটিওর (প্রধান কারিগরি কর্মকর্তা) মতো ব্যবস্থাপনা বা ঊর্ধ্বতন নির্বাহীর পদগুলোর ৫০ শতাংশে বাংলাদেশিদের নিয়োগ করতে হবে। যেসব মোবাইল ফোন কম্পানি এই শর্ত পূরণ করবে না, তাদের লাইসেন্স নবায়ন করা হবে না।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় দেশের মোবাইল ফোন কম্পানিগুলোর লাইসেন্স নবায়নের জন্য যে খসড়া নীতিমালা প্রস্তুত করেছে, তার ৩৪ দফায় ‘এমপ্লয়মেন্ট রেগুলেশন অব দ্য কম্পানি’ পর্বে এই শর্তের কথা জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের এক কর্মকর্তা এ বিষয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘টেলিযোগাযোগ খাতে দেশের নাগরিকদের কর্মসংস্থান বাড়ানোর লক্ষ্যেই এ শর্ত আরোপের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণের স্বার্থেই মোবাইল ফোন কম্পানিগুলোর উঁচু পদগুলোতে দেশি জনবল থাকা উচিত বলে আমাদের ধারণা।’
মোবাইল অপারেটররা এ ধরনের শর্ত আরোপের এখতিয়ার ডাক ও টেলিকম মন্ত্রণালয় রাখে কি না তা জানার চেষ্টা করছে। তাদের ধারণা, বিষয়টি বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ ও বাণিজ্যনীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হবে না। অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটর অব বাংলাদেশের (অ্যামটব) সেক্রেটারি জেনারেল আবু সাইদ খান এ বিষয়ে বলেন, ‘আমরা খসড়া নীতিমালার বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখছি। আইনগত অসংগতিসহ এ নীতিমালা সম্পর্কে আমাদের মতামত ৯ ফেব্র“য়ারির মধ্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে জানাব।’
এদিকে খসড়া নীতিমালায় লাইসেন্স নবায়ন এবং স্পেকট্রাম ইকুইজিশন ফিসহ অন্য যেসব চার্জের কথা বলা হয়েছে, তা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে সরকার চারটি মোবাইল ফোন কম্পানির কাছ থেকে এককালীন রাজস্ব আয় করবে ১৪ হাজার ৫৩৯ কোটি টাকা। লাইসেন্স নবায়ন ও স্পেকট্রামের জন্য গ্রামীণফোনকে সাত হাজার ৫৬ কোটি, বাংলালিংককে তিন হাজার ৩০০ কোটি, রবিকে তিন হাজার ১৬৩ কোটি এবং সিটিসেলকে এক হাজার ২০০ কোটি টাকা এককালীন দিতে হবে।
প্রসংগত, চলতি বছরের ১১ নভেম্বরের আগেই মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি ও সিটিসেলের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে।
এ চার মোবাইল ফোন অপারেটরের গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গ্রাহকসংখ্যা ও গ্রাহকপ্রতি আয়ের ভিত্তিতে আগামী ১৫ বছরে তাদের সম্ভাব্য আয় নির্ধারণ করে লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে তার ১৫ শতাংশ হারে রাজস্ব আদায়ের পরোক্ষ প্রস্তাব রয়েছে খসড়া নীতিমালায়।
বিটিআরসির হিসাব অনুযায়ী, গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গ্রাহকপ্রতি মাসে আয় ছিল গ্রামীণফোনের ২২৭, বাংলালিংকের ১৬০, রবির ১৯৭ ও সিটিসেলের ১৮০ টাকা। আর গ্রাহক ছিল গ্রামীণফোনের দুই কোটি ৮০ লাখ, বাংলালিংকের এক কোটি ৮০ লাখ, রবির এক কোটি ১০ লাখ এবং সিটিসেলের ১৯ লাখ। এই গ্রাহকসংখ্যা ও গ্রাহকপ্রতি আয় অনুযায়ী লাইসেন্স নবায়নের পর আগামী ১৫ বছরে এ চার কম্পানির সম্ভাব্য আয় ধরা হয়েছে এক লাখ ৯০ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে গ্রামীণফোন ৯০ হাজার ৭২০ কোটি, বাংলালিংক ৫৮ হাজার ৩২০ কোটি, রবি ৩৫ হাজার ৬৪০ কোটি এবং সিটিসেলের ছয় হাজার ১৫৬ কোটি টাকা সম্ভাব্য আয় ধরা হয়েছে। এই সম্ভাব্য আয়ের ১৫ শতাংশ অর্থাৎ ২৮ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা সরকারের রাজস্ব হিসেবে আদায়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা লাইসেন্স নবায়নের সময়ই আদায়ের পক্ষে খসড়া নীতিমালা প্রস্তুত করা হয়েছে।
কবে নাগাদ এ নীতিমালা চূড়ান্ত হতে পারেএ প্রশ্নে ডাক ও টেলিযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব সুনীল কান্তি বোস গতকাল রবিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এ বিষয়ে সময় বাড়াতে চাচ্ছেন। তবে চার মোবাইল অপারেটরের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই এটি চূড়ান্ত করা হবে। জনবল নিয়োগের শর্ত সম্পর্কে তিনি বলেন, বিষয়টি প্রচলিত আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কি না তা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।

No comments:

Post a Comment