Sunday, February 05, 2012

ঋণ দিয়েছে কৃষি ব্যাংকঃ রামুর সংরক্ষিত বনে মুরগির খামার

কক্সবাজারের রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের সংরক্ষিত বনের গহিন অরণ্যে প্রায় দুই একর জমি দখল করে মুরগির খামার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
 
এরই মধ্যে কয়েক শ গাছ কেটে দ্বিতল ভবনের কাঠামো দাঁড় করানো হয়েছে।

‘আরিশাহ মিশ্র খামার’ নামের মুরগির খামারটি করছেন বেসরকারি সংস্থা ‘গ্রিন কক্সবাজার’-এর নির্বাহী পরিচালক ও কক্সবাজার পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ফজলুল কাদের চৌধুরী। এ জন্য তিনি কৃষি ব্যাংক, কক্সবাজার শাখা থেকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ঋণ (এসএমই) প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৭৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন।
এ ব্যাপারে বন কর্মকর্তা জানান, নির্মাণাধীন ভবনটি বনবিভাগের গেজেটের আরএস-৪০০৫ দাগের অন্তর্ভুক্ত জমিতে পড়েছে। তাঁদের নির্দেশে ছয়-সাত দিন আগে ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ভবনের মালিক ফজলুল কাদের চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সারা জীবন পাহাড় কাটা ও সমুদ্র সৈকত দখলসহ পরিবেশ রক্ষা নিয়ে আন্দোলন করেছি। এখন আমি পরিবেশ নষ্ট হয়—এমন কাজ করব কেন? বনবিভাগ দাবি করছে, এই জমি নাকি তাদের। প্রমাণ হলে জমি ছেড়ে দেব।’
স্থানীয় লোকজন জানান, গহিন অরণ্য ও পাহাড়ের ভেতর গাছপালা কেটে ভবন তৈরি করার সময় স্থানীয় লোকজন বাধা দেন। তখন তাঁদের বলা হয়, এটি সরকারি খামার প্রকল্প। কৃষি ব্যাংকের টাকায় ভবন তৈরি করা হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পাঁচ শতাধিক লোকের কর্মসংস্থান হবে। এ কারণে ভবন নির্মাণে এত দিন কেউ বাধা দেননি। অনেক দিন ধরে এ ভবনে অস্ত্রধারী কিছু যুবকের অবস্থান লক্ষ করা যায়। বিষয়টি সন্দেহ হলে গত ৩১ ডিসেম্বর স্থানীয় বাসিন্দারা প্রধানমন্ত্রী, বন ও পরিবেশমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে একটি অভিযোগপত্র পাঠান। এতে কৃষি ব্যাংক ও বনবিভাগের কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশ থাকার অভিযোগ আনা হয়।
২২ জানুয়ারি সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, রামু উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের সবুজবাগ এলাকার বনতলায় বহুতল ভবনটি নির্মাণ করা হচ্ছে। ভবনের দ্বিতীয় তলার কাঠামো দাঁড় করানো হয়ে গেছে। এর কয়েক শ গজ দূরে পানেরছড়া বনবিট কার্যালয়। এটি তৈরি করতে কয়েক শ ইউকেলিপ্টাস ও আকাশমনিগাছ কাটা হয়েছে বলে বন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এর চারপাশ ঘিরে আরও অনেক গাছ দেখা গেছে। এর উত্তরে একটি কাঁচাঘর আছে। উল্টো দিকে আরেকটির খুঁটি পোঁতা হয়েছে। এসবের দেখভাল করছেন কয়েকজন শ্রমিক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শ্রমিক জানান, বনবিভাগের লোকজন কয়েক দিন আগে এসে ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। তাই তাঁরা অলস বসে আছেন।
কক্সবাজার (দক্ষিণ) বনবিভাগের পানেরছড়া বনবিট কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এ বিটের দায়িত্ব নিয়েছি দেড় মাস আগে। এর আগেই ভবনটি তৈরি হয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, যেখানে ভবনটি উঠছে, সেখানে বনবিভাগের গেজেটের আরএস-৪০০৫ দাগের অন্তর্ভুক্ত সংরক্ষিত বন। ফজলুল কাদের এ দাগের প্রায় দুই একর বনভূমি নিজের দাবি করে ভবনটি নির্মাণ করছেন।
পানেরছড়া বনরেঞ্জ কর্মকর্তা তাপস সন্যাল জানান, ভবনটি গহিন অরণ্যের যেখানে তৈরি করা হচ্ছে, সেখানে কোনো লোকজনের আসা-যাওয়া নেই। জঙ্গলের কারণে এটি দেখা যায় না। কিছুদিন আগে বনাঞ্চল পরিদর্শনে গিয়ে ভবনটি নজরে পড়ে। তখনই কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
কক্সবাজারের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) বিপুল কৃষ্ণ দাশ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সরেজমিন অনুসন্ধান করে এ ব্যাপারে আইনিব্যবস্থা নেব। সংরক্ষিত বনের জমিতে কাউকে এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না।’
কৃষি ব্যাংক, কক্সবাজারের মুখ্য আঞ্চলিক কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন বলেন, ‘জমির বিপরীতে দলিল দেখেই ওই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য আমরা এ পর্যন্ত প্রায় ৭৫ লাখ টাকা ফজলুল হক চৌধুরীকে দিয়েছি। যা দিয়ে তিনি সেখানে বহুতল ভবন তৈরি করছেন। এখন যদি ওই জমি বনবিভাগের বলা হয়, তাহলে সমস্যা দেখা দেবে।’

No comments:

Post a Comment