Tuesday, December 21, 2010

পৌর নির্বাচনঃ দলীয় প্রার্থী ঠিক করতে হিমশিম খাচ্ছে আ.লীগ

জোটগতভাবে পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত থাকলেও দলীয় একক প্রার্থী ঠিক করতেই হিমশিম খাচ্ছে আওয়ামী লীগ। অনেক স্থানে তৃণমূলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে একাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। এ অবস্থায় আগে দলীয় প্রার্থী ঠিক করার কৌশল নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এরপর মহাজোটের প্রার্থী সমর্থন নিয়ে শরিক দলের নেতাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা হবে। তবে ভেতরে ভেতরে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাদের মধ্যে এ নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। উভয় দলের নেতারা জোটগত প্রার্থী দেওয়ার ক্ষেত্রে দলীয়ভাবে ছাড় দিতে সম্মত বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, দুই দিন ধরে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকেরা দলীয় প্রার্থী সমর্থনের জন্য টানা বৈঠক করে যাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত ৬০ শতাংশ পৌরসভায় একক প্রার্থী সমর্থন হয়ে গেছে বলে নেতারা জানিয়েছেন। গতকাল রাতে ধানমন্ডির দলীয় কার্যালয়ে দীর্ঘ সময় তাঁরা বৈঠক করেন। আজ-কালের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঠিক হয়ে যাবে বলে নেতারা বলছেন।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, দলীয় প্রার্থী সমর্থন দেওয়ার পর মহাজোটের সঙ্গে আলোচনা হবে। আজকের মধ্যেই দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত হবে।
একক প্রার্থী সমর্থন দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয়ভাবে তৃণমূলের নেতাদের জন্য একটি মানদণ্ড ঠিক করে দিয়েছে। এরই মধ্যে তৃণমূলের নেতাদের ভোটে অনেক স্থানেই একক প্রার্থী ঠিক হয়েছে। তা ছাড়া মন্ত্রী-সাংসদের আত্মীয়দের প্রার্থী হতে কেন্দ্রীয়ভাবে বারণ করে দেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, মহাজোটের শরিকদের মধ্যে জাতীয় পার্টি ও ওয়ার্কার্স পার্টির দুটি তালিকা আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে দেওয়া হয়েছে। কাজী জাফর উল্যাহর নেতৃত্বে সাংগঠনিক সম্পাদকেরা তালিকায় দেওয়া প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা যাচাই-বাছাই করে দেখছেন। আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, জয়লাভের জন্য শুধু মহাজোটের শরিক নয়, মুত্তিযুদ্ধের পক্ষের যেকোনো প্রার্থীর পক্ষে ছাড় দিতে তাঁরা প্রস্তুত। ভালো প্রার্থী পেলে তাঁরা দলীয় প্রার্থীকে বসিয়ে দেবেন।
সূত্র জানায়, প্রার্থী সমর্থন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাদের মধ্যে ইতিবাচক আলোচনা হচ্ছে। জনপ্রিয় প্রার্থী থাকলে দুই দলই ছাড় দিতে প্রস্তুত। নেতারা আশা করছেন, মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময়সীমার মধ্যেই মহাজোটের একক প্রার্থী ঠিক হয়ে যাবে। তবে অনেক পৌরসভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বাইরে মহাজোটের প্রার্থী নেই। এমনকি কোথাও কোথাও বিএনপি বা জামায়াতের প্রার্থীও নেই। এসব পৌরসভায় প্রার্থিতা দলীয়ভাবে উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে বলে নেতারা জানিয়েছেন।
সূত্র জানায়, সিলেট বিভাগে ১৫টি পৌরসভায় নির্বাচন হবে। এর মধ্যে মৌলভীবাজার সদর, হবিগঞ্জ সদর ও কুলাউড়া পৌরসভায় একক প্রার্থী সমর্থন করতে পারেনি আওয়ামী লীগ। এ বিভাগে মহাজোটের কোনো প্রার্থী নেই। ছাতক ও জগন্নাথপুর পৌরসভায় আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী থাকলেও বিএনপি বা জামায়াতের প্রার্থী নেই। ফলে এ দুটি পৌরসভায় তৃণমূলের ভোট করা হবে না বলে এ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মিজবাহউদ্দিন সিরাজ জানিয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিভাগে শরিক দলের ভালো প্রার্থী নেই। আবার তারা দাবিও করছে না।
সূত্র জানায়, রংপুর বিভাগে ২৩টি পৌরসভায় নির্বাচন হচ্ছে। এর মধ্যে দিনাজপুর সদর, গাইবান্ধা সদর ও সৈয়দপুর পৌরসভায় প্রার্থী সমর্থন নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। অন্য পৌরসভায় প্রার্থী সমর্থন মোটামুটি ঠিক হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
সূত্র জানায়, জাতীয় পার্টি দলগতভাবে রংপুরে শক্তিশালী বলে আওয়ামী লীগের নেতারা এ বিভাগে জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছেন। জয়ী হওয়ার মতো প্রার্থী পেলে তাঁরা ছাড় দেবেন।
সূত্র জানায়, ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদ ছাড়া ১৪ দলের শরিক অন্য কোনো দলের প্রার্থী নেই। আওয়ামী লীগের নেতারা ১৪ দলের এই দুই শরিকের সম্ভাব্য প্রার্থী সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা জানিয়েছেন, মহাজোটগত প্রার্থী ঠিক করার চেয়ে দলীয় প্রার্থী ঠিক করতেই তাঁদের বেশি সমস্যা হচ্ছে।

No comments:

Post a Comment