Tuesday, December 21, 2010

পৌর নির্বাচনঃ শরিকদের কোনো ছাড় দিচ্ছে না বিএনপি

ত সংসদ নির্বাচনে ভোলা-১ আসনে বিজয়ী হন চারদলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) প্রার্থী। এলাকাটি বিজেপির ঘাঁটি হিসেবেও পরিচিত। কিন্তু আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে ভোলা পৌরসভায় মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন স্থানীয় বিএনপির নেতা। একইভাবে কক্সবাজারের মহেশখালী ও চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জামায়াতের প্রার্থীরা। সেখানেও চেয়ারম্যান পদে বিএনপির প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

জামায়াত প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে, এমন সব পৌরসভায় বিএনপিও প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে। জামায়াতের এক নেতার দাবি, ৭০ থেকে ৮০টি পৌরসভায় চেয়ারম্যান পদে জামায়াতের নেতারা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগের অন্তত ৪০টি পৌরসভায় জামায়াতের শক্তিশালী সাংগঠনিক অবস্থা থাকলেও সেখানে বিএনপির প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন ওই নেতা। তিনি বলেন, বিএনপির কারণে জামায়াত অনেক জায়গায় প্রার্থী দেয়নি।
প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে চারদলীয় জোটের অন্য শরিকদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি বিএনপি। এরই মধ্যে ২৫২টি পৌরসভায় বিএনপি দলীয়ভাবে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। ১৯ ডিসেম্বর ছিল এসব পৌরসভায় মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময়।
বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা জানিয়েছেন, পৌরসভা নির্বাচন জোটগতভাবে করার কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে স্থানীয়ভাবে শরিক ও সমমনা দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা হতে পারে। কেন্দ্রীয়ভাবে এ ব্যাপারে খুব বেশি কিছু করা হবে না। সূত্র জানায়, বিএনপি কেন্দ্রীয়ভাবে প্রার্থী মনোনয়নের জন্য তদারকি সেল গঠন করেছে। কিন্তু ওই সেলের উদ্যোগে শরিক দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি।
জানা গেছে, পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর চারদলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন খালেদা জিয়া। অবশ্য বৈঠকটি হয়েছিল সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে। বৈঠকে পৌরসভা নির্বাচন নিয়েও কথা হয়। শরিক দল খেলাফত মজলিসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইসহাক খালেদা জিয়ার কাছে জানতে চান, পৌরসভা নির্বাচনে চারদলীয় জোট কীভাবে প্রার্থী মনোনয়ন দেবে। খালেদা জিয়া জোটগত নির্বাচনের ব্যাপারে তাঁর নেতিবাচক মনোভাবের কথা জানিয়ে দেন।
মোহাম্মদ ইসহাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘খালেদা জিয়া জোটবদ্ধ নির্বাচনের ব্যাপারে ইতিবাচক ছিলেন না। তিনি আমাদের জানিয়ে দেন, বিএনপি প্রার্থী মনোনয়নের জন্য একটি সেল করে দিয়েছে। প্রয়োজনে ওই সেল শরিকদের সঙ্গে কথা বলবে। আনুষ্ঠানিকভাবে জোট নেতাদের এ ব্যাপারে কোনো কিছু করার নেই।’ তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিকভাবে পৌর নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়ে জোটগত আলোচনা হয়নি।
বিএনপির তদারকি সেলের প্রধান এম কে আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, ‘চেয়ারপারসন (খালেদা জিয়া) আমাকে প্রধান করে একটি সেল করে দিয়েছেন। আমি বিভাগীয় কমিটি করেছি। তারা প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। আমার জানামতে, প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে কোনো বড় সমস্যা হয়নি।’ তিনি বলেন, সব পৌরসভায় বিএনপির একক প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। শরিক দলের সঙ্গে কেন্দ্রীয়ভাবে নয়, স্থানীয়ভাবে আলোচনার জন্য বলা হয়েছে। তাদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করতে বলা হয়েছে।
জামায়াতে ইসলামীর সাংসদ আ ন ম শামসুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রামের বাঁশখালী, চন্দনাইশ, পটিয়া ও সন্দ্বীপ পৌরসভা থেকে জামায়াত নিজেদের প্রার্থী প্রত্যাহার করে বিএনপিকে সমর্থন দিয়েছে। কিন্তু জামায়াত প্রার্থী দিয়েছে, এমন সব পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থী আছে। তাঁর আশা, আলোচনার মাধ্যমে একক প্রার্থী নির্ধারণ করা যাবে।
জামায়াত ছাড়া অন্য শরিকদের প্রার্থী নেই: চারদলীয় জোটের তিন শরিক বিজেপি, ইসলামী ঐক্যজোট ও খেলাফত মজলিসের কোনো প্রার্থী মেয়র পদে নির্বাচন করছেন না। তবে কাউন্সিলর পদে দলের স্থানীয় কয়েকজন নেতা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
বিজেপি ভোলা জেলার চারটি পৌরসভায় বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছে। খেলাফত মজলিস জানিয়েছে, তাঁদের কোনো প্রার্থী নির্বাচন করছে না। তাঁরা বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ার জন্য স্থানীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব আবদুল লতিফ নেজামী বলেছেন, ‘এখনই বলা যাচ্ছে না আমাদের দলের প্রার্থী আছে কি না। আমরা এখন ২৬ ডিসেম্বরের হরতাল কর্মসূচি নিয়ে ব্যস্ত আছি।’

No comments:

Post a Comment