Tuesday, January 25, 2011

মডেল তিন্নি হত্যা মামলা

ইনের চোখে পলাতক ব্যক্তির জন্য বিচারালয়ের দরজা রুদ্ধ। মডেল সৈয়দা তিন্নি হত্যা মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি ও সাবেক সাংসদ গোলাম ফারুক অভি দীর্ঘদিন ধরে আইনের চোখে পলাতক।

একটি অস্ত্র মামলায় ১৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত অভি জামিন নিয়ে দেশান্তরি হন। ২০০৭ সালে ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাঁকে গ্রেপ্তার ও দেশে ফেরাতে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছিল। কানাডা-প্রবাসী বলে কথিত অভি ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ দিয়ে হাইকোর্টে রিট করেছেন। তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ ১৫ ডিসেম্বর তাঁর পাসপোর্ট নবায়ন বা নতুন করে কেন পাসপোর্ট দিতে নির্দেশ দেওয়া হবে না, সে মর্মে সরকারের প্রতি রুল জারি করেছেন। আদালতের এ সিদ্ধান্ত আমাদের অবাক করেছে। কারণ, এ বিষয়ে আপিল বিভাগের সুমীমাংসিত আইন আছে। এর কথা হলো, আইনের কাছে আত্মসমর্পণ ছাড়া পলাতক ব্যক্তি কোনো আদালতের কাছে আবেদন করতে পারেন না। এর আগে অভির মায়ের করা রিটের সুরাহা হয়নি। পাসপোর্ট নাগরিকের জন্মগত অধিকার। ব্যক্তি যত অপরাধই করুন, তাঁর বিচার হবে। তাই বলে নাগরিককে নিজ দেশে আসতে না দেওয়ার যুক্তি নেই। কিন্তু অস্ত্র মামলায় দোষী সাব্যস্ত অভিকে দেশ থেকে জবরদস্তি করে বের করে দেওয়া হয়নি। তিনি স্বেচ্ছায় বিচার থেকে পালিয়ে যান। অথচ এখন তিনি তাঁর নাগরিক অধিকারের প্রশ্ন তুলেছেন। আমরা জানি না, রাষ্ট্রপক্ষ তাঁর রিটের বিরোধিতা করে কী যুক্তি আদালতে পেশ করেছিল। ১৭ বছরের কারাদণ্ড ও জামিনের অপব্যবহারের বিষয়টি আদালতের নজরে আনা হয়েছিল কি না আমাদের সন্দেহ। ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্ট বহাল থাকলে কানাডার কর্তৃপক্ষের কাছেও তিনি পলাতক আসামি। এ রকম একটি অবস্থায় দণ্ডিত পলাতকের দায়ের করা রিট আবেদন আমলে নেওয়ার অর্থ দাঁড়ায়, দণ্ডিত পলাতক ব্যক্তির প্রতি অসংগত অনুকম্পা দেখানো।
বাংলাদেশে ক্ষমতাধর রাজনীতিকের বিরুদ্ধে দায়ের করা যেকোনো মামলাকে সাধারণত কিংবা অভ্যাসগতভাবে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক হিসেবে বর্ণনা করা হয়। পলাতক অভির বর্ণনায় তাই অভিনবত্ব নেই। তাঁর আইনজীবীরা আদালতে নিবেদন করেন, তিনি কেবলই বিশুদ্ধ রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার।
তিন্নি হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ আট বছর পর গত জুলাইয়ে অভির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। একটি রুল কখনো বছরের পর বছর ঝুলতে থাকে। শুনানি হয় না। তদুপরি অন্যায্য সুবিধা নিতে পারেন দণ্ডিত পলাতক। বিদেশি কর্তৃপক্ষকে বিভ্রান্ত করার কাজে উচ্চ আদালতের এসব কাগজপত্রের অপব্যবহার ঘটতে পারে। আমরা মনে করি, অভি যদি সত্যিই দণ্ডিত পলাতক হন, তাহলে আদালত হয়তো স্বপ্রণোদিতভাবে রুল ‘রিকল’ (প্রত্যাহার) করতে পারেন। যাঁর নামে ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্ট, তাঁকে কী করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিল, সেটাও বড় প্রশ্ন। অভির আইনজীবীদের মধ্যে ক্ষমতা-ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরাও আছেন। এ বিষয়ে আমরা রাষ্ট্রপক্ষের তরফে আইনসম্মত সক্রিয় ভূমিকা আশা করি।

No comments:

Post a Comment