Tuesday, January 25, 2011

সদস্যপদ বাঁচাতে সংসদে যেতেই হবে খালেদা জিয়াকে

বম জাতীয় সংসদের অষ্টম অধিবেশন আজ মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় বসছে। অধিবেশনের শুরুতেই রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান সংসদে ভাষণ দেবেন। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি আজ অধিবেশনে যোগ দিচ্ছে না।

তবে চলতি অধিবেশনে যোগ না দিলে টানা (একাদিক্রমে) ৯০ দিন অনুপস্থিতির জন্য সংসদ সদস্যপদ বাতিলের সাংবিধানিক বিধির ফাঁদে পড়বেন বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়া। সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা যায়, বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়া সর্বশেষ গত বছরের ৪ এপ্রিল সংসদ অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন। এরপর টানা ৫০ কার্যদিবস তিনি অনুপস্থিত রয়েছেন। আরো ৪০ দিন অনুপস্থিত থাকলে সংবিধানের ৬৭(খ) বিধি অনুযায়ী তাঁর সংসদ সদস্যপদ বাতিল হয়ে যাবে। এ বিধিতে আছে-‘কোন সংসদ সদস্যের পদ শূন্য হইবে, যদি সংসদের অনুমতি না লইয়া তিনি একাদিক্রমে ৯০ বৈঠক দিবস অনুপস্থিত থাকেন।’ সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে গতকাল সিদ্ধান্ত হয়েছে, চলতি অধিবেশন ৪৪ দিন চলবে। ফলে খালেদা জিয়া এ বিধির ফাঁদে পড়বেন।
জানা যায়, অধিবেশন ১০ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ৪০ ঘণ্টা আলোচনারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে রাষ্ট্রপতির ভাষণের পর অধিবেশন এক সপ্তাহের জন্য মুলতবি হয়ে যাবে। ১ ফেব্র“য়ারি থেকে আবার অধিবেশন শুরু হয়ে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত ৪৪ কার্যদিবস চলবে।
গতকাল সোমবার বিকেলে সংসদ ভবনে সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকের পর সংসদের চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ সংসদের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সংসদের প্রতি কার্যদিবস বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে শুরু হয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। তবে প্রথম দিন বিকেল ৩টায় অধিবেশন শুরু হবে।
সংসদ অধিবেশনে বিরোধী দলের যোগ না দেওয়া সম্পর্কে সরকার ও বিরোধী দল পরস্পরকে দুষছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার এমপি বলেন, ‘সংসদে যোগ
না দেওয়ার কথা আমরা বলিনি। আমরা চাই সংসদ কার্যকর হোক। এ জন্য নজিরবিহীনভাবে আমরা নবম সংসদের প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিন যোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু সংসদে বসা নিয়ে সরকারি দলের আক্রোশের শিকার হয়েছি। যত নোটিশ দিয়েছি তার একটিও আলোচনার জন্য আমলে নেওয়া হয়নি। আমাদের নেতা শহীদ জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া ও তাঁর পরিবারসহ আমাদের নেতা-নেত্রীর নাম ধরে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করা হয়। হামলা-মামলা চলছে। এ অবস্থায় সংসদে যোগ দিয়ে তাদের গালাগাল শুনে জাতির কোনো লাভ আছে বলে মনে করি না। যদি গালাগাল বন্ধ করা হয়, সংসদের সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং দেশ ও জনগণের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে দেওয়া হয়, মাইক বন্ধ না করা হয়-তাহলে অবশ্যই আমরা সংসদে যাব।’
বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদীন ফারুক বলেন, বিএনপি সংসদকে কার্যকর করতে সবসময় সংসদে যেতে প্রস্তুত। কিন্তু এর আগে সরকারকে সংসদের পরিবেশ ঠিক করতে হবে। সংসদের চিফ হুইপ আবদুস শহীদের টেলিফোন করার কথা স্বীকার করে ফারুক বলেন, সংসদে যোগ না দেওয়ার ব্যাপারে বিএনপি আগের সিদ্ধান্তেই অটল। তিনি বলেন, দেশ পরিচালনায় বর্তমান মহাজোট সরকার দুই বছর যেভাবে ব্যর্থ হয়েছে, সেভাবে বিএনপিকেও সংসদে নিতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। অধিবেশনে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলোচনার পর বলতে পারব-সংসদে ফিরে যাব কি না।
অধিবেশনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে গত রবিবার সংসদের চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদীন ফারুককে টেলিফোন করেন। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে আবদুস শহীদ বলেন, সংসদের পরিবেশ ঠিক আছে, আশা করি বিরোধী দল অধিবেশনে যোগ দিয়ে সংসদকে কার্যকর করতে ভূমিকা রাখবে।
এদিকে চলতি অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের মধ্য দিয়েই চালু হচ্ছে সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশনের যাত্রা। এ জন্য সংসদ ভবনের পঞ্চম তলায় একটি কক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছে। অধিবেশন চলাকালে সংসদের কার্যক্রম এ চ্যানেলের মাধ্যমে প্রচারিত হবে। এ ছাড়া অধিবেশন বন্ধ থাকা অবস্থায় প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এ চ্যানেলের সম্প্রচার কার্যক্রম চলবে।
বিএনপির একটি সূত্রে জানা যায়, সংসদে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে দলের নেতারা আলোচনা করছেন। কারণ বিরোধী দলের নেতাসহ কয়েকজনের সদস্যপদ বহাল রাখতে হলে এ অধিবেশনে বিরোধী দলকে সংসদে যোগ দিতেই হবে।
জানা গেছে, নবম সংসদের ১৭৪ কার্যদিবসের মধ্যে বিএনপির সংসদ সদস্যরা ছিলেন ৪৬ কার্যদিবস আর বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়া ছিলেন মাত্র পাঁচ দিন। অষ্টম অধিবেশনে যোগ না দিলে টানা ৯০ কার্যদিবস অনুপস্থিত থাকার কারণে খালেদা জিয়াসহ দলের কয়েকজন সংসদ সদস্য তাঁদের সদস্যপদ হারাবেন।
সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা যায়, অধিবেশনে সংসদ সদস্যদের উপস্থিতির রেকর্ডে বিএনপি চেয়ারপারসন সর্বশেষ গত বছরের ৪ এপ্রিল সংসদে যোগ দিয়েছিলেন। এর ফলে গত ৯ ডিসেম্বর শেষ হওয়া সপ্তম অধিবেশন পর্যন্ত সংসদে তাঁর টানা অনুপস্থিতি ৫০ কার্যদিবস। এ ছাড়া বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্য বরকতউল্লাহ বুলু (নোয়াখালী-৩) সর্বোচ্চ ৫৭ দিন সংসদে অনুপস্থিত রয়েছেন। সংসদ সদস্য মজিবর রহমান সরওয়ার (বরিশাল-৫) ও কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ (কুমিল্লা-৩) টানা ৫৩ দিন সংসদ বর্জন করে চলেছেন। চট্টগ্রাম-১৬ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মোস্তফা কামাল পাশা টানা ৫১ দিন সংসদে অনুপস্থিত রয়েছেন।
এদিকে সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত অষ্টম অধিবেশনের জন্য এখন পর্যন্ত মোট ১১টি সরকারি বিল এসেছে। এর মধ্যে কমিটিতে বিবেচনাধীন আছে ৯টি। পাসের অপেক্ষায় আছে একটি ও উত্থাপনের অপেক্ষায় আছে একটি বিল।

No comments:

Post a Comment