Tuesday, January 25, 2011

বারবার আত্মঘাতী হরতাল

প্রধান বিরোধী দল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বিতর্কিত নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আজ রোববার চট্টগ্রামে পূর্ণদিবস হরতালের ডাক দিয়েছে দলটি।

প্রথমে বলা হয়েছিল, হরতাল হবে সকাল ছয়টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত; কিন্তু তার পরই এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঘোষণা করা হলো হরতাল হবে সকাল-সন্ধ্যা। বিএনপির এই সিদ্ধান্ত দায়িত্বশীল নয় বলে আমরা মনে করি।
অর্ধদিবস বা পূর্ণদিবস, কোনো ধরনের হরতালের প্রতিই জনগণের আর সমর্থন নেই। কারণ, হরতাল ইতিমধ্যে জবরদস্তিমূলক, জনস্বার্থবিরোধী, অর্থনীতির পক্ষে ক্ষতিকর কর্মসূচি বলে প্রমাণিত হয়েছে। হরতালে জনসাধারণ নিরাপত্তাহীন এক পরিবেশের মধ্যে নিক্ষিপ্ত হয়। যানবাহন ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ নানা ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটে। গত ২৭ জুন বিএনপির ডাকা দেশব্যাপী হরতালের আগের রাতে রাজধানীর মগবাজারে গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ফলে একজন নিরীহ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সে মৃত্যুর দায় কার?
যাঁরা হরতাল আহ্বান করেন, তথাকথিত পিকেটিংয়ের নামে তাঁরা ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেন। তাঁরা শান্তিপূর্ণ হরতালের কথা মুখে বলেন; কিন্তু মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতে পারেন না। এমন নিশ্চয়তা দিতে পারেন না যে হরতাল শান্তিপূর্ণ হবে। তাঁরা হরতাল আহ্বান করে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়ার অপেক্ষায় না থেকে হরতাল ‘সফল’ করার লক্ষ্যে মাঠে নামেন। অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জনশৃঙ্খলা রক্ষার কর্তব্য পালন করতে গিয়ে কখনো কখনো বাড়াবাড়ি করে। ফলে সংঘাত-সংঘর্ষ ঘটে।
সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয় জাতীয় অর্থনীতির। কারণ, হরতালে কলকারখানার উৎপাদন ব্যাহত হয়, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় অচল হয়ে পড়ে। আর যেসব নিম্ন আয়ের মানুষ নানা ধরনের কাজকর্ম করে দিনাতিপাত করেন, তাঁরা অন্নকষ্টে পড়েন। ব্যবসা-বাণিজ্যের দিক থেকে দেশের প্রধান বন্দরনগর চট্টগ্রামের গুরুত্ব বিরাট। আমদানি-রপ্তানির কাজ এক মুহূর্তের জন্যও বাধাগ্রস্ত হলে বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন থেকে বঞ্চিত হতে পারে। রপ্তানিকারক যেসব প্রতিষ্ঠানের শিপমেন্ট আটকে যাবে, তাদের পণ্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে না। ফলে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি ভাবমূর্তির দিক থেকেও সমস্যায় পড়তে পারে। বন্দরনগরে হরতালের মতো অচলাবস্থা সৃষ্টিকারী কর্মসূচি ব্যবসা-বাণিজ্যের দিক থেকে দেশের ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর।
গত মাসেই বিএনপি দুবার হরতাল করেছে। ৩০ নভেম্বর হরতাল ডাকা হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এর তীব্র প্রতিবাদ করে হরতাল প্রত্যাহারের আহ্বান জানায়। কিন্তু বিএনপি কিছুই আমলে নেয়নি। আজ চট্টগ্রামে বিএনপির হরতালের ডাক ব্যবসায়ী সম্প্রদায়সহ জনমতের প্রতি তাদের চরম অবজ্ঞার বহিঃপ্রকাশ।
ওদিকে শিক্ষানীতি অনুমোদিত হওয়ার প্রতিবাদে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সংগঠিত সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদ ২৬ ডিসেম্বর সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে। এটিও একই রকম দায়-দায়িত্বহীন সিদ্ধান্ত এবং তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কারণ, ওলামা-মাশায়েখদের বৃহত্তর অংশের সঙ্গে সরকার আলোচনা-পরামর্শ করেই শিক্ষানীতি প্রণীত করেছে। এ হরতালও প্রত্যাহার করা উচিত।

No comments:

Post a Comment