Tuesday, January 04, 2011

রাজনৈতিক সংকটে পাকিস্তান

পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন জোটের দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক দল মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট (এমকিউএম) সরকার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় বড় ধরনের রাজনৈতিক সংকটে পড়েছে দেশটি। সংকট মোকাবিলায় গতকাল সোমবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি।

পাকিস্তান এমনিতেই নানা ধরনের সংকটে ভুগছে। ২০১০ সালের ভয়াবহ বন্যার কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে দেশটি। এছাড়া আফগান সীমান্তবর্তী উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে তালেবান ও আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট জঙ্গিদের নিয়েও সংকটে রয়েছে পাকিস্তান।
গত রোববার সরকার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় এমকিউএম। এর আগে দলটির দুইজন মন্ত্রী পদত্যাগ করেন।
এমকিউএমের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পেট্রোলিয়াম পণ্যের নয় শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি ও দুর্নীতির প্রতিবাদে তারা বিরোধী দলে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এমকিউএমের সিন্ধু প্রদেশের মন্ত্রিসভার স্বাস্থ্যমন্ত্রী সগির আহমেদ বলেন, বর্তমান সরকারসহ আমরা যে কাউকেই সমর্থন দেব, যারা পেট্রোলিয়াম পণ্যের দাম কমিয়ে দেবে। তিনি আরও বলেন ‘বিরোধী দলে থাকলেও সরকারের সব ইতিবাচক পদক্ষেপের প্রতি আমরা সমর্থন দেব। তবে সরকারের গণ-বিরোধী পদক্ষেপের খোলাখুলি বিরোধিতা করা হবে।’
কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করলেও এমকিউএম দক্ষিণাঞ্চলীয় সিন্ধু প্রদেশে পিপিপি সরকারের জোট সঙ্গী।
চলমান সংকট নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি গতকাল পাকিস্তান মুসলিম লিগ কায়েদ-ই-আজম (পিএমএল-কিউ) নেতা চৌধুরী সুজাত হোসেন ও পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) এর নেতা নওয়াজ শরিফের ভাই শাহবাজ শরীফের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
পিএমএল-কিউ নেতা চৌধুরী সুজাত হোসেন গিলানির সঙ্গে বৈঠকে বলেছেন তিনি তাঁর দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা সিদ্ধান্ত জানাবেন। তবে তিনি ইঙ্গিত দেন যে তার দল হয়তো প্রধানমন্ত্রীকেই সমর্থন দেবে। সুজাত বলেন, আমরা জোট সরকারকে সমর্থন দেব একটি শর্তে- আর তা হচ্ছে পাকিস্তানের জনগণ এখন এসব সমস্যার মধ্যে রয়েছে তার সমাধান তাদের করতে হবে।
এমকিউএম সরকারের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ায় পিপিপি পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাতে যাচ্ছে। বিরোধী দলগুলো যদি অনাস্থা ভোট পাশ করানোর জন্য পরস্পরের সঙ্গে হাত মেলায় তাহলে সরকারের পতন হতে পারে।
৩৪২ সদস্যের জাতীয় পরিষদে এমকিউএমের আসন সংখ্যা ২৫টি। এমকিউএম ছাড়া পিপিপি জোটের আসন দাঁড়াবে ১৬০টিতে। যা সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ১৭২ আসনের চেয়ে ১২টি কম।
পার্লামেন্টে আস্থা ভোট আহ্বান করতে প্রধানমন্ত্রী বাধ্য নন। কিন্তু কোন আইন পাশ করতে মারাত্মক সংকটের মুখে পড়তে পারেন গিলানি। জুনে বাজেট পাশে কোনো ধরনের ব্যর্থতা দেশটিকে আগাম নির্বাচনের দিকে ঠেলে দেবে।
সরকারের ওপর প্রথম আঘাত আসে ধর্মভিত্তিক দল জমিয়ত উলেমা-ই-ইসলাম ফজল (জেইউআইএফ) থেকে। প্রধানমন্ত্রী গিলানি দলটির একজন মন্ত্রীকে বরখাস্ত করার পর গত মাসে সরকারের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয় দলটি। দলটির মহাসচিব আবদুল গফুর হায়দারি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তাঁর সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছেন। এই মুহুর্তে পদত্যাগ করা তাঁর জন্য সবচেয়ে ভালো কাজ হবে।’
বর্তমান পরিস্থিতিতে সবার চোখ এখন সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানের প্রধান বিরোধী দল পিএমএল-এনের দিকে। পার্লামেন্টে সম্ভাব্য অনাস্থা প্রস্তাব আনার ক্ষেত্রে দলটির ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তবে এই মুহুর্তে অনাস্থা ভোটের ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক হাসান আসকারি। তিনি বলেন, নওয়াজ শরীফ তাৎক্ষনিকভাবে সরকারের পতন ঘটিয়ে দেশের অগুনতি সমস্যার দায়িত্ব নিতে আগ্রহী নন বলেই তাঁর কাছে মনে হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, শরীফের দল ও এমকিউএমের মধ্যকার অস্বস্তিকর সম্পর্কের কারণে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের জন্য সরকার কমপক্ষে তিন থেকে চার সপ্তাহ সময় পেয়ে যাবে।
আসকারি বলেন, সরকার এখন ছোট ছোট জোটগুলোর সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করবে। সুতরাং সামনে অনেক রাজনীতি দেখা যাবে। এএফপি, রয়টার্স ও ডন।

No comments:

Post a Comment