Monday, January 03, 2011

আবাসন প্রতিষ্ঠানকে ৩ কোটি টাকা জরিমানা

পাহাড় কেটে আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলায় কক্সবাজারে একটি সমবায় সমিতিকে প্রায় তিন কোটি টাকা জরিমানা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। নির্মাণাধীন প্রকল্পের জন্য পাহাড় কাটা ও পরিবেশের ক্ষতিসাধনমূলক সব তৎপরতা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পরিবেশ আইন লঙ্ঘনকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) অনুযায়ী মামলা দায়ের করতে কক্সবাজার জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

রোববার অধিদপ্তরের পরিচালক (মনিটরিং ও এনফোর্সমেন্ট) মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী শহরতলীর উত্তরণ গৃহায়ন সমবায় সমিতির এ প্রকল্পে অভিযান চালান।

সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলামকে দুই কোটি ৮৮ লাখ টাকার এ জরিমানা করা হয়। এছাড়া প্রায় ১৫ হাজার ইট, দেড় টন লোহার রড, মাটি বহনকারী ১৬টি ঠেলাগাড়ি ও সাড়ে ১০ টন সিমেন্ট জব্দ করা হয়। সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলা অভিযানে পুলিশ সহায়তা করে বলে অধিদপ্তরের কর্মকর্তা জানান।

সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার কার্যালয়ে এ জরিমানার টাকা পরিশোধ করতে হবে। মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, কক্সবাজারের সব আবাসন প্রকল্পের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এলাকাজুড়ে পাহাড় কেটে প্রকল্প করেছে উত্তরণ গৃহায়ন সমবায় সমিতি। প্রায় সাড়ে সাতশ' একর জমিতে এ আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলা হয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ৯৬ একর এলাকায় পাহাড় কাটা হয়েছে।

মুনীর চৌধুরী আরো বলেন, প্রায় ৮০ ফুট উচ্চতার বেশ কয়েকটি পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরি, পাহাড়ের ঢালু জমি ভরাট ও বিপুল সংখ্যক গাছপালা কেটে প্রকল্পের স্টেডিয়াম, অডিটোরিয়াম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ঈদগাহ ময়দান, পার্ক ও খেলার মাঠ করা হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এলাকার প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মুনীর চৌধুরী জানান।

তিনি জানান, এরইমধ্যে অবৈধভাবে পাহাড় কাটার ফলে প্রায় ১০০ একর পাহাড়ি এলাকার জীববৈচিত্র ধ্বংস, গাছপালা নষ্ট, ভূমিক্ষয়, টপ সয়েল বিনষ্ট, ফসলহানি ও ভূ-তাত্ত্বিক গঠনের ক্ষতি হয়েছে। অভিযানকালে প্রকল্পের কোনো শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে পাওয়া যায়নি। পরিবেশ আইন লঙ্ঘনের দায়ে টাকার অঙ্কে এটিই এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় অর্থদণ্ড বলে মুনীর চৌধুরী জানান।

উত্তরণ গৃহায়ন সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, উত্তরণ অনেকদিনের পুরনো সমিতি। সমিতিই তাদের আবাসন প্রকল্পের উন্নয়ন কাজ করছে। এখানে ব্যক্তিগতভাবে সম্পাদককে জরিমানা করার সুযোগ নেই। প্রকল্পের জন্য পাহাড় কাটার অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন।

তিনি আরো বলেন, তাকে জরিমানা করা হয়েছে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) অনুযায়ী। কিন্তু তাদের অনেক কাজ করা হয়েছে ১৯৯৫ এর আগে। সেক্ষেত্রে এ আইন প্রযোজ্য নয়। এ ব্যাপারে তারা সোমবার আদালতে যাবেন বলে জানান। কক্সবাজারের পরিবেশ কর্মকর্তা হাসিবুর রহমান বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জরিমানার টাকা পরিশোধ না করলে অধিদপ্তর আইনগত ব্যবস্থা নেবে।

স্থানীয় অধিবাসীদের অভিযোগ, প্রকল্পের লোকজন বিভিন্ন সময় প্রভাব খাটিয়ে সাধারণ মানুষকে উচ্ছেদ ও সরকারি বনভূমি দখল করে আবাসন প্রকল্পের কাজ করেছে। এলাকার আবদুর রহিম ও মাহফুজুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যেই প্রকল্পের ছয় শতাধিক প্লট তৈরি ও বিক্রি সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের প্লট ক্রেতা কিংবা সদস্য তালিকায় আছেন মন্ত্রী, সচিবসহ উচ্চপদস্থ বহু কর্মকর্তা বলে তারা জানান।

No comments:

Post a Comment