Wednesday, February 02, 2011

ভাষা আন্দোলন রাজনৈতিক স্বাধীনতা দিয়েছে

মাদের সংস্কৃতি, সাহিত্য আর ইতিহাসের কাছে ফিরে যাওয়ার তাগিদ দেয় একুশে ফেব্রুয়ারি। এর মানে হচ্ছে, যাতে আমরা আমাদের সময়কে এবং নিজেদের নতুন করে ভিন্নভাবে বুঝতে সক্ষম হই। আরো স্পষ্ট করে বললে বলা যায়, নিজেদের বোঝার অর্থই হচ্ছে একুশে ফেব্রুয়ারি-কেন্দ্রিক গুরুত্ব।

এই গুরুত্ব আমাদের চলমান জীবনধারার ক্ষেত্রে খুব আবশ্যক। একুশের মাসে আমাদের সংস্কৃতি, সাহিত্য ও ইতিহাসের যে তাগিদ আমরা প্রতিবছর অনুভব করি, তা জাতির প্রেরণার বড় শক্তিও বটে। একুশের শহীদদের দায়িত্ব যদি আমাদের রাজনীতি না নেয়, তাহলে আমাদের সংস্কৃতি, সাহিত্য ও ইতিহাসের পতন ঘটবে। রফিক, সালাম, জব্বার, বরকতরা হচ্ছেন আমাদের ইতিহাসের বীর। তাঁরা জীবন উৎসর্গ করে আমাদেরকে সংস্কৃতি, সাহিত্য ও ইতিহাসের কাছে ফিরিয়ে আনেন। তাঁরা অধিকার আদায়ের সংগ্রামের প্রতীক।
বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি ছিল একটি পরিপূর্ণ রাজনৈতিক অভ্যুত্থান। এই অভ্যুত্থানের অগ্রবাহিনী ছিল ছাত্র ও যুবসমাজ। কিন্তু মনে রাখা দরকার, ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা আর ভাষাকে সমৃদ্ধ করা দুটো এক বিষয় নয়। এ ক্ষেত্রে বলা যায় জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেনে ভাষা আন্দোলন হয়নি; কিন্তু সেসব দেশে ভাষা ও সাহিত্যের ব্যাপক অগ্রগতি লক্ষ করা যায়। সে জন্য বড় অবদান রেখেছেন ওই সব ভাষার প্রধান লেখকরা। আমাদের এখানে এ কাজটি হয়নি। আমাদের সার্বিক প্রয়োজনেই বিলম্বে হলেও এ কাজটি শুরু করা দরকার। আমরা যদি মনে করি, শুধু ভাষা আন্দোলনের ত্যাগের বিষয়টির ওপর জোর দিয়েই ভাষার উৎকর্ষ সাধনের কাজটি সম্পাদন করে ফেলব, তাহলে তা ভুল হবে। ভাষা আন্দোলনের চেতনাসংলগ্ন থাকতে হলে আমাদের ভাষা ও সাহিত্যের অগ্রগতির কাজ চালিয়ে যেতে হবে। ভাষা আন্দোলনের পর সুদীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হলেও আমাদের ভাষা ও সাহিত্য রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, নজরুলের যুগে যা ছিল, তা থেকে কতটা এগিয়েছে? এ প্রশ্নটি উপেক্ষা করা যাবে না। ভাষা আন্দোলন আমাদের যে রাজনৈতিক স্বাধীনতা দিয়েছে তাকে অর্থবহ করে তুলতে হবে।

লেখক : বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর
শিক্ষাবিদ, শিল্পকলা বিশ্লেষক ও সাহিত্যিক

No comments:

Post a Comment