Sunday, February 06, 2011

গামাল মুবারকসহ ক্ষমতাসীন দলের পলিটব্যুরোর পদত্যাগ

মিসরে ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্যরা একযোগে পদত্যাগ করেছেন। দেশটিতে টানা ১২ দিন ধরে মুবারকবিরোধী অব্যাহত গণবিক্ষোভ এবং প্রেসিডেন্টকে পদত্যাগের জন্য আন্তর্জাতিক চাপের প্রেক্ষাপটে গতকাল রাতে তাঁদের বেশির ভাগই একযোগে সরে দাঁড়ান।

মিসরের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানায়, পদত্যাগীদের মধ্যে মিসরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারকের ছেলে গামাল মুবারকও রয়েছেন। ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির সংস্কারপন্থী নেতা হিসেবে পরিচিত হোসাম বিকে দলের জেনারেল সেক্রেটারি ও রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান করা হয়েছে। তিনি পেশায় একজন চিকিৎসক এবং বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক রয়েছে।
এদিকে সর্বশেষ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বিশেষ দূত ফ্রাংক উহসনার বলেছেন, রাজনৈতিক পালাবদলের এই সময়ে মুবারকের ক্ষমতায় থাকা উচিত।
এদিকে প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে গতকালও রাজধানী কায়রোর কেন্দ্রস্থল তাহরির স্কয়ারে সমাবেশ হয়েছে। গত শুক্রবারের সমাবেশে কয়েক লাখ মিসরীয় অংশ নিলেও মুবারক নিজ মুখে পদত্যাগ করার ঘোষণা দেওয়ায় বিক্ষোভকারীদের অনেকে গতকাল বাড়ি ফিরে গেছে। তবে তাহরির স্কয়ারের বিক্ষোভকারীরা সারা দিন শান্ত থাকলেও রাতে ক্ষমতাসীন দলটির পলিটব্যুরোর বেশির ভাগ নেতা পদত্যাগ করায় তারা উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। গত রাতে তারা মুবারকের পতনের দাবিতে আবারও সোচ্চার হয়।
এদিকে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য দেশটির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপ অব্যাহত রয়েছে। নতুন ভাইস প্রেসিডেন্ট ওমর সুলাইমান ও শীর্ষস্থানীয় সেনা কর্মকর্তারা হোসনি মুবারকের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে করণীয় নির্ধারণের জন্য বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। তাঁরা হোসনি মুবারককে কিভাবে সম্মানজনক উপায়ে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ থেকে বিদায় দেওয়া যায়, এর সম্ভাব্য উপায়ের খোঁজ করছেন। অন্যদিকে একটি অসমর্থিত খবরে জানা গেছে, ভাইস প্রেসিডেন্ট ওমর সুলাইমানকে গতকাল হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছুই জানা যায়নি।
মিসরের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম মেনা জানিয়েছে, গতকাল প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারক তাঁর নবনিযুক্ত মন্ত্রিপরিষদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন। তবে সেখানে কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, সে সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। তবে গত কয়েক দিনের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মিসরের বিপর্যস্ত অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পুনরুদ্ধারে প্রেসিডেন্ট মুবারক গতকাল আবার উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মিসরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারককে ইঙ্গিত করে গতকাল বলেছেন, 'দেশপ্রেমিক' নিশ্চয় বুঝতে পারছেন, তাঁর দেশের জনগণ কী চায়। তিনি সঠিক সিদ্ধান্তই নেবেন, আশা করি। তবে ওবামা যা-ই বলুন, তাঁর প্রশাসনের বাতলে দেওয়া 'অর্ডারলি ট্রানজিশন'-এর ব্যাখ্যা নিয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন মিসরের প্রধানমন্ত্রী আহমেদ শফিক। মিসর এখন স্বাভাবিক জীবনযাত্রার দিকে ফিরে যাচ্ছে উল্লেখ করে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'প্রেসিডেন্ট মুবারক ইতিমধ্যে আগামী সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এর ফলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। আমাদের উচিত প্রয়োজনীয় সংবিধান সংশোধনের জন্য তাঁকে আগামী ৯ মাস সময় দেওয়া।' পরে তিনি আল আরাবিয়া টিভিকে দেওয়া আরেক সাক্ষাৎকারে বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলেছেন। আবার ভাইস প্রেসিডেন্ট ওমর সুলাইমানের কাছে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে মুবারককে চলেও যেতে বলছেন তিনি। যদি বিষয়টি নিয়মতান্ত্রিকভাবে করতে হয়, তাহলে আমাদের ফিরে তাকাতে হবে সংবিধানের দিকে এবং সেখানে এ ধরনের কোনো সুযোগ নেই। সুতরাং নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের স্বার্থেই মুবারককে আরো কিছুদিন সময় দিতে হবে, যাতে তিনি সংবিধান পরিবর্তন করতে পারেন। বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।' বিষয়টিকে মিসরের নতুন প্রধানমন্ত্রী আহমেদ শফিক ও ভাইস প্রেসিডেন্ট ওমর সুলাইমানের মধ্যে ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে সুস্পষ্ট দ্বন্দ্বের ইঙ্গিত বলেই মনে হচ্ছে।
মিসরের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওমর সুলাইমানকে গতকাল হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে বলে একটি সংবাদ প্রচারিত হয়। সুলাইমান অল্পের জন্য বেঁচে গেলেও তাঁর দুই দেহরক্ষী নিহত হয়েছেন। ফঙ্ নিউজের বরাত দিয়ে এনডিটিভি এ খবর জানিয়েছে। তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।
গতকাল রাজধানী কায়রোর কেন্দ্রস্থলে বিক্ষোভকারীরা মুবারকবিরোধী সমাবেশ অব্যাহত রাখলেও গত শুক্রবারের তুলনায় তাদের সংখ্যা ছিল অনেক কম। বিক্ষোভ সমাবেশ ছিল শান্তিপূর্ণ। এখনো সেনাবাহিনী তাহরির স্কয়ারের সামনে ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অবস্থান করছে। তবে গতকাল কোনো গোলযোগ হয়নি। সেনাবাহিনী রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও পাহারা দিচ্ছে।
সম্মিলিত বিরোধী মোর্চার ডাকে গত শুক্রবার মুবারক পতন দিবসের কর্মসূচিতে লাখ লাখ লোক অংশ নেয়।
এদিকে গত এক সপ্তাহে মিসরের গণ-অভ্যুত্থানের সংবাদ কাভার করতে আসা ১০১ জন দেশি-বিদেশি সাংবাদিকের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে 'কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট' (সিপিজে)।
হোয়াইট হাউস মিসরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার জন্য ইরানকে সতর্ক করে দিয়েছে। হোয়াইট হাউস বলেছে, যে দেশটি ২০০৯ সালের জুনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে গণ-অভ্যুত্থানের মুখে পড়েছিল, তাদের এ বিষয়ে বড় গলায় কোনো কথা বলা বা পরামর্শ দেওয়ার নৈতিক ভিত্তি নেই। গত শুক্রবার জুমার নামাজের খুতবা পড়ার সময় ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি মিসরের গণ-অভ্যুত্থানকে ইসলামপন্থী নাগরিকদের নবজাগরণ ঘোষণা দিয়ে মিসরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারককে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের 'চাকর' অভিহিত করেছিলেন।
মিসরে প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারকের উত্তরসূরি যিনি-ই হোন না কেন, তাঁকে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে অতীতের শান্তিচুক্তি পালন করে যাওয়ার পরামর্শও দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মিসরে নতুন সরকার গঠন নিয়ে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন ইসরায়েল। তাদের আশঙ্কা, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিতে মুসলিম ব্রাদারহুডের মতো ডানপন্থী কোনো দল ক্ষমতায় এলে ১৯৭৯ সালে সম্পাদিত ইসরায়েল-মিসর শান্তিচুক্তি ভেঙে দেশ দুটি আবারও যুদ্ধে জড়িয়ে যেতে পারে।
সূত্র : বিবিসি, এএফপি, দ্য হিন্দু।

No comments:

Post a Comment