Sunday, February 06, 2011

দল গোছাচ্ছে আ. লীগ, গুরুত্ব পাচ্ছে তৃণমূল

সারা দেশে অনুষ্ঠিত পৌর ও দুই উপনির্বাচনে কাক্সিক্ষত ফলাফল অর্জনে ব্যর্থ হওয়ায় দল গোছানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। অভ্যন্তরীণ দলাদলি, কোন্দল, মন্ত্রী-এমপিদের সঙ্গে দূরত্ব, সুবিধাবাদীদের আধিপত্যসহ বিশৃঙ্খল অবস্থা দূর করতে দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সুপারিশ করবেন দলের সাত বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক।

দলগত ব্যর্থতা উত্তরণে দলের তৃণমূলের সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করে তা নিরসনের উপায়সংবলিত সুপারিশমালা দলীয় প্রধানের হাতে তুলে দেবেন তাঁরা। গতকাল শনিবার কালের কণ্ঠের সঙ্গে আলাপকালে আওয়ামী লীগের সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন এসব কথা জানান। দলীয় অন্য একটি সূত্রে জানা যায়, নির্বাচন উপলক্ষে সারা দেশ ঘুরে বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকরা তৃণমূলের চরম বিশৃঙ্খলা পর্যবেক্ষণ করে তা পর্যালোচনার মাধ্যমে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। প্রতিবেদনে বিরাজমান সাংগঠনিক অগোছালো অবস্থা কিভাবে নিরসন করা যায় এবং সারা দেশে অনুষ্ঠেয় পৌর ও দুই উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থীরা কাক্সিক্ষত ফল অর্জনে কেন ব্যর্থ হয়েছেন তা চিহ্নিত করা হয়েছে, যা আগামী ১২ ফেব্র“য়ারি অনুষ্ঠেয় দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় তুলে ধরা হবে।
প্রতিবেদনে ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের সঙ্গে তৃণমূল নেতাদের সৃষ্ট দূরত্ব, শিগগিরই সম্মেলন অনুষ্ঠান ও নতুন নেতৃত্বের হাতে দায়িত্ব দেওয়া, নেতা-কর্মীদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত করে রাখা, তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের আর্থিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার প্রবণতা এবং সুবিধাবাদীদের আধিপত্য রোধ করতে কেন্দ্র থেকে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ থাকছে। সাংগঠনিক সম্পাদকদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব সমস্যা সমাধান করতে পারলেই তৃণমূলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি পাবে। আর সাংগঠনিক অবস্থা এমন নাজুক থাকলে ভবিষ্যতে সব নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আরো বেশি ভয়াবহতা আসতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা মনে করেন, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের সঙ্গে স্থানীয় নেতাদের দূরত্ব, দলাদলি, দীর্ঘদিন জেলাগুলোতে সম্মেলন না হওয়া, রাজনীতিকে পুঁজি করে একটি অংশের বিত্ত-বৈভবের মালিক হওয়ার অন্তহীন প্রচেষ্টা, নব্য ও সুবিধাবাদীদের আধিপত্য আর এসব ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় তদারকি না থাকার কারণে তৃণমূলের রাজনীতি ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। তার ওপর সম্মেলন না হওয়ায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। তাই সাংগঠনিক কাজের গতি মন্থর হয়ে গেছে, যার প্রতিফলন ঘটেছে এবারের নির্বাচনগুলোতে।
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগের বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। সংগঠন ভালোভাবে গোছানো গেলে যেকোনো নির্বাচন আমরা মোকাবিলা করতে পারব। তৃণমূলে আমাদের সমর্থনের অভাব নেই। তা সক্রিয় করতে নেতৃত্ব সংকট রয়েছে।’
স্থানীয় মন্ত্রী-এমপিদের দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যথেষ্ট দূরত্ব আছে জানিয়ে জাফর উল্যাহ বলেন, তা কমাতে হবে। সম্মেলন করে সঠিক নেতৃত্বের হাতে দলীয় কর্মকাণ্ডের ভার ছেড়ে দিতে হবে। তৃণমূল সফরে গিয়ে দেখা গেছে, তারা ‘ইয়াং লিডারশিপ’ চায়। সাত সাংগঠনিক সম্পাদকের যোগ্যতা সম্পর্কে তিনি বলেন, সবাই কাজ করছে। তবে কারো কারো যোগ্যতার অভাব রয়েছে।
এ ব্যাপারে সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, ‘তৃণমূলে কিছু বিশৃঙ্খলা আছে। তা দ্রুত নিরসনে আগামী কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে প্রস্তাব করা হবে। সম্প্রতি অনুষ্ঠেয় নির্বাচন নিয়ে পর্যালোচনামূলক একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। এর আলোকে সব ধরনের বিশৃঙ্খলা নিরসনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আহমদ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ বড় দল, নেতা-কর্মী বেশি। পদ নিয়ে বিভিন্ন রকম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। তা ছাড়া দীর্ঘদিন সম্মেলন হয় না। তিনি বলেন, ‘কিছু সমস্যা থাকলেও আমরা তা মিটিয়ে ফেলতে পারব।’
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের ৭৩ সাংগঠনিক জেলার ১১টিতে সম্মেলন হয় না ১৮ বছর। বাকি ৬২ জেলার কোনো কোনোটির মেয়াদ পেরিয়ে চার-পাঁচ বছর হয়েছে। তাই কোনো জেলাতেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় নেই ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট ও বরিশালসহ ছয়টি মহানগর কমিটিরও মেয়াদ পেরিয়ে চার-পাঁচ বছর হয়েছে। অন্যদিকে ঢাকা, বরিশাল ও সিলেট মহানগর কমিটি চলছে ভারপ্রাপ্তদের নেতৃত্বে। মহানগরের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় কোথাও সভাপতি, কোথাও সাধারণ সম্পাদক আবার কোথাও আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে। তাদের কেউ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে তেমন সক্রিয় নেই বলে জানান কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা। এদিকে চট্টগ্রাম মহানগর নিয়ে চলছে নতুন করে বিশৃঙ্খলা। পাল্টাপাল্টি বহিষ্কার।
কার্যনির্বাহী সংসদের সভা : আগামী ১২ ফেব্র“য়ারি শনিবার বিকেল ৪টায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভা অনুষ্ঠিত হবে। তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠেয় জরুরি এ সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম কমিটির সব সদস্যকে উপস্থিত থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। সূত্র মতে, সম্প্রতি শেষ হওয়া পৌরসভা ও দুই উপনির্বাচনে দলের সাফল্য-ব্যর্থতা প্রসঙ্গে সভায় বিস্তারিত আলোচনা হবে। সরকারের কর্মকাণ্ডের এবং তৃণমূলের রাজনীতিকে চাঙ্গা করার বিষয়ে পর্যালোচনা ও কৌশল নির্ধারণ করা হবে।

No comments:

Post a Comment