Wednesday, September 21, 2011

সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখল নিয়ে গুঞ্জন

ড়াই লাখ মার্কিন তারবার্তা ফাঁস করেছে উইকিলিকস। মার্কিন কূটনীতিকদের ভাষ্যে এসব তারবার্তায় বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশের রাজনীতি ও ক্ষমতার অন্দরমহলের খবর।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, জ্বালানি ঘাটতি এবং বন্যাদুর্গতদের সাহায্যার্থে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ‘ব্যর্থতার’ পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৭ সালের প্রথম থেকেই গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল দেশের রাজনৈতিক ও সরকারব্যবস্থায় পরিবর্তন আসছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ সম্প্রসারণ থেকে শুরু করে সেনাবাহিনীর সরাসরি ক্ষমতা গ্রহণের কথা তখন বলা হচ্ছিল। কারাবন্দী দুই নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার ভাগ্যে কী ঘটতে যাচ্ছে, তা-ও পরিষ্কার নয়। এ অবস্থায় গুজব ছড়িয়ে পড়ে, রাজনৈতিক কাঠামোয় একটি বড় ধরনের পরিবর্তনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে সেনানিবাসে।
ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাসের তৎকালীন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স গীতা পাসি ওই সময় ওয়াশিংটনকে এসব কথা জানান। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভুল পদক্ষেপের কারণে আরেকটি রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হতে পারে। তবে ওই অবস্থায় সেনাবাহিনী কোনো জোরালো পদক্ষেপ নিতে পারে বলে তাঁর মনে হয়নি। ২০০৭ সালের ১৬ আগস্ট গীতা পাসির পাঠানো ওই তারবার্তা গত ৩০ আগস্ট উইকিলিকসের ফাঁস করা বার্তাগুলোর একটি।
তারবার্তায় বলা হয়, ওই গুঞ্জন নিয়ে সাবেক পররাষ্ট্রসচিব ফারুক সোবহানের সঙ্গে কথা বলেন দূতাবাসের কর্মকর্তা। তাঁদের মত ছিল, সেনাবাহিনীর সক্রিয় হওয়ার একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে শেখ হাসিনাকে মুক্তি দেওয়া। এ প্রসঙ্গে ফারুক সোবহান বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অনেক মামলা বিচারাধীন।
তারবার্তার ভাষ্য অনুযায়ী, ফারুক সোবহান বলেন, সেনাপ্রধানের চারপাশে ঘিরে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আতাউর রহমানের মতো স্বনিয়োজিত কিছু উপদেষ্টা। তাঁরা বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ার জন্য সেনাপ্রধানকে উৎসাহিত করছেন। সব মিলিয়ে এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাইছেন, যেখানে মনে হবে কেবল সেনাপ্রধানই দেশকে ‘রক্ষা’ করতে পারেন।
তবে ফারুক সোবহান স্বীকার করেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, জ্বালানি ঘাটতি, বন্যাসহ অনেক সমস্যাই মোকাবিলা করতে হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে। প্রধান উপদেষ্টার চেয়ে সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদের অধিকতর সক্রিয়তা নিয়ে যেসব আলোচনা হচ্ছিল, সে সম্পর্কে তিনি বলেন, সেনাপ্রধানই সরকারের মূল দায়িত্বে—এ ধারণা যে সত্যি নয়, তা বোঝানোর জন্য গণমাধ্যমে আরও বেশি কথা বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
তারবার্তায় বলা হয়, এ বিষয়ে মার্কিন কর্মকর্তারা ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ টি এম মো. আমিনের সঙ্গেও কথা বললে তাঁর সোজাসাপ্টা প্রশ্ন, ‘দেশের সব সমস্যার বোঝা কেন আমাদের ঘাড়ে নিতে যাব?’ তাঁর মতে, সেনাবাহিনী এখন যে কাজ করছে তার জন্য তারা একদিন বীর হিসেবে বিবেচিত হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো সেনাবাহিনীও ২০০৮ সালের শেষ নাগাদ নির্বাচন দেখতে চায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফারুক সোবহান প্রথম আলোর কাছে তারবার্তার বক্তব্য অস্বীকার করে বলেন, ‘তাদের সঙ্গে অবশ্যই কথা হয়েছে। কিন্তু এখানে আমাকে ভুলভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে।’

No comments:

Post a Comment