Wednesday, February 09, 2011

সাংবিধানিক সংস্কারের জন্য কমিটি মুবারকবিরোধীরা অনড়

টানা দুই সপ্তাহ ধরে চলা বিরোধী আন্দোলনের মুখে গণতান্ত্রিক সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন মিসরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারক। চলতি বছরের শেষ দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্য সামনে রেখে প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কারের জন্য একটি কমিটি করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

এ সত্ত্বেও তাঁর পদত্যাগের দাবিতে এখনো রাজপথ দখল করে রেখেছে বিরোধীরা। গতকাল মঙ্গলবার নতুন উদ্যমে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দিয়েছে তারা। নতুন সরকার পরিস্থিতি আয়ত্তে আনার কৌশল হিসেবে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন ভাতা ১৫ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছে।
গতকাল জাতির উদ্দেশে এক টেলিভিশন ভাষণে ভাইস প্রেসিডেন্ট ওমর সোলাইমান সাংবিধানিক সংস্কারের জন্য মুবারকের কমিটি করার নির্দেশের কথা জানান। বর্তমান পরিস্থিতিতে সোলাইমানকে মিসরের রাষ্ট্রক্ষমতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বলে অনেকেই মনে করছেন। সোলাইমান জানান, শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের সুনির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে রোডম্যাপ তৈরি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, 'বিরোধী নেতাদের সঙ্গে জাতীয় সংলাপে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে একটি কমিটি গঠন করারও নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট।'
ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ পালাবদলের একটি রূপরেখা তৈরির উদ্দেশ্যে দেশটির সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক দল অথচ নিষিদ্ধ মুসলিম ব্রাদারহুডসহ বিরোধী দলগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন সোলাইমান। বিক্ষোভকারীদের ওপর কোনো দমন-পীড়ন চালানো হবে না বলেও জানান তিনি। তবে কাকে কাকে নিয়ে ওই কমিটি গঠন করা হবে, সে ব্যাপারে স্পষ্ট করেননি তিনি। আর যেসব দল মিসরের রাস্তায় গত দুই সপ্তাহ ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের সবার প্রতিনিধিদেরও ডাকা হয়নি আলোচনায়। এর আগে পদত্যাগের দাবি প্রত্যাখ্যান করে মুবারক আগামী সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে দাঁড়াবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু বিরোধী দলগুলো বলছে, মিসরের বর্তমান সংবিধান অনুসারে কোনো নির্বাচনই নিরপেক্ষ হবে না।
মুবারকের ৩০ বছরের শাসনের অবসানের দাবিতে টানা দুই সপ্তাহের আন্দোলন গতকাল তৃতীয় সপ্তাহে গড়াল। মুবারকের পদত্যাগের দাবিতে মঙ্গলবার দেশজুড়ে নতুন উদ্যমে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। এই আন্দোলনের নাম দিয়েছে তারা 'নীল বিপ্লব'। কায়রোর তাহরির স্কয়ারে গণসমাবেশ ক্রমেই বাড়ছে। আন্দোলনের দুই সপ্তাহ পূর্তি উদ্যাপন উপলক্ষে জোরালো বিক্ষোভের এই ডাক দেওয়া হয়। এরই মধ্যে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী তাহরির স্কয়ারে স্থায়ীভাবে অবস্থান নিয়েছে। অনেকেই তাঁবু খাটিয়ে, কেউ কেউ কম্বল মুড়ি দিয়ে রাস্তা বা ফুটপাত দখল করে আছে। অনেকে আবার সেখানে অবস্থান নেওয়া সেনাবাহিনীর ট্যাংকের ভেতরেও রাত কাটাচ্ছে। আন্দোলনকারীদের চাঙ্গা রাখার জন্য বিভিন্ন গ্রুপ গণসংগীত গাইছে। তাহরির স্কয়ারে বিশাল এক ব্যানার টানানো হয়েছে, যাতে লেখা_'জনগণ এই সরকারের অবসান চায়।' মুবারক পদত্যাগ না করা পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বে না বলছে তাহরির স্কয়ারে অবস্থান নেওয়া আন্দোলনকারীরা।
এদিকে দুই সপ্তাহ আটক থাকার পর ইন্টারনেট সার্চ ইঞ্জিন গুগলের কর্মকর্তা ভায়েল ঘোনিম সোমবার ছাড়া পেয়েছেন। মিসরের বেসরকারি চ্যানেল ড্রিম টিভিকে তিনি বলেন, 'আমি কোনো প্রতীক, নায়ক বা এ ধরনের কিছু নই। তবে আমার ওপর যা ঘটেছে তা অপরাধ। ঘোনিমের মুক্তিতে মুবারকবিরোধী বিক্ষোভ আরো জোরদার হবে বলে আশা করা হচ্ছে।'
বেতন ভাতা বাড়াল সরকার
পরিস্থিতি আয়ত্তে নিতে এবং ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার এক নতুন কৌশল হাতে নিয়েছেন মুবারক। সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন ভাতা ১৫ শতাংশ বাড়িয়েছে তার নতুন সরকার। গতকাল মঙ্গলবার দেশের ব্যাংকগুলো খুলেছে। তবে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শেয়ারবাজার বন্ধ থাকবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে। কায়রো, আলেকজান্দ্রিয়া ও সুয়েজে কারফিউ অব্যাহত রয়েছে। এ পরিস্থিতির মধ্যে গত সোমবার প্রথম পূর্ণ বৈঠক করেছে নতুন মন্ত্রিসভা। তবে সরকারের এ উদ্যোগ আন্দোলন কতটা প্রশমিত করতে পারবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। সালিত আবদেল আজিজ নামের এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, 'আমরা তাঁকে (মুবারক) বিশ্বাস করি না। তিনি একজন মিথ্যাবাদী। অতীতেও তিনি বহু প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি আমাদের বেতন ভাতা ১৫ ভাগ কেন ৬৫ ভাগও বাড়ানোর ঘোষণা দিতে পারেন। তাঁকে আমরা বিশ্বাস করি না। সূত্র : এএফপি, রয়টার্স।

No comments:

Post a Comment