Tuesday, September 06, 2011

মনমোহন আজ আসছেন, পানিবণ্টন চুক্তি অনিশ্চিত

তিহাসিক এক সফরে আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকায় আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং। তবে পশ্চিমবঙ্গের আপত্তির কারণে দৃশ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বহু প্রত্যাশিত তিস্তা ও ফেনী নদীর পানিবণ্টন চুক্তি। গতকাল সোমবার বিকেলে নয়াদিলি্ল থেকে পশ্চিমবঙ্গের অমতে বাংলাদেশের সঙ্গে পানিবণ্টন চুক্তি না করার ঘোষণা দেওয়া হয়। এ সফরে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আনার ব্যাপারে যে চুক্তিটি স্বাক্ষরের কথা ছিল, সে ব্যাপারেও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী গতকাল তাঁর সফরপূর্ব বিবৃতিতে গতানুগতিক খাতগুলোর পাশাপাশি নতুন নতুন কয়েকটি খাতে কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেছেন। আর পানিবণ্টন চুক্তির ব্যাপারে ঢাকা আশা ছাড়েনি। দুই দেশের সহযোগিতার বিষয়ে রূপরেখা চুক্তি হতে পারে বলেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি গত রবিবার সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন। জানা গেছে, বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় অব্যাহত যোগাযোগের মাধ্যমে ১০টি চুক্তি, সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) ও প্রটোকল চূড়ান্ত করেছে। আজ মঙ্গলবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর একান্ত বৈঠক এবং পরে তাঁদের নেতৃত্বে দুই দেশের প্রতিনিধিদলের মধ্যে বৈঠক শেষে কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে। আজ বিকেলের ওই বৈঠকের দিকে দৃষ্টি থাকবে উভয় দেশের কোটি কোটি মানুষের।
এদিকে তিস্তা ও ফেনী নদীর পানিবণ্টন নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে অনেকটা ভাটা পড়েছে বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশায়। তবে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর ওপরই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়ন ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষার ব্যাপারে ব্যাপক প্রত্যাশা রয়েছে। এ কারণে দুই দেশের ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে এ সফর যেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের জন্য কুল রক্ষার লড়াই হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিস্তা ও ফেনী নদীর পানিবণ্টন, ছিটমহল বিনিময় দুই দেশের মধ্যে কয়েক যুগ ধরে বিরাজমান অনেক ইস্যু দৃশ্যত সমাধানের দ্বারপ্রান্তে পেঁৗছে যাওয়ার সময় মনমোহনের এ সফরকে ঘিরে আশাবাদী দুই দেশ। বাংলাদেশের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পানি, অন্যদিকে ভারতের কাছে ট্রানজিট। এই দুই ইস্যুতে কোনো চুক্তি না হলে মনমোহনের এ সফর নিয়ে দুই দেশের জনগণের আশা পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কূটনীতিকরা। বিশেষ করে এ সফরে সম্ভাব্য বিভিন্ন চুক্তি সম্পর্কে বিভিন্ন সময় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টারা ধারণা দেওয়ায় জনগণের প্রত্যাশা আরো বেড়ে যায়। এ সফরকে ঘিরে উভয় দেশের জনগণের প্রত্যাশার চাপ রয়েছে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীদ্বয়ের ওপর। তিস্তা ও ফেনী নদীর পানিবণ্টন নিয়ে চুক্তি না হলে জনগণের প্রত্যাশার সামাল দিতে হবে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী তথা সরকারকে। এসব চাপ নিয়েই আজ বিকেলে ঢাকায় তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বৈঠকে বসবেন দুই প্রধানমন্ত্রী। স্পর্শকাতর অনেক বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসতে পারে এ বৈঠক থেকে। গত বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সাবেক কূটনীতিক ও লেখক জি পার্থ সারথি 'স্টেপ আপ টাইস উইথ বাংলাদেশ' শীর্ষক প্রতিবেদনে বলেছেন, ঢাকার প্রতি দিলি্লর ইতিবাচক পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতনীতির সমালোচকরা শান্ত হবেন।
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষসহ বিভিন্ন মহলে শেখ হাসিনার ভারতনীতির সমালোচনা রয়েছে। দিলি্ল যদি বাংলাদেশকে তার ন্যায্য পাওনা দিতে ইতিবাচক পদক্ষেপ না নেয়, তাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচকরা মুখর হবেন বলেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন।
গত বছরের জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের পর থেকেই মনমোহন সিংয়ের সফরের প্রত্যাশী ছিল বাংলাদেশ। দীর্ঘ ১৯ মাসের প্রতীক্ষার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী আজ দুপুর ১২টার দিকে ঢাকায় আসছেন। ১৯৯৯ সালের পর প্রথমবারের মতো কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ঢাকা সফরে আসছেন। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের উষ্ণতা সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশ পেয়েছে শীর্ষ পর্যায়ের সফর বিনিময়ের মধ্য দিয়ে। গত দেড় বছরে এ দেশ সফর করেছেন ভারতের উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারী, কংগ্রেস সভানেত্রী ও ভারতের জাতীয় উপদেষ্টা কাউন্সিলের চেয়ারপারসন সোনিয়া গান্ধী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরম, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণ, অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি, বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মাসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা। তাঁদের বেশির ভাগই এসেছেন মনমোহনের সফর প্রস্তুতির অংশ হিসেবে। সব প্রস্তুতি শেষে প্রায় ৩০ ঘণ্টার সফরে ঢাকায় আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। গত জুন মাসের শেষ দিকে ভারতের সংবাদমাধ্যমের সম্পাদকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় বাংলাদেশ নিয়ে 'অব দ্য রেকর্ড' এক অনভিপ্রেত মন্তব্য করে দুই দেশেই আলোচনা-সমালোচনার ঝড় তুলেছিলেন মনমোহন সিং। এরপর দৃশ্যত অনেকটা তড়িঘড়ি করেই এ সফরের তারিখ ঘোষণা করা হয়। তবুও এ সফরকে ঘিরে দুই দেশের জনগণের প্রত্যাশা অনেক।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরকে 'ঐতিহাসিক' হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেছেন, গত বছরের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্কের যে বিরাট যাত্রা শুরু হয়েছিল, তা চূড়ান্ত পর্যায়ে পেঁৗছেছে। বাংলাদেশ কেবল দুই দেশের বিষয়েই নয়, পুরো অঞ্চলের উন্নয়নের কথা ভাবছে।
এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীও গত শনিবার বার্তা সংস্থা বাসসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তাঁর ঢাকা সফর সম্পর্কে বলেছেন, এ সফরের মধ্য দিয়ে ঢাকা ও দিলি্ল সম্পর্ক জোরদারের নতুন সুযোগ পাবে। এর আগে গত ৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে মনমোহন সিং তাঁর ঢাকা সফরের কথা জানানোর সময়ও বলেছিলেন, এ সফর হবে ঐতিহাসিক।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরকে ফলপ্রসূ করতে দিলি্লর আন্তরিকতায় ঘাটতি ছিল না। বছরের পর বছর ধরে জিইয়ে থাকা বিরোধপূর্ণ ইস্যুগুলো হঠাৎই যেন ছুটতে শুরু করেছে। গতি এসেছে যৌথ ইশতেহার বাস্তবায়নপ্রক্রিয়াতেও। দীর্ঘ ৬৪ বছর পর বাংলাদেশ ও ভারত পরস্পরের সীমানাকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ছিটমহল ও অপদখলীয় ভূমি বিনিময়ের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তও চুক্তির মাধ্যমে আইনি রূপ পাওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। যেসব ইস্যু রাতারাতি নিষ্পত্তি করা সম্ভব নয়, সেগুলোও সমাধানের পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আজ ঢাকায় দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকেও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও রূপরেখা মিলতে পারে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।
ঢাকা সফরের আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি : ভারতের প্রধানমন্ত্রী ঢাকা সফরের আগে গতকাল রাতে এক বিবৃতিতে বলেন, 'বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন ও শক্তিশালীকরণকে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। মুক্তিসংগ্রাম, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের মধ্যে আমাদের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। উভয় দেশই অভিন্ন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও উন্নয়ন আকাঙ্ক্ষায় বিশ্বাসী।'
বিবৃতিতে মনমোহন বলেন, 'সফরের সময় আমার সঙ্গে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর মুখ্যমন্ত্রীরা থাকবেন। এটি বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের বৃহৎ পরিসরে কাজ করার আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। এর মাধ্যমে আমাদের সহযোগিতার ফল সীমান্তের দুই পাড়ের মানুষ পাবে।' তিনি আরো বলেন, 'বর্তমানে আমরা দুই দেশ বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার ক্ষেত্রে চমৎকার সময় উপভোগ করছি। গত বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের ফিরতি সফর হিসেবে আমার সফর বিবেচিত হবে। এটা অত্যন্ত আনন্দের বিষয় যে, নিরাপত্তা, সীমান্ত ইস্যু, পানিসম্পদ, বিদ্যুৎ সংযোগ, সীমান্ত অবকাঠামোর উন্নয়ন, বাণিজ্য সুবিধা, অর্থনৈতিক সহযোগিতাসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। আমাদের ইচ্ছা, এগুলো টেকসই ও ইতিবাচক উন্নয়নের দিকেই এগিয়ে যাবে। ওই বিষয়গুলোতে ভারত-বাংলাদেশ সহযোগিতার ক্ষেত্র আমার এ সফরের মধ্য দিয়ে সম্প্রসারিত হবে বলে আমি আশা করি। গতানুগতিক খাতগুলোর পাশাপাশি নতুন কিছু খাতে আমাদের সহযোগিতা বৃদ্ধিতে কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যাপারেও আমরা আশা করছি।'
বিবৃতিতে মনমোহন সিং রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ ছাড়াও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ কর্মসূচির কথা উল্লেখ করেন। তিনি আরো বলেছেন, 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করার জন্য আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।'
বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, 'কাছের প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগিতায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ভারত। বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্ব আমাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন। এটি এমনই এক অংশীদারিত্ব, যার ব্যাপক প্রভাব পুরো দক্ষিণ এশিয়াতেই পড়বে।'
সফরসূচি : ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংকে বহনকারী ভারতীয় বিশেষ বিমান ঢাকায় পেঁৗছাবে আজ সকাল ১১টা ৫৫ মিনিটে। বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুপুর ১২টায় ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ১৯ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে সালাম জানাবে সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল। মন্ত্রিসভার সদস্যরা ওই সময় বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকবেন। বিমানবন্দর থেকে সোয়া ১২টায় মনমোহন সিংয়ের মোটর শোভাযাত্রা রওনা হবে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধের উদ্দেশে। ১টায় জাতীয় স্মৃতিসৌধে পেঁৗছে মনমোহন সিং এ দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে আত্মত্যাগকারী বীর শহীদদের প্রতি পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর তিনি জাতীয় স্মৃতিসৌধ পরিদর্শক বইয়ে স্বাক্ষর করবেন এবং স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে গাছের চারা রোপণ করবেন। স্মৃতিসৌধ থেকে মনমোহন সিংয়ের মোটর শোভাযাত্রা রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে পেঁৗছাবে ১টা ৫০ মিনিটে। তিনি সেখানেই দুপুরের খাবার খাবেন এবং বিশ্রাম নেবেন। বিকেল ৪টার পর মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে আলাদাভাবে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ওই সাক্ষাৎ শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী যাবেন তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। অন্যদিকে মনমোহন সিংয়ের স্ত্রী গুরশরণ কাউর এ সময় গুরুদুয়ারা পরিদর্শন করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যাবেন এবং পরিদর্শন শেষে সোনারগাঁও হোটেলে ফিরবেন।
মনমোহন সিং তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পেঁৗছে শিমুল হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আধা ঘণ্টার একান্ত বৈঠকে অংশ নেবেন। এরপর বিকেল ৫টা ৩৫ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিট পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলন কক্ষ চামেলিতে চলবে দুই দেশের আনুষ্ঠানিক বৈঠক। ওই বৈঠক শেষে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে এবং এরপর একটি যৌথ ঘোষণা দেওয়া হবে। এরই ফাঁকে দুই প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় থেকে সুইচ চেপে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করবেন। সন্ধ্যা ৭টায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী সোনারগাঁও হোটেলে ফিরবেন এবং রাত ৮টায় ওই হোটেলের গ্র্যান্ড বলরুমে তাঁর ও তাঁর স্ত্রীর সম্মানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আয়োজিত নৈশ ভোজে যোগ দেবেন। ওই নৈশ ভোজে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং বক্তব্য দেবেন।
দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ আগামীকাল বুধবারের সফরসূচি অনুযায়ী ভারতের প্রধানমন্ত্রী সোনারগাঁও হোটেলে থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে রওনা হবেন সকাল পৌনে ১১টায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটে তিনি ১১টা থেকে দুপুর পৌনে ১২টা পর্যন্ত তিনি 'ইন্ডিয়া, বাংলাদেশ, সাউথ এশিয়া' (ভারত, বাংলাদেশ, দক্ষিণ এশিয়া) শীর্ষক বক্তব্য দেবেন। সেখান থেকে সকাল ১১টা ৫০ মিনিটে তিনি বঙ্গভবনের উদ্দেশে রওনা হয়ে পেঁৗছাবেন দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে। বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে তিনি ১২টা ৫৫ মিনিটে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে যাবেন। সেখানে তিনি বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, জাদুঘর পরিদর্শন এবং পরিদর্শক বইয়ে স্বাক্ষর করবেন। বঙ্গবন্ধু জাদুঘর থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী সোনারগাঁও হোটেলে ফিরবেন দুপুর দেড়টায়। সেখানে দুপুর ১টা ৩৫ মিনিট থেকে বিকেল ৫টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত দুপুরের খাবার খাওয়া ও বিশ্রাম নেবেন। বিশ্রামের ফাঁকে তাঁর সঙ্গে আলাদাভাবে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। বিশ্রাম ও সাক্ষাৎ পর্ব শেষে মনমোহন সিং হোটেল থেকে হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হবেন। বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে বিমানবন্দরে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিক বিদায় জানাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এভাবেই শেষ হবে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ঐতিহাসিক ঢাকা সফর।
সম্ভাব্য চুক্তি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি গত রবিবার সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরে তিনটি চুক্তি, পাঁচটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) ও দুটি প্রটোকল স্বাক্ষরিত হতে পারে। তিস্তা ও ফেনী নদীর পানিবণ্টনে ১৫ বছর মেয়াদি দুটি চুক্তি ছাড়া অপর চুক্তিটি হলো ভারত থেকে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানিবিষয়ক। সম্ভাব্য এমওইউ পাঁচটি হলো সুন্দরবন সুরক্ষা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে ও মৎস্য খাতে সহযোগিতা, বিটিভি ও দূরদর্শন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সহযোগিতা। সম্ভাব্য প্রটোকল দুটি স্থল সীমানা ও বাঘ রক্ষাবিষয়ক। এ ছাড়া পুরো অঞ্চলের সহযোগিতার বিষয়ে একটি কাঠামো (রূপরেখা) স্বাক্ষর করতে পারেন দুই প্রধানমন্ত্রী। এর বাইরে ট্রানজিট বিষয়ে ভবিষ্যতে যে প্রটোকল হবে, সে লক্ষ্যে দুটি 'লেটার অব এঙ্চেঞ্জ' স্বাক্ষরিত হতে পারে বলে তিনি জানান।
প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী সম্ভাব্য চুক্তিগুলো গতকালের মন্ত্রিসভার বৈঠকে উত্থাপন করা হবে বলে জানালেও তা করা হয়নি বলে বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে জানানো হয়েছে। তবে গতকাল সন্ধ্যায় সীমিত পরিসরে আরেকটি বৈঠক বসেছে এবং ওই বৈঠকে সম্ভাব্য চুক্তিগুলো উপস্থাপন করা হয়েছে কি না তা জানা যায়নি। শেষ পর্যন্ত কয়টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হচ্ছে_এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা গতকাল সোমবার দুপুরে ওপরের চুক্তি, এমওইউ ও প্রটোকলগুলোর কথা উল্লেখ করে কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। শেষ পর্যন্ত কয়টি স্বাক্ষরিত হবে, তা শীর্ষ বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হবে।
গতকাল বিকেলে ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের পররাষ্ট্রসচিব রঞ্জন মাথাই বলেছেন_পশ্চিমবঙ্গের সম্মতি ছাড়া বাংলাদেশ-ভারত পানিবণ্টন চুক্তি হবে না। এদিকে ঢাকায় বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি নিয়ে চুক্তি এ সফরে স্বাক্ষরিত হওয়া নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরে বহুল আলোচিত তিস্তা ও ফেনী নদীর পানিবণ্টন চুক্তি হচ্ছে না বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের ব্যাপারে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনারের কাছে বিষয়টির ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রসচিব মোহাম্মদ মিজারুল কায়েস।
সফরসঙ্গী: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি গত রবিবার সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতীয় পাঁচ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ঢাকায় মনমোহনের সফরসঙ্গী হিসেবে থাকবেন। তাঁরা হলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার, আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গোগোই ও মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লাল থানহাওলা। তবে গতকাল নয়াদিলি্ল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকাকে জানানো হয়েছে, মমতা আসছেন না। অন্যদিকে আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গোগোই গতকাল সোমবার সকালেই ঢাকায় এসেছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণ, পানিসম্পদমন্ত্রী পবন কুমার বানসাল, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব টি কে এ নায়ার, পররাষ্ট্রসচিব রঞ্জন মাথাই, গণমাধ্যমবিষয়ক উপদেষ্টা ড. হারিস খারিসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ঢাকায় আসছেন। মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বে ঢাকা সফরকারী ১৩৭ সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধিদলে ৪১ জন সাংবাদিক ছাড়াও আছেন বেশ কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মী।

No comments:

Post a Comment