Thursday, January 12, 2012

জেলা মহিলা আ’লীগের কমিটি ঘোষনা নিয়ে লংকাকান্ড

এমপি সাফিয়া খাতুনের গাড়ী অবরোধ, বিদ্রোহীদের পাল্টা কমিটি। তুমুল বাকবিতন্ডার, গোলযোগ ও পাল্টা কমিটি ঘোষনার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়েছে  জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের ত্রি বার্ষিক কাউন্সিল।
 
জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের নতুন কমিটি ঘোষনাকে কেন্দ্র করে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়।

সদ্য ঘোষিত কমিটি থেকে বাদ পড়ায় জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের একটি অংশ কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি সুফিয়া খাতুন এমপি’র গাড়ী এক ঘন্টা ধরে অবরোদ্ধ করে রাখে। গতকাল বুধবার সন্ধায় জেলা পরিষদ প্রাঙ্গনে আয়োজিত জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন শেষে কমিটি ঘোষনার পর এ ঘটনা ঘটে। এদিকে নব গঠিত কানিজ ফাতেমা-হামিদা কমিটিকে বর্জন করে পাল্টা কমিটি দিয়েছে বিদ্রোহী রুহানা-বাপ্পী  গ্রুপ।
জানা যায়, গতকাল ১১ জানুয়ারি বুধবার ছিল কক্সবাজার জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের ত্রি বার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশন ও সম্মেলন’২০১২। এ লক্ষ্যে  বিশালাকারে বর্ণাঢ্য আয়োজনও করা হয় সংগঠনটির পক্ষ থেকে। সকাল ১০ টা থেকে জেলা পরিষদ  প্রাঙ্গনে জেলার ৮ উপজেলার নেতা-কমীদের উপস্থিতিতে প্রথম অধিবেশন শেষ হয়। এরপর দ্বিতীয় অধিবেশনে কেন্দীয় মহিলা আওয়ামীরীগের সহ-সভাপতি সাফিয়া খাতুন এমপি’র উপস্থিতিতে বর্তমান কমিটির সভানেত্রী কানিজ ফাতেমা মোস্তাক  ও সাধারণ সম্পাদক হামিদা তাহেরকে পূণরায় দায়িত্বভার দিয়ে কমিটি ঘোষনা করা হলে শুরু হয় উত্তেজনা।
এক পর্যায়ে জেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষ থেকে বের হয়ে নিজ গাড়ী নিয়ে যাওয়ার পথে এমপি সাফিয়া খাতুনের গাড়ী অবরোদ্ধ করে রাখে রুহানা-বাপ্পী গ্র“পের নেতা-কর্মীরা। এসময় বিক্ষুব্ধরা পকেট কমিটি বাতিল পূর্বক গণতান্ত্রিকভাবে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠনের দাবীতে নানা ধরণের প্রতিবাদী শ্লোগান দিতে থাকে। এক পর্যায়ে পুলিশের সহযোগীতা ও কড়া নিরাপত্তার মধ্যে সাফিয়া খাতুন এমপির গাড়ি অবরোদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে এমপি সাফিয়া খাতুন অবস্থান ত্যাগ করলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হয়।
অপর দিকে এ ঘটনার পর রুহানা-বাপ্পী গ্র“প তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আরো একটি পাল্টা কমিটি ঘোষনা করে। সন্ধায় শহরের একটি অভিজাত হোটেলের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রুহানা আক্তারকে সভানেত্রী,নাসিমা আক্তার বানু সহ-সভানেত্রী,লূৎফুর নাহার বাপ্পীকে সাধারণ সম্পাদক ও টিপু সোলতানাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী কমিটি ঘোষনা করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লুৎফুর নাহার বাপ্পী লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন, দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে কানিজ ফাতেমা মোস্তাক ও হামিদা তাহের জেলা কমিটিকে জিম্মি করে রেখেছে। তারা ত্রি বার্ষিক সম্মেলনের কথা বল্লেও অবৈধভাবে  দীর্ঘ ১১ বছর জোর পূর্বক জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের গুরুত্বপূর্ন দুটি পথ দখল করে রাখে। যা সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূত ও অগঠনতান্ত্রিক।
তাদের দাবী তৃণমূল পর্যায়ের ত্যাগী ও দলের দুঃস্বময়ে রাজপথে থাকা নেতা-কর্মীদের মুল্যায়ন করা হয়নি। ২ লক্ষ টাকার বিনিময়ে পূরণো কমিটি আবারো বহাল রাখার বিষয়টি তারা কোনভাবে মেনে নেবেনা। প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রী ও মহিলা আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাধারণ সম্পাদকসহ নীতি-নির্ধারকদের কাছে গিয়ে সরাসরি এ পকেট কমিটি বাতিলের দাবী জানানো হবে বলে বাপ্পী তার বক্তব্যে তুলে ধরেন। এর আগে দ্বিতীয় অধিবেশনে তাৎক্ষণিক উপস্থিত মহিলা ও মিশু বিষয়ক প্রতি মন্ত্রী ড.শিরীন সোলতানা কে ঘটনাস্থলেই পকেট কমিটি কে নিয়ে তাদের জোর আপত্তির কথা অবহিত করেন। মন্ত্রীও বিষয়টি আমলে নিয়ে ঢাকায় পৌঁছে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথে আলাপ করবেন বলে বিদ্রোহীদের আশ্বস্থ করেন।
এব্যাপারে কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামীলীগের সভানেত্রী আশরাফুন্নেসার সাথে মুঠো ফোনে আলাপ করা হলে তিনি জানান, কমিটিকে নিয়ে আপত্তি উঠলে অবশ্যই দেখা হবে। সবাইকে এক জায়গায় এনে কক্সবাজার জেলা কমিটি গঠন করা  হবে বলে তিনি জানান।
এদিকে প্রথম অধিবেশনে জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভানেত্রী কানিজ ফাতেমা মোস্তাকের সভাপতিত্বে ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে উদ্ভোধক ছিলেন কক্সবাজার জেলা পরিষদের প্রশাসক মোস্তাক আহমদ চৌধুরী। সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন চকরিয়া-পেকুয়ার দায়িত্ব প্রাপ্ত মহিলা সাংসদ কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি সাফিয়া খাতুন। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এড. আহমদ হোসেন, কক্সবাজার-রামু আসনের মহিলা সংসদ সদস্য অধ্যাপিকা এথিন রাখাইন, উখিয়া-টেকনাফের সাবেক সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি অধ্যাপক মো: আলী, জেলা আওয়ামীরীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম চৌধুরী, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমদ সিআইপি, মহিলা আ’লীগ নেত্রী মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নুসরাত জাহান মুন্নী, জেলা স্বেচ্চাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক কায়সারুল হক জুয়েল,মাহাবুবা ইয়াছমিন চৌধুরী, হামিদা তাহের, উম্মে কুলসুম মিনু, জয়নাব আকতার, নিগার সুলতান, মিসেস আয়েশা সালাহ উদ্দিন, অধ্যাপিকা মোতাহেরা বেগম, রেজুত আরা বেগম, লুৎফুর নাহার বাপ্পী, নাছিমা আকতার বানু, রোহেনা আকতার প্রমুখ। অপর দিকে সন্ধায় সম্মেলনস্থলে আসেন বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ড.শিরীন শারমীন চৌধুরী। তিনি জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দের সাথে কিছুক্ষন অবস্থান করে পরামর্শমূলক বক্তব্য রাখেন।

No comments:

Post a Comment