Tuesday, June 19, 2012

টেকনাফ সীমান্তে দেড় বছরে চার হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে পুশব্যাক

বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। গত দেড় বছরে টেকনাফসহ সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করা প্রায় ৪ হাজার রোহিঙ্গাকে আটক করে

টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে পুশব্যাক করেছে সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ (বিজিবি)। এর মধ্যে শুধু গত ৮-১৮ জুনের মধ্যে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে রাখাইন ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে চলমান দাঙ্গার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গারা দলে দলে প্রবেশের সময় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে পুশব্যাক হয়েছে ৮৮৯ জন রোহিঙ্গা।
বিজিবি সূত্র জানায়, বাংলা-দেশ-মিয়ানমার সীমান্তপথে ২০১১ সালে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে পুশব্যাক করা হয়েছে ১ হাজার ৭৮৯ রোহিঙ্গাকে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৬৪ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৭৬ জন, মার্চে ৮৩ জন, এপ্রিলে ১৩২ জন, মে’তে ২৫৫ জন, জুনে ১৩১ জন, জুলাইতে ৭৩ জন, আগস্টে ১২৮ জন, সেপ্টেম্বরে ১৬১ জন, অক্টোবরে ১শ’ জন, নভেম্বরে ২৮৩ জন এবং ডিসেম্বরে ৩০৫ জনকে পুশব্যাক করা হয়েছে।
আর ২০১২ সালের জানুয়ারিতে ২১৪ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৪৪৫ জন, মার্চে ২৭৫ জন, এপ্রিলে ১৮৮ জন, মে মাসে ১৩২ জন এবং জুন মাসের গত ১৮ দিনে ৮৮৯ জনকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
বিজিবি সূত্র জানিয়েছে, বুধবার থেকে গত যাদের আটক করা হয়েছে তাদের মধ্যে নতুনভাবে এসেছে এমন কেউ নেই। তাদের অনেককে আগেও পুশব্যাক করা হয়েছিল।
সূত্র আরও জানায়, নাফ নদী দিয়ে ২৪টি পয়েন্টে অনুপ্রবেশকারীদের ঢোকা সম্ভব। এর মধ্যে নাজিরপাড়াসহ ৬-৭টি পয়েন্ট আছে, যেগুলো দিয়ে বেশিরভাগ রোহিঙ্গা প্রবেশের চেষ্টা করে। তবে এসব পয়েন্ট সিল করে দেয়া হয়েছে বলে সূত্র জানায়।
বিজিবির ৪২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক জানান, অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদীপথে বিজিবির নজরদারি আরও জোরদার করা হয়েছে। ৯টি জলযান রাতভর নাফ নদীতে টহল দিচ্ছে। এছাড়াও গ্রামে গ্রামে রোহিঙ্গা লুকিয়ে আছে কি-না সেটা জানতেও সোর্স নিয়োগ করা হয়েছে।
বিজিবি সূত্র জানায়, নাফ নদীর উপকূলে মিয়ানমার এলাকায় ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে ৪৮ কিলোমিটারে কাঁটাতারের বেড়া আছে। বিজিবি কর্মকর্তারা খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন, এসব কাঁটাতারের চেকপোস্ট পার হয়ে নাফ নদীতে নামার ক্ষেত্রে নাসাকা বাহিনীও এখন রোহিঙ্গাদের বাধা দিচ্ছে। এর ফলে অনুপ্রবেশের চেষ্টকারীর সংখ্যা আস্তে আস্তে কমে আসছে।
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ প্রতিরোধে টেকনাফ, শাহপরীর দ্বীপ, নাইক্ষ্যংছড়ির মনজয়পাড়া, রেজুপাড়া ও লেমুছড়ি সীমান্ত এলাকায় অতিরিক্ত বিজিবি মোতায়েন রয়েছে। সরেজমিন পরির্দশনকালে শাহপরীর দ্বীপের বেড়িবাঁধ এলাকার প্রায় চার কিমি সড়কে অতিরিক্ত বিজিবিকে টহলে দেখা যায়। স্থানীয় শ্রমিক আলী হোসেন জানান, গভীর রাতে মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা নদীপথে এসে বিভিন্ন গ্রামে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করে। এ সময় বিজিবি বেশ কয়েক রোহিঙ্গাকে আটক করে পুশব্যাক করেছে।
নাইক্ষ্যংছড়ির ১৫ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, নাইক্ষ্যংছড়ির মনজয়পাড়া, রেজুপাড়া এবং লেমুছড়ি সীমান্ত ব্যবহার করে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করতে পারে। এ কারণে এসব সীমান্ত পয়েন্টের বর্ডার অবজারবেশন পোস্টগুলোকে কড়া প্রহরায় থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও স্থানীয় জনগণ ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী (ভিডিপি) রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সজাগ রয়েছে বলে জানান তিনি।
৪২ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ টেকনাফ ব্যাটালিয়নের অপারেশন কর্মকর্তা এইচ কামরুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, গত এক সপ্তাহে অনু-প্রবেশের ৭৮৬ জনকে আটক করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
টেকনাফ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহাবুবুল হক জানান, চলমান রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি পুলিশও বিভিন্ন এলাকায় টহল জোরদার করেছে।
এদিকে সজেমিন পরির্দশনকালে স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মিয়ানমারে চলমান জাতিগত সহিংসতার কারণে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় অবস্থানরত তাদের আত্মীয়স্বজনদের সহযোগিতায় অনেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছে।
বাংলাদেশীরা অবৈধ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে। তবে সীমান্ত এলাকার অনেক গ্রামে রোহিঙ্গারা লুকিয়ে থাকতে পারে—এমন সম্ভাবনার ভিত্তিতে বিজিবি কয়েকটি গ্রামে তল্লাশি চালিয়েছে।
গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার সময় পাঁচটি ট্রলারযোগে মংডু থেকে পালিয়ে এসে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ সীমান্ত দিয়ে দেশে প্রবেশের চেষ্টাকালে ১০৩ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা (সোমবার বেলা ৩টা পর্যন্ত) পর্যন্ত তাদের পুশব্যাক করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল বিজিবি ও কোস্টগার্ড।

No comments:

Post a Comment