Tuesday, June 19, 2012

কক্সবাজার বান্দরবান ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে রোহিঙ্গারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে

আগামীকাল বুধবার বিশ্ব শরণার্থী দিবস। বিশ্বব্যাপী শরণার্থীদের সুখ-দুঃখের সাথে একাত্মতা প্রকাশের জন্য প্রতি বছর ২০ জুন শরণার্থী দিবস পালন করা হয়।

বাংলাদেশে এবার দিবসটি পালন হতে যাচ্ছে এক ভিন্ন পরিস্থিতিতে। বর্তমানে মিয়ানমারে ফিরে যাবার অপেক্ষায় বাংলাদেশে অবস্থান করছে ২৫ হাজার ৩২৫ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী। এই ২৫ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীর সাথে এদেশে রয়েছে আরো চার লাখ রোহিঙ্গা। এসব রোহিঙ্গার পরিচিতি 'শরণার্থী' নয়। তারা প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের আরাকান থেকে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে কক্সবাজার ও বান্দরবান এমনকি বৃহত্তর চট্টগ্রামের নানা স্থানে রয়েছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে।
দুই দশক ধরে ঝুলে আছে এ রোহিঙ্গা সমস্যা। ১৯৯১ সালের ২১ ডিসেম্বর ভোর রাতে কক্সবাজারের উখিয়ার রেজু বিডিআর (বিজিবি) ফাঁড়ি আক্রমণ করেছিল মিয়ানমারের সেনারা। সেই আক্রমণে ২ বিডিআর জওয়ানকে হত্যার পর মিয়ানমারের সেনারা লুঠ করে নিয়েছিল ৩১ টি অস্ত্র। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের তদানীন্তন বিএনপি সরকার ও মিয়ানমারের সেনা সরকারের মধ্যে মুখোমুখি অবস্থানের সৃষ্টি হয়। এমনকি দুই দেশই সীমান্তে সেনা মোতায়েনের মাধ্যমে যুদ্ধংদেহী পরিস্থিতির মুখে পড়ে। পরে মিয়ানমার থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে সরকার ফিরে আসে। সেই সময়কালের চট্টগ্রামের বিতর্কিত বিভাগীয় কমিশনার এবং পরবর্তী সময়ের '১০ ট্রাক অস্ত্রের' আলোচিত ব্যক্তি ওমর ফারুক নাফ নদী তীরে দাঁড়িয়ে 'ওয়া আহলান-ওয়া সাহলান' জানিয়ে রোহিঙ্গাদের স্বাগত জানিয়েছিলেন। এভাবেই ১৯৯২ সাল পর্যন্ত কক্সবাজারে অবস্থান নেয় ২ লাখ ৫০ হাজার ৮৭৭ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী। এসব রোহিঙ্গা শরণার্থীর লালন-পালনের অজুহাতে সেই সময়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক হাই কমিশন (ইউএনএইচসিআর) সহ আন্তর্জাতিক বহুসংখ্যক এনজিও। তারা এসে নানা কূটকৌশলে ও চাপ দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন বিলম্বিত করতে শুরু করে। এরিমধ্যে ১৯৯৩ সাল থেকে ২০০৫ সালের ২৭ জুলাই পর্যন্ত ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫৯৯ জন রোহিঙ্গাকে স্বদেশে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। সেই থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন বন্ধ রয়েছে। কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে বর্তমানে ১১৯৮ পরিবারের ১০ হাজার ৩৫০ জন এবং টেকনাফের নয়াপাড়া শিবিরে ১৭৭১ পরিবারের ১৪ হাজার ৯৭৫ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী দেশে ফিরে যাবার অপেক্ষায় রয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরসি) ও যুগ্ম সচিব ফিরোজ সালাউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'রোহিঙ্গা শরণার্থীদের যাচাই বাছাইয়ের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে গিয়েই প্রত্যাবাসন ঝুলে রয়েছে।'
মিয়ানমার থেকে বিভিন্ন সময় সীমান্ত পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গার সঠিক সংখ্যা কারও জানা নেই। তবে কক্সবাজারের প্রশাসন এবং রোহিঙ্গা সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর মতে এ সংখ্যা ৪ লাখেরও বেশি। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশন (আরআরসি) অফিস সূত্রে জানা গেছে, উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবির সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকায় প্রায় ৫০ হাজার এবং টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শিবির সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে প্রায় ১৫ হাজার অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা। এসব অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা একটি স্থানে জড়ো হয়ে থাকায় তাদের সংখ্যা বলা সহজ হচ্ছে। কিন্তু এর বাইরেও রয়েছে আরো কমপক্ষে ৩ লাখেরও বেশি।
এলাকাবাসীর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
প্রায় প্রতিদিনই কক্সবাজার জেলা শহরসহ সীমান্তবর্তী এলাকায় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানোর দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ হচ্ছে। এসব সমাবেশে 'আর একজন রোহিঙ্গাও না' বলে প্রতিবাদ জানিয়ে বলা হচ্ছে-এমনিতে চার লাখ রোহিঙ্গা আমাদের কাঁধে ভর করে আছে তার ওপর আবার রোহিঙ্গা আসলে আমাদের বারটা বাজবে।
রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক ও উখিয়া বঙ্গমাতা মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, 'আমরা রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভূতিশীল। তবে কিছুতেই তাদের আর এখানে জায়গা দিতে পারি না। কেননা আমরা তাদের কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ। অর্থনৈতিক কারণও বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।' কঙ্বাজারের প্রবীণ সাংবাদিক ও দৈনিক কঙ্বাজার সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম বলেন, 'রোহিঙ্গাদের কোনো সময়ই আমরা ফিরিয়ে দিইনি। কিন্তু এখন আর আমরা তাদের স্থান দিতে অপারগ। কেননা আমাদের জনসংখ্যা বেড়ে গেছে। আর সেই তুলনায় জায়গা কমে গেছে। তদুপরি রোহিঙ্গাদের একবার স্থান দিলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সমপ্রদায় এবং এদেশে ঘাপটি মেরে থাকা জঙ্গীরা তাদের নিযে ফায়দা লুটে নেয়।'
কঙ্বাজার আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, 'সেই ১৯৭৮ সালেও আমরা তিন লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছিলাম। কিন্তু দিন এখন পাল্টে গেছে। রোহিঙ্গাদের নিয়ে এখন রাজনীতি ও ব্যবসা শুরু হয়েছে।'

No comments:

Post a Comment