Tuesday, February 22, 2011

শীর্ষ পদে আত্মস্বীকৃত দুর্নীতিবাজেরা!

দুর্নীতি করার কথা স্বীকার করে সত্য ও জবাবদিহিতা কমিশনে (ট্রুথ কমিশন) অর্থদণ্ড দেওয়া কর্মকর্তাদের যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর পদসহ শীর্ষস্থানীয় অন্তত পাঁচটি পদে বসানো হয়েছে। পদ্মা সেতুর মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এক-এগারোর পর ঘুষের টাকা লেনদেনের সময় হাতেনাতে আটক কর্মকর্তাকে।

রেলওয়ের মহাপরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এমন একজনকে, যাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি মামলা চলছে এবং আরও দুটি দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে।
গুরুত্বপূর্ণ পদে বিতর্কিত এসব কর্মকর্তাকে বসানোর কারণে প্রতিষ্ঠানের অন্য কর্মকর্তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন। এ কারণে সেখানে কাজের গতি কমে গেছে বলে মনে করছেন মন্ত্রণালয়েরই অনেক কর্মকর্তা। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ার পেছনে এই পরিস্থিতি অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রধান প্রকৌশলী: ট্রুথ কমিশনে স্বেচ্ছায় দুর্নীতির দায় স্বীকার করা মো. শাহাবুদ্দিনকে গত ২৭ জানুয়ারি সওজের প্রধান প্রকৌশলী করা হয়। তাঁকে গত ২৪ জানুয়ারি অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে প্রধান প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের করা তদন্তে শাহাবুদ্দিনসহ ৪১ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঢাকা বাইপাস সড়ক নির্মাণের কাজে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যায়। তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ারও সুপারিশ করেছিল তদন্ত কমিটি। কিন্তু এখন তাঁরা শাস্তির বদলে সুবিধাজনক উচ্চ পদে বদলি ও পদোন্নতি নিয়ে পুরো বিভাগে জেঁকে বসেছেন।
এর আগে বিভিন্ন সময়ে শাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে চারটি বিভাগীয় মামলা হলেও কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শুধু তিরস্কার করে তাঁকে বিভাগীয় মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত বিধিমালা (পিপিআর) অনুসরণ না করা এবং মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল প্লাজার অর্থ আত্মসাৎ ও অবৈধভাবে বিদেশ সফরের অভিযোগে বিভাগীয় মামলাগুলো করা হয় তাঁর বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, শাহাবুদ্দিন ২০০৯ সালের নভেম্বর মাসে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্বে থাকা অবস্থায় অবসর প্রস্তুতিকালীন ছুটিতে (এলপিআর) যান। সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরির মেয়াদ দুই বছর বাড়ালে তিনি পুনরায় যোগ দেন ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। তবে তাঁর মুক্তিযোদ্ধার সনদ অবৈধ দাবি করে হাইকোর্টে রিট করেন বাহারউদ্দিন নামের এক মুক্তিযোদ্ধা। ওই মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় শাহাবুদ্দিনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়।
শাহাবুদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, মামলার বিষয়ে তিনি খবর রাখেন না। সংসদীয় কমিটি তাঁর বিরুদ্ধে ভুল বুঝে কথা বলেছে। ট্রুথ কমিশনে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সত্যটা আমি জানি। কী বলেছি আর করেছি, আমি ভালো করেই জানি।’
যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, শাহাবুদ্দিনের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ফিরে আসেন তাঁর ব্যাচমেট মোস্তাক হোসেন, আরিফুর রহমান ও আবদুল অদুদ। এই তিনজনের মধ্যে মোস্তাক হোসেন ও আরিফুর রহমান ট্রুথ কমিশনে দুর্নীতির দায় স্বীকার করেছিলেন। এঁরা এখন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্বে আছেন। এই পদে নিয়মিত হওয়ার জন্য তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।
ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্পের পরিচালক: আরিফুর রহমানকে সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার প্রকল্প ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্পের পরিচালক করা হয়েছে। দায়িত্ব নিয়ে গত বছরের জানুয়ারি মাসে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়ার পরও প্রকল্পটির কাজ পুরোদমে শুরু হয়নি। সূত্র জানায়, দরপত্রের শর্তানুযায়ী চার লেন প্রকল্প অনুমোদনের পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের খানাখন্দ নির্বাচিত ঠিকাদারদেরই করার কথা। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে, ঠিকাদারেরা তা করবেন না। এ জন্য মহাসড়কের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মিরসরাই থেকে চট্টগ্রাম গেট পর্যন্ত অন্য প্রকল্পের মাধ্যমে করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এতে সরকারের বাড়তি ব্যয় হবে। সারা দেশে সড়ক মেরামতের জন্য এক হাজার ৪০০ কোটি টাকার একটি বিশেষ প্রকল্প শিগগিরই একনেকে অনুমোদন হবে বলে যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন জানিয়েছেন। এই প্রকল্পে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক মেরামতও রয়েছে।
এ বিষয়ে আরিফুর রহমান বলেন, সে সময় সওজের ঢাকায় কর্মরত সব কর্মকর্তাকে জোর করে ট্রুথ কমিশনে নেওয়া হয়েছে। ঢাকার বাইরে যারা আছেন, সে সময় তাঁরা ঢাকায় থাকলে কেউ বাদ যেতেন না। তিনি দাবি করেন, তাঁর পদোন্নতিতে সওজে কোনো অস্বস্তি নেই।
পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান: ট্রুথ কমিশনে দুর্নীতির দায় স্বীকার করা আরেক প্রকৌশলী মোস্তাক হোসেনকে করা হয়েছে সওজের পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান। সওজের কোন প্রকল্প নেওয়া হবে, কোনটি অগ্রাধিকার পাবে, কোনটিতে কত অর্থায়ন হবে, তা নির্ধারণ করা পরিকল্পনা বিভাগের কাজ।
মোস্তাক হোসেন দাবি করেন, তাঁদের ট্রুথ কমিশনে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে কিছু লোক খারাপ প্রচার চালাচ্ছে। তাঁরা দায়িত্ব নেওয়ায় সওজের কাজ দ্রুতগতিতে হচ্ছে। অন্য কর্মকর্তাদের মধ্যে কোনো অস্বস্তি নেই।
প্রশাসন ও সংস্থাপন বিভাগের প্রধান: স্বেচ্ছায় দুর্নীতির কথা স্বীকার করা আবদুল আজিম জোয়ার্দারকে বর্তমান সরকার পদোন্নতি দিয়ে সওজের প্রশাসন ও সংস্থাপন বিভাগের প্রধান করেছে। গত বছরের আগস্ট মাসে ঈদুল ফিতরের আগে একসঙ্গে সওজের ৪৪ জনকে বদলি করা হয়। সে সময় ‘বদলি বাণিজ্য’ আলোচনায় আসে। সম্প্রতি সওজের প্রকৌশলীদের সমিতির নির্বাচনে পরাজিত হন জোয়ার্দার। এই পরাজয়ের পেছনে সেই বদলি বাণিজ্যের একটা প্রভাব আছে বলে মন্তব্য করেন কয়েকজন প্রকৌশলী।
এসব বিষয়ে আবদুল আজিম জোয়ার্দারকে বক্তব্য জানার জন্য ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। শুধু বললেন, ‘আমি অফিসের কাজে বাইরে আছি।’ তিনি পরে তাঁর কার্যালয়ে গিয়ে দেখা করার পরামর্শ দেন।
আরও যাঁরা বড় দায়িত্ব পেয়েছেন: আরেক কর্মকর্তা সোহরাব উদ্দিন মিয়াকেও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর পদমর্যাদায় বেশ কয়েকটি সড়ক নির্মাণ ও মেরামতসংক্রান্ত প্রকল্পের পরিচালক করা হয়েছে।
সোহরাব উদ্দিন মিয়া জানান, তিনি অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্বে আছেন। ট্রুথ কমিশনে যাওয়ার বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
এভাবে গত দুই বছরে সওজের দুর্নীতিতে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে বসিয়েছে মন্ত্রণালয়।
সেতু বিভাগ: যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের আরেক বিভাগ সেতু বিভাগ। সরকারের সর্বাধিক অগ্রাধিকার ও বড় প্রকল্প পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের দায়িত্বে আছে সেতু বিভাগ। এই প্রকল্পের পরিচালক করা হয়েছে সওজের অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামকে। তিনি এক দিনের জন্য সওজের প্রধান প্রকৌশলীও হয়েছিলেন। অভিযোগ আছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ধানমন্ডির এক রেস্তোরাঁয় ঠিকাদারদের কাছ থেকে নেওয়া কমিশনের টাকা ভাগাভাগির সময় তাঁকেসহ আরও সাত প্রকৌশলীকে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা হাতেনাতে ধরে ফেলেন। পদ্মা সেতুর নকশার কাজ চূড়ান্ত না হওয়ার আগেই পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে চুক্তির পুরো প্রায় ১১৬ কোটি টাকা দিয়ে দেওয়ার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে।
রেলওয়ের মহাপরিচালক: এই পদে নিয়োগ নিয়েও বিতর্ক আছে। বর্তমান মহাপরিচালক টি এ চৌধুরীর বিরুদ্ধে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিল। তাঁকে মহাপরিচালক এবং শাহাবুদ্দিনকে সওজের প্রধান প্রকৌশলী না করার জন্য যোগাযোগমন্ত্রীর কাছে সুপারিশ পাঠিয়েছিল কমিটি। এর পরও টি এ চৌধুরীকে মহাপরিচালক করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে একটি গোয়েন্দা সংস্থা প্রতিবেদন দিয়েছে, তিনি রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হিসেবে ইঞ্জিন ও কোচের যন্ত্রপাতি কেনার ক্ষেত্রে একই প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে পাঁচ লাখ টাকার মালামাল ৫৩ লাখ টাকায় ক্রয় এবং নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ তদন্ত করছে দুদক। দুদক তাদের অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য গত ১২ জানুয়ারি সংস্থাপন মন্ত্রণলয়ে পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে।
টি এ চৌধুরীসহ রেলওয়ের পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রেলওয়ের চট্টগ্রামের সরঞ্জাম শাখার কেনাকাটায় দুর্নীতির তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দিয়েছিল দুদক। গত বছরের ৩০ মার্চ শাহবাগ থানায় এ বিষয়ে একটি মামলাও করে দুদক।
জানেত চাইলে টি এ চৌধুরী গতকাল প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, ‘এগুলো সব পুরোনো অভিযোগ। আমাকে এসব অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’
বিআরটিএ: যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের আরেক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) গুরুত্বপূর্ণ পদেও আত্মস্বীকৃত দুর্নীতিবাজেরা আসীন। ২০০৭ সালে মোটরযানের কর ও ফি বাবদ গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাতের দায়ে বরখাস্ত হওয়া সহকারী পরিচালক কাজী মাহবুবুর রহমান বর্তমান সরকারের সময়ে দিনাজপুর কার্যালয়ের প্রধান হন। এখন তিনি বিআরটিএর টাঙ্গাইল কার্যালয়ের প্রধান।
২০০৭ সালে বিআরটিএর এক তদন্ত কমিটি কাজী মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে এক কোটি ৮৪ লাখ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পায় এবং সেই টাকা তাঁর কাছ থেকে উদ্ধারেরও সুপারিশ করে। সে সময় দুর্নীতি দমন কমিশনে মামলাও হয় তাঁর বিরুদ্ধে। তিনি ট্রুথ কমিশনে দুর্নীতির কথা স্বীকার করেন।
এ ছাড়া ট্রুথ কমিশনে দুর্নীতির দায় স্বীকার করা সহকারী পরিচালক আমিনুল হক সরকারকে ঢাকার পরই গুরুত্বপূর্ণ নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এ রকম ৪১ জন কর্মকর্তা ট্রুথ কমিশনে হাজির হয়ে দুর্নীতির কথা স্বীকার করলেও এখন সরকারি চাকরি করছেন। তাঁদের অনেকে পদোন্নতি পেয়েছেন, অনেকে সুবিধাজনক স্থানে বদলিও হয়েছেন।
যোগাযোগ মন্ত্রণালয় তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা বললেও বাস্তব পরিস্থিতি উল্টো।
বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শেষ দিকে ট্রুথ কমিশন গঠন করা হলে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ৪৫২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী স্বেচ্ছায় গিয়ে নিজেদের দুর্নীতির কথা স্বীকার করেন এবং অনেকে অর্থদণ্ড দেন।
যোগাযোগ খাতে অব্যবস্থার মূলে: মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে কাউকেই পাত্তা দেন না। তাঁদের কোনো কাজে তাগিদ দেওয়ারও সাহস পান না মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। কারণ তাঁরা প্রকাশ্যে বলে বেড়ান, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ও যোগাযোগমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁদের সরাসরি যোগাযোগ। কেউ তাঁদের কিছু করতে পারবে না।
আরেক কর্মকর্তা বলেন, দেশের রাস্তাঘাট উন্নয়ন করবে কে? সওজের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রায় সবাই দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, পদোন্নতির বিষয়টি সুপেরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি) দেখে। জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতেই পদোন্নতি হয়। দুর্নীতিবাজদের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘নিয়মের বাইরে কাউকে পদোন্নতি দেওয়া হয় না।’
যোগাযোগ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, রেলওয়ের মহাপরিচালক এবং সওজের বর্তমান প্রধান প্রকৌশলীর ব্যাপারে তদন্ত করতে মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হয়েছিল। তারা তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছে। তবে প্রতিবেদন নিয়ে এখনো আলোচনা হয়নি।
প্রথম আলোয় ২০১০ সালের ৬ মার্চ প্রকাশিত এক কলামে সত্য ও জবাবদিহিতা কমিশনের সদস্য মনজুর রশীদ খান লিখেছিলেন, ‘...আমরা সর্বমোট ৪৫২ জনের শুনানি করেছিলাম। এর বেশির ভাগই এসেছেন সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা, ডেসা, দুটি গ্যাস কোম্পানি, সাব-রেজিস্ট্রার, ডাক বিভাগ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও বিআরটিএ থেকে। কয়েকটি সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা স্বীকার করেন, তাঁদের দপ্তরগুলোতে পিসি (পার্সেনটেজ) নামের ছদ্মাবরণে ঘুষ নেওয়ার প্রথাকে কেউ দুর্নীতি মনে করেন না।...অনেক সংস্থায় বিশেষ করে প্রকৌশল সংস্থাগুলোতে পিসি নেওয়াটা একটা সাধারণ ব্যাপার। অর্থাৎ তাঁরা একে দুর্নীতি মনে করেন না। যিনি নেন না, তিনি চাকরির সিঁড়ির ধাপে বেশি দূর এগোতে পারেন না।’
বিলুপ্ত ট্রুথ কমিশনের একটি সূত্র জানিয়েছে, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের যেসব কর্মকর্তা ট্রুথ কমিশনে গিয়েছিলেন, তাঁদের প্রায় সবাই অর্থদণ্ড দিয়েছেন। এঁদের মধ্যে কয়েকজন কয়েক কোটি টাকা করে জরিমানা দিয়েছেন। নির্দিষ্ট প্রকল্পে বা কাজে দুর্নীতির কারণে তাঁরা এই দণ্ড দিয়েছিলেন বলে সূত্র জানায়।

No comments:

Post a Comment