Tuesday, February 22, 2011

রক্তাক্ত লিবিয়ায় আক্রান্ত শতাধিক বাংলাদেশি by মেহেদী হাসান

মুয়াম্মার গাদ্দাফির শাসনামলের অবসানের দাবিতে চলা জনবিক্ষোভে লিবিয়ার পরিস্থিতি এখন অগি্নগর্ভ। গাদ্দাফির অনুগত লোকজন গুলি চালিয়ে সরকারবিরোধীদের হত্যা করছে। চরম অরাজক অবস্থার মধ্যে লিবিয়ায় কর্মরত শতাধিক বাংলাদেশিসহ বেশ কয়েকটি দেশের তিন শর মতো নাগরিক আক্রান্ত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

লিবিয়ায় বেনগাজিতে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের অনেকে 'জিম্মি' হওয়ার কথা গতকাল টেলিফোনে দেশে তাদের স্বজনদের জানায়। অবশ্য ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাস এর সত্যতা নাকচ করেছে। দূতাবাস সূত্র অবশ্য স্বীকার করেছে, লিবিয়ার পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। খোলা তলোয়ার, ছুরি নিয়ে রাস্তায় নেমেছে বিক্ষোভকারীরা। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বাংলাদেশিদের উদ্ধার এবং প্রয়োজনে দেশে ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা যাচাই করা হচ্ছে।
সর্বশেষ প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, গতকাল সোমবার জঙ্গিবিমান থেকেও বিক্ষোভকারীদের ওপর বোমা হামলা চালানো হয়। গাদ্দাফির সমর্থকরাও ভবনের ছাদ থেকে চোরাগোপ্তা হামলা চালাচ্ছে। তবে বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালাতে গাদ্দাফি সরকারের দেওয়া নির্দেশ অমান্য করে বিমানবাহিনীর কিছু কর্মকর্তা দুটি জঙ্গিবিমান নিয়ে মালটায় পালিয়ে যান। রাত পৌনে ২টার দিকে জানা যায়, ত্রিপোলিতে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে।
এদিকে ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে গাদ্দাফি পালিয়ে ভেনিজুয়েলার পথে রয়েছেন বলেও মনে করছেন
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হেগ। তবে ভেনিজুয়েলা কর্তৃপক্ষ খবরটি অস্বীকার করেছে। লিবিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, গাদ্দাফি দেশেই আছেন। বিক্ষোভকারীদের ওপর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের প্রতিবাদে ইতিমধ্যে লিবিয়ার বিচারমন্ত্রীসহ বেশ কিছু ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন। জাতিসংঘে নিযুক্ত লিবিয়ার উপরাষ্ট্রদূত ইব্রাহিম দাব্বাসি পদত্যাগ করে গাদ্দাফিকেও পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন।
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানায়, লিবিয়ায় গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে চলা সংঘর্ষে মৃতের সংখ্যা ২৩৩ ছাড়িয়ে গেছে। চীন, ভারত ও আরব লিগে লিবিয়ার শীর্ষস্থানীয় তিনজন কূটনীতিক মুয়াম্মার গাদ্দাফির প্রতি অনাস্থা জানিয়ে পদত্যাগ করে অন্য কূটনীতিকদেরও পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁদের একজন আল জাজিরাকে বলেছেন, গাদ্দাফি হয়তো লিবিয়া ছেড়ে পালিয়েছেন এবং তাঁর ছেলেদের মধ্যে কর্তৃত্ব নিয়ে বন্দুকযুদ্ধ চলছে। গাদ্দাফিপুত্র সাইফ আল ইসলাম গতকাল রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে সতর্ক করে বলেন, বিক্ষোভকারীদের কারণে তাঁর বাবার শাসনের অবসান হলে গোটা দেশে গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়বে এবং এর মাধ্যমে লিবিয়া ধ্বংস হবে। সরকারের সংস্কার প্রস্তাব না মানলে লিবিয়াজুড়ে রক্তের নদী বয়ে যাবে বলেও হুমকি দেন তিনি।
ক্ষমতায় টিকে থাকতে নির্বিচার শক্তি প্রয়োগের নীতি নিয়েছেন মুয়াম্মার গাদ্দাফি। অন্যদিকে একনায়কতান্ত্রিক শাসনের অবসানের জন্য মরিয়া হয়ে রাস্তায় বিক্ষোভ করছে গাদ্দাফিবিরোধী পক্ষ। সম্প্রতি মিসরে গণবিক্ষোভের পর হোসনি মুবারকের ক্ষমতা ছাড়ার ঘোষণায় লিবিয়ার বিক্ষোভকারীরাও উৎসাহিত হয়েছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। তাদের একটি অংশ মানবঢাল হিসেবে ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের জিম্মি করছে বলে বিভিন্ন বার্তা সংস্থার খবরে জানা গেছে। গতকাল সোমবার সিএনএন, ইয়োনহাপ নিউজ এজেন্সিসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে লিবিয়ায় পরিচালিত একটি কোরীয় প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ১৫ বাংলাদেশি ও তিন কোরীয় শ্রমিকের আহত হওয়ার খবর প্রচার করে। আহত বাংলাদেশিদের মধ্যে দুজন ছুরিকাহত হয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন বলে জানায় সংবাদ সংস্থা ইয়োনহাপ।
দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা বাইক জু হাইয়ুনের উদ্ধৃতি দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, গত রবিবার রাত ১১টার দিকে ত্রিপোলির পশ্চিমে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৫০০ লিবীয় বিক্ষোভকারী ভাঙচুর করে চলে যায়। কয়েক ঘণ্টা পর তারা আবার ফিরে এলে প্রতিষ্ঠানটির শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। ওই প্রতিষ্ঠানে এক হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি ও প্রায় ৫০ জন কোরীয় নাগরিক কর্মরত।
বাংলাদেশের অনলাইন সংবাদ সংস্থা বিডিনিউজ গতকাল রাতে লিবিয়ায় শতাধিক বাংলাদেশিকে জিম্মি করার খবর প্রচার করে। তাদের মধ্যে ১৫ জন আহত হয়েছে বলে জানানো হয়। সংবাদ সংস্থাটি জানায়, লিবিয়ায় দমন-পীড়নের মুখে সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা তিন শর বেশি বিদেশিকে জিম্মি করেছে, যার মধ্যে শতাধিক বাংলাদেশি রয়েছে। লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় শহর বেনগাজি থেকে প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার পূর্বে দারনা সিটিতে কয়েক দিন ধরে তারা আটক রয়েছে বলে একজন বাংলাদেশি জিম্মি জানিয়েছেন। জিম্মিরা ধারণা করছে, নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতেই বিদেশিদের আটক করা হয়েছে।
দারনা সিটিতে জিম্মিদের অন্যতম মানিকগঞ্জ জেলার শফিউদ্দিন বিশ্বাস গতকাল দুপুরে টেলিফোনে বিডিনিউজকে বলেন, 'গত শুক্রবার বিকেলে ৩০-৪০ জন সশস্ত্র ব্যক্তি আমাদের ক্যাম্প অফিস থেকে জিম্মি করে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে একটি মসজিদে নিয়ে যায়। পরের দিন স্থান পরিবর্তন করে পাশের দুটি কমিউনিটি সেন্টারে আমাদের আনা হয়েছে।' আরেক জিম্মি ফরিদপুরের আবদুল আজিজ টেলিফোনে বলেন, 'আমাদের আটকে রাখা হয়েছে। প্রথম কয়েক দিন সারা দিন দুটি করে রুটি খেতে দেওয়া হয়েছে। সামান্য হলেও পানি দিয়েছিল। কিন্তু রবিবার থেকে পানি পাচ্ছি না। এখন পর্যন্ত (বাংলাদেশ সময় গতকাল দুপুর ১২টা) কোনো খাবার দেওয়া হয়নি। আমাদের কাছে সামান্য পানি আছে, সেটাই খাচ্ছি।'
আবদুল আজিজ আরো বলেন, 'আমাদের ফোন করতে দিচ্ছে না। তবে ফোন এলে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা বলতে দিচ্ছে। তারা এখনো কিছু দাবি করেনি। শুধু বলছে, গাদ্দাফি ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে, এখন আমাদের শাসন চলবে।'
লিবিয়ায় বাংলাদেশিদের অবস্থা জানতে গতকাল বাংলাদেশ সময় বিকেল পৌনে ৫টার দিকে কালের কণ্ঠ কার্যালয় থেকে টেলিফোনে ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। দূতাবাস কর্তৃপক্ষ জানায়, লিবিয়ায় পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তিন দিন আগে তারা নিয়ন্ত্রণকক্ষ খুলেছে। ওই নিয়ন্ত্রণকক্ষে দায়িত্বরত প্রশাসনিক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানান, দিনরাত সব সময়ই বাংলাদেশিদের সঙ্গে দূতাবাসের যোগাযোগ হচ্ছে। জিম্মি করা বলতে যা বোঝায় সে ধরনের কোনো ঘটনার তথ্য দূতাবাসের জানা নেই। তবে কয়েকজন শ্রমিক অসুবিধার মধ্যে আছে। লিবিয়ায় আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে একশ্রেণীর সুবিধাবাদী লুটপাট চালাচ্ছে।
বাংলাদেশি শ্রমিকরা কী ধরনের অসুবিধার মধ্যে আছেন, জানতে চাইলে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশিরা কাজ করেন_এমন একটি প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভকারীরা হামলা চালিয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ পালিয়েছে। তবে বিক্ষোভকারীদের হামলায় কোনো বাংলাদেশির মারাত্মক আহত হওয়ার খবর দূতাবাসের জানা নেই।
লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, শুধু বাংলাদেশি নয়, সেখানে ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড ও কোরিয়ার নাগরিকরাও হামলার শিকার হয়েছে। পরিস্থিতি এখন কারো নিয়ন্ত্রণে নেই। রাস্তায় খোলা তলোয়ার ও ছুরি নিয়ে নেমেছে বিক্ষোভকারীরা। সর্বত্র থমথমে পরিস্থিতি রয়েছে। দেশে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। টেলিফোন যোগাযোগও সীমিত করা হয়েছে। এর পরও বাংলাদেশ দূতাবাস জরুরি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খুলে বাংলাদেশিদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
দূতাবাস সূত্র আরো জানায়, বিক্ষোভে উত্তাল বেনগাজিতে প্রায় ছয় হাজার এবং পুরো লিবিয়ায় প্রায় ৪০ হাজার বাংলাদেশি রয়েছে। তাদের নিরাপত্তা নিয়ে বাংলাদেশ অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে বিক্ষোভকারীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকাগুলোয় বাংলাদেশিদের ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, জানতে চাইলে দূতাবাস সূত্র জানায়, পরিস্থিতি অনুযায়ী সব সম্ভাবনা যাচাই করা হবে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা চলছে। সূত্র আরো জানায়, বাংলাদেশ এখানে একা কিছু করবে না। লিবিয়ায় অন্য দেশগুলোর দূতাবাসগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে পর্যালোচনা করা হচ্ছে দেশটির অভিবাসনবিষয়ক আইনও। প্রয়োজনে সবাইকে জরুরি ভিত্তিতে উদ্ধারের চিন্তাভাবনাও করা হবে।
বাংলাদেশিদের উদ্ধার করে লিবিয়ায় তুলনামূলক নিরাপদ কোনো স্থানে রাখা হবে নাকি দেশে ফেরত পাঠানো হবে_এ প্রশ্ন করলে দূতাবাস সূত্র জানায়, বিষয়টি পরিস্থিতি এবং ওই বাংলাদেশিদের প্রত্যাশার ওপর নির্ভর করবে। লিবিয়ায় চলমান পরিস্থিতির কোনো প্রভাব বাংলাদেশ দূতাবাসের ওপর পড়েছে কি না_এ প্রশ্নে সূত্রটি জানায়, লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস এলাকার পরিস্থিতি এখনো বেনগাজি বা অন্য এলাকাগুলোর মতো হয়নি। তবে পরিস্থিতি ভয়াবহ অনিশ্চয়তার মধ্যে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।
গণবিক্ষোভের মুখে গত ১৪ জানুয়ারি তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট বেন আলীর পলায়ন এবং গত ১১ ফেব্রুয়ারি মিসরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারকের ৩০ বছরের শাসনামলের অবসানের পর লিবিয়াসহ বিভিন্ন আরব দেশে রাষ্ট্রক্ষমতার পরিবর্তন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে বিক্ষোভ চলছে। বর্তমানে বিক্ষোভে উত্তাল লিবিয়ায় প্রেসিডেন্ট মুয়াম্মার গাদ্দাফি চার দশক ধরে ক্ষমতাসীন। ১৯৬৯ সালে তরুণ কয়েকজন সেনা কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে লিবিয়ার রাষ্ট্রক্ষমতার দখল নেন গাদ্দাফি। তখন থেকেই দেশটি তাঁর শাসনে চলছে। করুণ পরিণতির আশঙ্কায় গাদ্দাফি দৃশ্যত মরণ কামড় দিয়ে এখন ক্ষমতা ধরে রাখতে চাইছেন। অন্যদিকে তাঁকে উৎখাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিক্ষোভকারীরা। ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক ও টুইটারে সংগঠিত হয়ে গত বৃহস্পতিবারকে 'ক্ষোভের দিন' নাম দিয়ে সরকার পতনের দাবিতে বিক্ষোভ করে কয়েক হাজার মানুষ। বিক্ষোভকারীদের ওপর গাদ্দাফির অনুগত বাহিনীর হামলা ও গুলিতে হতাহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
ত্রিপোলির বাসিন্দারা এএফপিকে জানিয়েছে, রাজধানীর রাস্তায় রাস্তায় গতকাল সকালে তুমুল বন্দুকযুদ্ধ হয়েছে। এরই মধ্যে চলছে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ।
নিউ ইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মাত্র চার দিনে (১৭ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি) লিবিয়ায় অন্তত ২৩৩ জন নিহত হয়েছে। সংস্থাটির মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা বিভাগের পরিচালক সারাহ লিহ হুইটসন বলেছেন, লিবিয়ায় মানবিক বিপর্যয় ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। দেশটি (লিবিয়া) তথ্য আড়াল করার চেষ্টা করলেও বর্বর হত্যাকাণ্ড আড়াল করতে পারবে না।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, চীন ও ভারতে নিযুক্ত লিবিয়ার জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক এবং আরব লিগে নিযুক্ত লিবিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি গাদ্দাফি প্রশাসনের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে পদত্যাগ করেছেন। বেইজিংয়ে লিবিয়া দূতাবাসের দ্বিতীয় সচিব হোসেইন সাদিক আল মুস্তারি পদত্যাগের পর গতকাল কাতারভিত্তিক আল জাজিরা টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অন্য কূটনীতিকদেরও পদত্যাগের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, 'গাদ্দাফি হয়তো ইতিমধ্যে লিবিয়া ছেড়েছেন এবং তাঁর ছেলেদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ চলছে।' আরব লিগে নিযুক্ত লিবিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি আবদেল মোনেম আল-হোনি পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, বিদ্রোহে যোগ দিতেই তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
গাদ্দাফির ছেলে সাইফ আল-ইসলাম গতকাল রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে দেশবাসীকে সতর্ক করে বলেন, বিক্ষোভের পেছনে বিদেশি ষড়যন্ত্র রয়েছে। সরকারের দেওয়া সংস্কার প্রস্তাব আগ্রাহ্য করা হলে রক্তের বন্যা বয়ে যাবে। এ পর্যন্ত মাত্র ৮৪ জন নিহত হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, 'সরকারের দেওয়া সংস্কার প্রস্তাবে রাজি না হলে আমরা কেবল ৮৪ জনের জন্য শোক পালন করব না। এ সংখ্যা হাজার ছাড়াবে। লিবিয়াজুড়ে রক্তের নদী বইবে।'
সংঘাত বন্ধের আহ্বান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের : ফ্রান্স, জার্মানি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ফিলিপাইন অবিলম্বে সংঘাত বন্ধের জন্য লিবিয়ার সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন এক বিবৃতিতে উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্রগুলোর সরকারকে শক্তিপ্রয়োগ বন্ধ ও জনগণের মৌলিক চাহিদাগুলোর প্রতি সম্মান দেখানোর আহ্বান জানান।

No comments:

Post a Comment