Tuesday, February 22, 2011

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকায় ঝুঁকিতে অর্থনীতি

পুঁজিবাজারে ধস, আবাসন শিল্পে স্থবিরতা ও অনুৎপাদনশীল খাতে ঋণের উচ্চ প্রবৃদ্ধির কারণে ব্যাংক খাতের আর্থিক ভিত্তি নড়বড়ে। গুটিকয়েক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আগ্রাসী কার্যক্রম পুরো আর্থিক খাতকেই বিপর্যয়ের মুখে দাঁড় করিয়েছে। বাংলাদেশের আর্থিক খাতের বর্তমান পরিস্থিতিকে ১৯৯৭ সালের এশীয় আর্থিক সংকটের প্রারম্ভিক অবস্থার সঙ্গে তুলনা করেছেন কোনো কোনো বিশ্লেষক।
তাঁদের মতে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো পুঁজিবাজার, আবাসন খাত ও অনুৎপাদনশীল খাতে অতিমাত্রায় ঋণ সম্প্রসারণের কারণে এশিয়ার অনেক দেশই ওই সময় চরম সংকটে পড়েছিল। জিডিপির প্রয়োজনের তুলনায় বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বেশি : ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ ব্যাপক বেড়েছে, যা জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রয়োজনীয় ঋণ সরবরাহের তুলনায় অনেক বেশি। এ বিষয়ে খোদ মুদ্রানীতিতে বলা হয়েছে, 'অর্থবছরের প্রথমার্ধজুড়েই (২০১০ সালের জুন থেকে ডিসেম্বর) অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ব্যাপক। বিদায়ী ২০১০ সালের জুন থেকে নভেম্বর_এই পাঁচ মাসের ব্যবধানে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বেড়েছে ২৪ দশমিক ২ শতাংশ। বেসরকারি খাতের এই ঋণের প্রবাহ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের তুলনায় অনেক বেশিই ছিল।' অপরদিকে এ সময়ে ব্যাংকগুলোর আমানত সংগ্রহের প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ২১ শতাংশ এবং ঋণ বিতরণের প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ২৮ শতাংশ।
বেসরকারি খাতের এই বিপুল ঋণ প্রবৃদ্ধির জন্য
সরকারের সিদ্ধান্তকেই দায়ী করেছেন একাধিক ব্যাংক বিশ্লেষক। বেসরকারি একটি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কালের কণ্ঠকে জানান, বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বৃদ্ধিতে সবচেয়ে সহায়ক ছিল কিছু খাতে ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ১৩ শতাংশ
নির্ধারণ করে দেওয়া। যেখানে সরকার গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে পারছে না, সেখানে শিল্প ও এসএমই খাতে ঋণের সর্বোচ্চ সুদ হার বেঁধে দেওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ ছিল না।
তিনি বলেন, এতে সমস্যা হয়েছে ত্রিমুখী। প্রথমত, ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার বেঁধে দেওয়ায় ব্যাংকগুলো বাধ্য হয়েছে আমানতের বিপরীতে ঋণের সুদহার কমাতে। দ্বিতীয়ত, ব্যাংকগুলো মুনাফা ধরে রাখতে কনজ্যুমার ক্রেডিটে বেশি অর্থায়ন করেছে। তৃতীয়ত, চড়া দ্রব্যমূল্যের বাজারে ৫ থেকে ৬ শতাংশ সুদহারে আমানতকারীরা নিরুৎসাহিত হয়ে অন্য লাভজনক খাতে বিনিয়োগের কথা ভাবতে বাধ্য হয়েছেন। লাভজনক খাত ছিল সঞ্চয়পত্র। সেখানেও সুদহার কমানো এবং এর আয়ের ওপর করারোপ করায় সঞ্চয়পত্র ভেঙে পুঁজিবাজারের দিকে ঝুঁকেছে অসংখ্য বিনিয়োগকারী।
সরকারি ব্যাংকের একজন প্রধান নির্বাহী কালের কণ্ঠকে বলেন, সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো ও করারোপ সরকারের অন্যতম একটি ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। কারণ এতে বিনিয়োগকারীরা সঞ্চয়পত্র ভেঙে পুঁজিবাজারের দিকে ধাবিত হয়েছেন। যদি সঞ্চয়পত্রে সরকারের ভর্তুকি দিতেই হতো তাহলে এর পরিমাণ আর কত হতো! নিশ্চয়ই বর্তমানে পুঁজিবাজারে ধসের চেয়ে ভয়াবহ হতো না। গত সপ্তাহে অর্থমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এক ঘরোয়া বৈঠকেও সিদ্ধান্তটির সমালোচনা করেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী।
বিশ্লেষকদের মতে, প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ বা রেমিট্যান্স বিনিয়োগের কোনো দিকনির্দেশনা না থাকায় প্রান্তিক মানুষ তা ব্যয় করেছে জমি কেনাসহ নানা অনুৎপাদনশীল খাতে, যা মূল্যস্ফীতিকে ত্বরান্বিত করেছে। মূল্যস্ফীতির প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি এবং তা প্রবৃদ্ধিকে গিলে ফেলে। সুতরাং সরকারের উচিত ছিল, ব্যাংক আমানত ও সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানোর পরিবর্তে কিছুটা বাড়িয়ে দেওয়া। তাতে রেমিট্যান্সের বিপুল পরিমাণ অর্থ হয়তো ব্যাংক খাতেই থেকে যেত। পরবর্তী সময়ে কোনো উৎপাদনশীল খাতে তা বিনিয়োগ করা যেত বলে মনে করেন ব্যাংকের একজন প্রধান নির্বাহী।
পুঁজিবাজারে ধসের কারণে ঝুঁকিতে ব্যাংকিং খাত : বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ বর্তমানে প্রায় ১২ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। এ ছাড়াও ২০১০ সালে ব্যাংকগুলো নতুন করে ঋণ বিতরণ করেছে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে অর্থায়নে ৩৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি, শিল্পায়নে প্রায় ২৮, এসএমই ও কৃষিতে প্রায় ১০ শতাংশ ঋণের প্রবৃদ্ধি বিবেচনায় এ খাতগুলোতে মোট নতুন ঋণের প্রায় ৬০ শতাংশ গেছে। বাকি প্রায় ৪০ শতাংশ (প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা) গেছে সরাসরি উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত নয় এমন খাতগুলোতে। এ ছাড়াও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ভোক্তাপণ্য কেনার জন্য দেওয়া ঋণের পরিমাণ সাড়ে ১২০০ কোটি টাকা। অর্থনীতিবিদদের ভাষায় যেসব খাত অনুৎপাদনশীল তার মধ্যে গত বছর পুঁজিবাজার ছিল শীর্ষে। অনুৎপাদনশীল খাতের ঋণের সিংহভাগই পুঁজিবাজারে গেছে বলে ধারণা করছেন তাঁরা। এরই মধ্যে কিছু ব্যাংকের আর্থিক সংকট বেশ প্রকট হয়ে উঠেছে। এ ব্যাংকগুলো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ব্যাপকভাবে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছে। কেউ কেউ আন্তঃব্যাংক কলমানি মার্কেট থেকে টাকা ধার করেও তাদের মার্চেন্ট ব্যাংক শাখায় দিয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রমাণ পেয়েছে। পুঁজিবাজারে ধসের কারণে এসব ব্যাংকের বড় অঙ্কের বিনিয়োগ আটকে পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ে বিনিয়োগ উঠে না আসায় ব্যাংকগুলোর দায়-সম্পদ ব্যবস্থাপনায় অসঙ্গতি দেখা দিয়েছে। ফলে বর্তমানে কলমানি থেকে প্রতিদিন এসব ব্যাংক বেশ বড় অঙ্কের টাকা ধার করে চলেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, 'পুঁজিবাজারে ধস অব্যাহত থাকলে কয়েকটি ব্যাংকের বড় অঙ্কের খেলাপি ঋণ সৃষ্টি হতে পারে, যা সমগ্র ব্যাংকিং খাতের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি সৃষ্টি করবে। তাই আমরা ব্যাংকগুলোকে ঋণ আমানত অনুপাত কমিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছি।'
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এস কে সুর চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা ব্যাংকগুলোকে সুরক্ষিত রাখতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এখন ব্যাংকগুলোর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ মোটামুটি গ্রহণযোগ্য মাত্রায় চলে এসেছে।'
অপরদিকে তুলনামূলক অরক্ষিত খাত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকটির মুনাফার অধিকাংশই আসে পুঁজিবাজার থেকে। এদের অনেকেরই পুঁজিবাজারে বড় ধরনের মূলধন আটকে গেছে। বাজারে মন্দাবস্থা এবং ক্রেতা না থাকার কারণে এসব প্রতিষ্ঠান ট্রিগার সেলেও যেতে পারছে না। এ ছাড়া এ বিষয়ে এসইসির কঠোর নির্দেশনা রয়েছে।
বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল কম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের চেয়াম্যান ও লঙ্কা বাংলা ফিন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজউদ্দিন সরকার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বর্তমানে ছয়টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মার্চেন্ট ব্যাংকিং উইং রয়েছে। এদের পুঁজিবাজারে শেয়ার ক্রয়ের বিপরীতে দেওয়া ঋণের পরিমাণ প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। ২৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব বিনিয়োগ রয়েছে প্রায় সাড়ে ৭০০ কোটি টাকা। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পুঁজিবাজারে আনুমানিক বিনিয়োগ প্রায় তিন হাজার ৩০০ কোটি টাকার মতো। পুঁজিবাজারে ধসের কারণে গ্রাহকদের দেওয়া এই বিপুল পরিমাণ ঋণের একটি বড় অংশ আগামী প্রান্তিকে খেলাপি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে মার্কেটের এ অবস্থায় আমরা ট্রিগার সেলে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'
সার্বিক পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজারে ধসের কারণে ব্যাংকিং খাতের প্রায় বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আগামী দুই প্রান্তিক অর্থাৎ মার্চ ও জুন প্রান্তিকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক বিবরণীতে এর প্রতিফলন ঘটতে পারে।
আবাসন শিল্পে মন্দাবস্থা ও বিপুল অর্থ খেলাপি হওয়ার আশঙ্কা : গত কয়েক বছর ধরে জমির মূল্য বেড়েছে লাগামহীনভাবে। এজন্য ব্যাংকগুলোর সহজ শর্তে অর্থায়নই ছিল দায়ী। সহজে অর্থ পাওয়ার সুবাদে রাজধানীসহ সারা দেশে হাউজিং ব্যবসার প্রসার বেড়েছে। জমির দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। এ অবস্থায় তৈরি হয়েছে বিপুল উদ্যোক্তা। বিনিয়োগও হয়েছে প্রচুর। ফলে ব্যাংকের অর্থায়নও রয়েছে অনেক।
রিয়্যাল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)_এর তথ্য অনুযায়ী, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে আবাসন শিল্পমালিকদের প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা এবং ফ্ল্যাট ক্রেতাদের প্রায় ১২০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ আটকে পড়েছে। রিহ্যাবের সদস্য নয় এমন উদ্যোক্তা ও ক্রেতাদের সমপরিমাণ অর্থ বিবেচনা করলে প্রায় আট হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ আটকে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অনেক ডেভেলপার চরম আর্থিক সংকটে নিমজ্জিত হয়েছেন। প্রকল্প সম্পূর্ণ করতে পারছেন না অনেকে। আবার অনেকে সম্পূর্ণ করেও প্রকল্প হস্তান্তর করতে পারছেন না গ্যাস-বিদ্যুৎ না থাকার কারণে। এই অবস্থা চলতে থাকলে অনেক ডেভেলপারই দেউলিয়া হয়ে যাবেন বলে রিহ্যাব সূত্র আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এশীয় মন্দার সময়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো পুঁজিবাজার এবং আবাসন খাতে অনেক বেশি বিনিয়োগ করেছিল। তবে আমরা এখনো সে পর্যায়ে যাইনি। কিছু ব্যাংক ১০ শতাংশের বেশি বিনিয়োগ করেছে। তারা অন্যান্য খাত থেকে ডিভিডেন্ট দিচ্ছে। পুঁজিবাজারে খেলাপি হলে তারা সেখান থেকে প্রভিশন করবে।'
তিনি আরো বলেন, 'বাংলাদেশের আর্থিক খাত মন্দাকবলিত হতে পারে বলে এখনো আমি মনে করি না। পুঁজিবাজারে ধস নেমেছে এটাও বলা ঠিক হবে না। কারণ এটাকে আবার কার্যকর করার প্রচেষ্টা চলছে।'
তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে নজর বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন ড. সালেহউদ্দিন। তিনি বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করে থাকে। তারা পুঁজিবাজারে স্বল্প মেয়াদি বিনিয়োগের দিকে যেন অতিমাত্রায় ধাবিত না হয় সেদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নজর দেওয়া উচিত। এ ছাড়াও এ প্রতিষ্ঠানগুলোর মূলধন পর্যাপ্ততা বাড়ানো জরুরি বলে মনে করেন তিনি। তবে মন্দাবস্থা যাতে সৃষ্টি না হয় সেজন্য সরকারকে সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্ট এ অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, সরকারকে ম্যাক্রো-ইকোনমির দিকে আরো বেশি নজর দিতে হবে। জ্বালানিসহ অর্থনৈতিক বিষয়গুলোর প্রতি জোর দিতে হবে। উৎপাদনশীল খাতে ঋণের প্রবাহ নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
এশিয়ান মন্দার কারণ পর্যবেক্ষণ করে একটি প্রতিবেদন লেখেন ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ইউএন-ডেসার সিনিয়র ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্স অফিসার ড. আনিছ চৌধুরী। তাঁর পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ১৯৯০-এর দিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বেড়ে যায়, যা তাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশিই ছিল। থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার ব্যাংকগুলো আবাসন খাতেও প্রচুর বিনিয়োগ করে। এক পর্যায়ে ব্যাংকের মুনাফা কমতে শুরু করে এবং কিছু কিছু ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে পড়ে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো পুঁজিবাজারেও অধিক হারে বিনিয়োগ করে। ফলে পুঁজিবাজারে অতিমূল্যায়নের ঘটনা ঘটে। একসময় পুঁজিবাজারে ধস নামে এবং ব্যাংকগুলো বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়ে। বাংলাদেশের আর্থিক খাতেও এসব লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেন এ বিশ্লেষক। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দীন আহমেদের কণ্ঠেও উদ্বেগের সুর। আর্থিক খাত ও পুঁজিবাজারে সাম্প্রতিক বাব্ল বা বিস্ফোরণোন্মুখ পরিস্থিতিকে অর্থনৈতিক সংকটের পূর্বাভাস হিসেবে দেখছেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ মুদ্রানীতির পর্যালোচনায় ড. আনিছ চৌধুরী লিখেছেন, অতিমূল্যায়িত পুঁজিবাজারে ধস সবার জন্যই বেদনাদায়ক। প্রাইস কারেকশন আরো বিলম্বিত হওয়ার কারণে যে ধস নামবে তা আরো বেদনাদায়ক হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত, পুুঁজিবাজারের মতো অনুৎপাদনশীল খাতের ঋণ সম্প্রসারণ বন্ধ করা। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ বাজারের স্থায়িত্ব ও উচ্চ প্রবৃদ্ধির জন্য পুঁজিবাজার ও রিয়েল এস্টেট সেক্টর সঠিকভাবে মূল্যায়িত হওয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সভাপতি কে মাহমুদ সাত্তার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আর্থিক খাতে মন্দা হতে পারে দুটি কারণে। এগুলো হচ্ছে_জ্বালানি সংকট এবং জমির অতিমূল্য। জমির দাম সাংঘাতিক বেড়েছে, এখানে কারেকশন হতে পারে।'
বাংলাদেশ ব্যাংক গত মে মাসে রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এ অবস্থায় এ খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি আর বাড়বে না। এখন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হওয়ার ফলে চলতি ঋণগুলো খেলাপি হতে পারে। তবে বড় ধরনের করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেওয়া ঋণখেলাপি হওয়ার আশঙ্কা নেই। কারণ তাদের অন্যান্য খাতের লভ্যাংশ থেকে এ ঋণ ফেরত আসবে। সমস্যা হবে ছোট উদ্যোক্তাদের নিয়ে।
মন্দা ঠেকাতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি বাড়ানোর পক্ষে মত দেন মাহমুদ সাত্তার। অর্থনৈতিক গতি বাড়াতে সরকার বিদ্যুতের জোগান বাড়াতে সক্ষম হলেও গ্যাসের জোগান বাড়ানো নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

No comments:

Post a Comment