Sunday, May 06, 2012

রামুতে আড়াই শ বছরের পুরাকীর্তি হুমকির মুখে

কক্সবাজারের রামু উপজেলা সদর থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি। সড়কপথে তিন কিলোমিটার এগোলেই চোখে পড়ে রাস্তার পাশ ঘেঁষে প্রায় ৩০০ ফুট উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত একটি জাদি (বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্যাগোডা)। এর নাম চাতোপা জাদি। আনুমানিক ২৫০ বছরের স্মৃতিবিজড়িত এ জাদিটির উচ্চতাও প্রায় ১০০ ফুট।

পাহাড়টির চারপাশে প্রাকৃতিক সৌন্দের্যের ছড়াছড়ি। উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থানের কারণে অনেক দূর থেকে এ জাদির সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। পাশাপাশি ওই জাদির পাশে দাঁড়ালে দেখা মেলে ২০ কিলোমিটার দূরের কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতও।
স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, সব মিলিয়ে জাদিটি এক সময় দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনায় মুখরিত হয়ে থাকত। এলাকাবাসীর কাছেও সেটি ছিল আকর্ষণীয় স্থান। অথচ এখন পর্যটক তো দূরের কথা, স্থানীয় বাসিন্দারাও পারতপক্ষে ওদিকে যায় না। এর কারণ, অযত্নে-অবহেলায় থাকতে থাকতে এ পুরাকীর্তি এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। পাহাড়ধসের কারণে বর্তমানে ধ্বংসের প্রহর গুনছে প্রাচীন এ স্থাপনাটি।
সরেজমিনে দেখা যায়, পাহাড়টির চারপাশে দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলীতে তৈরি সীমানাপ্রাচীরটি বর্তমানে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সঞ্চৃতিচিহ্ন হয়ে এখনো তার কিছু কিছু অবশিষ্ট রয়েছে। পাহাড়ের উত্তর পাশের মাটি ধসে পড়ার কারণে জাদিটি বর্তমানে ভেঙে পড়ার উপক্রম। সীমানাপ্রাচীর না থাকায় ৫০ ফুটেরও বেশি পাহাড় ধসে জাদিটির গোড়া ছুঁয়েছে। আবার উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত ওই জাদিতে যাওয়ার জন্য পরিকল্পিত কোনো সিঁড়িও নেই।
স্থানীয় বাসিন্দাদের আশঙ্কা, পাহাড়ধস ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে যেকোনো সময়ে বিশালাকারের এ জাদিটি ভেঙে পড়তে পারে। আর তা পাহাড়ের নিচে অবস্থিত বাড়িঘরের ওপর পড়লে ঘটতে পারে প্রাণহানি।
স্থানীয় বৌদ্ধ ভিক্ষু উচেকা চারা মহাথের জানান, এ জাদির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রতিষ্ঠার সময়কাল নিয়ে মতের ভিন্নতা রয়েছে। তবে ধারণা করা হয়, এটি প্রায় ২৫০ বছরের পুরোনো। সর্বশেষ ১৯৯২ সালে জাদিটি সংস্কার করা হয় এবং ২০১১ সালে রং লাগানো হয়। কিন্তু পাহাড়ধসের কারণে প্রাচীন এই স্থাপনাটির অস্তিত্ব বর্তমানে হুমকির মুখে। পাহাড়ধস রোধে জরুরি ভিত্তিতে গাইড ওয়াল না দেওয়া হলে আসছে বর্ষাতেই বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
উথোয়েনছি রাখাইন ও কেতন বড়ুয়া বলেন, জাদিটি রেঙ্গুনি কারুকাজে তৈরি। বর্তমান সময়ে কোটি টাকা ব্যয় করেও এ রকম জাদি তৈরি করা যাবে না। কিন্তু পাহাড়ধস রোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে প্রাচীন এ পুরাকীর্তি ধ্বংস হয়ে যাবে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও কক্সবাজার জেলা ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সাধারণ সম্পাদক শামীম আহসানের মতে, সংস্কার করা হলে এ জাদিটি রামুর প্রধান পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত হতে পারে।
রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল বলেন, রামুর বিভিন্ন বৌদ্ধ পুরাকীর্তির মধ্যে এ জাদিটি অন্যতম। পাহাড়ধস ঠেকাতে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে বরাদ্দ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

No comments:

Post a Comment