কক্সবাজারের রামু ও উখিয়ায় গত শনিবার রাতে হঠাৎ করে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর এবং বৌদ্ধমন্দিরে ব্যাপক হামলা শুরু হয়। হামলাকারীরা সংঘবদ্ধভাবে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ১৬টি বৌদ্ধমন্দিরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
লুটপাট করে মন্দিরের মূল্যবান সম্পদ। দুষ্কৃতকারীরা বিভিন্ন এলাকায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অর্ধশতাধিক বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করে। আগুন লাগানোয় ব্যবহার করা হয় গানপাউডার ও পেট্রল। রাত সাড়ে ১২টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা ধরে চলে এই তাণ্ডব। এরপর গতকাল রবিবার দুপুরে চট্টগ্রামের পটিয়ায় চারটি বৌদ্ধমন্দির এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের তিনটি মন্দিরে হামলা, প্রতিমা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
একটি প্রচারণার মাধ্যমে গতকাল সন্ধ্যায় কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার রাজাপালং জাদি মুরা বৌদ্ধবিহার ও কোটবাজার বৌদ্ধবিহারে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া রত্নাপালং ইউনিয়নের রুমখা বড়বিল এলাকায় মিছিলের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় পুলিশ বাধা দেয়। এতে মিছিল থেকে পুলিশের ওপর গুলি ছোড়া হয়। পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এ ঘটনায় পুলিশের এসআই আনোয়ার উল্লাহ, কনস্টেবল রতন, শিমুল দাশ, রুমকা এলাকার বশির আহমদের ছেলে গিয়াস উদ্দিন, রুমকা আলিম মাদ্রাসার আলিম প্রথম বর্ষের ছাত্র আবদুল হকসহ প্রায় ৩০ জন আহত হয়। উখিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নিলু কান্তি বড়ুয়া এ তথ্য জানিয়েছেন।
গতকাল সন্ধ্যায় কিছু লোক টেকনাফের হোয়াইক্যং এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির ভাঙচুরের চেষ্টা চালায়। পুলিশ এখানে ২০টি ফাঁকা গুলি ছুড়লে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। হোয়াইক্যং ইউপি চেয়ারম্যানসহ পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় হোয়াইক্যং আমতলীর জোয়ারিখলায় মিছিলসহকারে বৌদ্ধমন্দিরে হামলার চেষ্টাকালে পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলি হয়। হামলাকারীরা আমতলীর বড়ুয়াপাড়ায় আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে ১২টি বাড়ি পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ওয়ার্ডের মেম্বার মোস্তফা কামাল চৌধুরী।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশের চেষ্টা চালানোর কথা জানিয়েছেন টেকনাফ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) স্বপন কুমার মজুমদার। এ ছাড়া কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল, ঝিলংজা, মহেশখালীসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায়ও হামলা, ভাঙচুরের খবর পাওয়া গেছে।
এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবিলম্বে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়- এমন কোনো কর্মকাণ্ড সরকার বরদাশত করবে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর গতকাল দুপুরে রামুর কয়েকটি ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির ঘুরে দেখে বলেন, এটি দেশ ও জাতির জন্য একটি ন্যক্কারজনক ঘটনা। এমন ঘটনা এ দেশে নজিরবিহীন। যারা এ ঘটনার জন্ম দিয়েছে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন, 'আমি জানতে পেরেছি এ ঘটনায় গানপাউডার ও পেট্রল ব্যবহার করা হয়েছে।' ঘটনা থামাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও দমকল বাহিনীর বিরুদ্ধেও অভিযোগ এসেছে। তারা কেন সঠিক সময়ে ব্যবস্থা নিতে পারেনি, তা বের করে আনতে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার, চট্টগ্রামকে আহ্বায়ক করে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণাও দেন তিনি।
সূত্র জানায়, রামুর এক বৌদ্ধ যুবকের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ইসলাম ধর্মের অবমাননাকর একটি ছবি সংযুক্ত করা হয়েছে- এ রকম প্রচারণার পর ভয়াবহ ওই হামলা হয়। ওই যুবকের শাস্তির দাবিতে প্রথমে রাত ৮টার দিকে রামুর চৌমুহনী চত্বরে একটি বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করে কিছু লোক। প্রত্যক্ষদর্শী সাজু বড়ুয়া (৩০) কালের কণ্ঠকে জানান, চৌমুহনী এলাকায় বিক্ষোভের পর রাত সাড়ে ১১টার দিকে কয়েকটি মিছিল নিয়ে সর্বপ্রথম কিছু যুবক মেরংলোয়া এলাকার প্রবীণ শিক্ষক সুগত রঞ্জন বড়ুয়া ও দানেশ বড়ুয়ার বাড়িতে হামলা চালায়। এরপর কিছু বুঝে ওঠার আগেই কয়েক হাজার লোক দলে দলে মিছিল নিয়ে প্রাচীন বৌদ্ধমন্দির লাল চিং ও সাদা চিং মন্দিরে হামলা এবং অগ্নিসংযোগ করে।
আড়াই শ বছরের পুরনো রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের ভিক্ষু প্রজ্ঞানান্দ মহাথেরো কালের কণ্ঠকে বলেন, 'রাত ১২টার পরই আমাদের বৌদ্ধবিহারে হামলা শুরু হয়। ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়সী যুবকরা হামলায় অংশ নেয়। তারা গানপাউডার ও পেট্রল ছিটিয়ে সীমা বিহারটি পুড়িয়ে দিয়েছে। বিহারের চতুর্দিক থেকে হামলা হওয়ার কারণে তা রক্ষা করা যায়নি।'
বাংলাদেশ সংঘরাজ মহসভার সাবেক সভাপতি শ্রীমৎ সত্যপ্রিয় মহাথেরো কালের কণ্ঠকে জানান, রামু উপজেলায় ছোট-বড় ২৭টি বৌদ্ধমন্দিরে ভারত, থাইল্যান্ড, জাপান, চীন, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশের ব্রোঞ্জ, অষ্টধাতু, শ্বেতপাথরসহ বিভিন্ন মূল্যবান ধাতু দিয়ে তৈরি ছোট-বড় সহস্রাধিক মূর্তি ছিল। এর মধ্যে পাঁচ শতাধিক পুড়ে গেছে, কিছু ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। বার্মিজ, পালি, বাংলাসহ বিভিন্ন ভাষার দুষ্প্রাপ্য ত্রিপিটক পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বঙ্কিম বড়ুয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, ২৫০ বছরের পুরনো কেন্দ্রীয় সীমা বিহার, মৈত্রী বিহার, সচিত্র মহাজনের পারিবারিক ক্যাং, হাইটুপি বৌদ্ধবিহার, সাদা চিং, জাদি পাড়া আর্য বৌদ্ধবিহার, উত্তর মিঠাছড়ি বনবিহার, উখিয়ার ঘোনা জেতুবনবিহার, উত্তর মিঠাছড়ির বিমূর্তি বিদর্শন ভাবনাকেন্দ্রের সিংহ শয্যা বৌদ্ধবিহার, চাকমারকুল বৌদ্ধবিহার, ফারিরকুল বৌদ্ধবিহার, রাখাইনদের লাল চিং ও হাইটুপির বড় ক্যাং ধ্বংস করা হয়েছে। রবিবার সকালে রামুর রামকোট, উখিয়ার মরিচ্যা হীরার দ্বীপ বৌদ্ধবিহার, উখিয়ার জেতাবন এলাকার দুটি বৌদ্ধবিহারে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও মূর্তি লুট করা হয়।
কক্সবাজার বৌদ্ধ ফেডারেশনের কক্সবাজারের সভাপতি বোধি মিত্র বড়ুয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, এ ঘটনা পরিকল্পিত। রাত সাড়ে ৮টায় মিছিল করা হয়েছে। এ ছাড়া রাত সাড়ে ৩টা পর্যন্ত তাণ্ডব চললেও স্থানীয় প্রশাসন তা রোধ করতে কোনো ভূমিকা রাখেনি। তিনি বলেন, প্রশাসন চাইলে এই সহিংসতা বন্ধ করতে পারত। একই কথা বলেছেন বৌদ্ধদের রিসসো কোসেকাই বাংলাদেশের কক্সবাজারের পরিচালক বাবুল বড়ুয়াও। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে কালের কণ্ঠকে বলেন, রাতে রামু থানার ওসিকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এ ছাড়া দমকল বাহিনীও রাতে আগুন নেভাতে এলাকায় আসেনি। সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে রামুর হাজার বছরের ঐতিহ্যকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা ইমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা কামাল উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেছেন, কেউ ধর্মের অবমাননা করলে দেশের আইনমতোই তাদের বিচার হবে। মুসলমানরা বিচারের দাবি করতে পারে। মন্দির ও বাসা-বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ইসলাম সমর্থন করে না। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর কালের কণ্ঠকে বলেছেন, এ ঘটনা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সাধ্যমতো চেষ্টা করেছে।
পটিয়ায় হামলা : চট্টগ্রামের পটিয়ার কোলাগাঁও ইউনিয়নের লাখেরা গ্রামে চারটি বৌদ্ধমন্দির এবং হিন্দুদের তিনটি মন্দিরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয় গতকাল দুপুরে। ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড থেকে বের হয়ে শ্রমিকরা লাখেরা অভয় বৌদ্ধবিহার সংযুক্ত তিনটি মন্দির, কোলাগাঁও নবারুণ সংঘ দুর্গামন্দির, শিবমন্দির, কোলাগাঁও সার্বজনীন রত্নাঙ্কুর বিহার ও হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি শ্মশান ভাঙচুর ও আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। এ ঘটনায় পুলিশ ও র্যাব সিসি ক্যামেরার সাহায্যে শনাক্ত করে ২৬ শ্রমিককে আটক করেছে। হামলাকারীরা মন্দিরের স্বর্ণমূর্তি ও বেশ কিছু পিতলের মূর্তি লুট করে নেয়। তাদের সবার হাতে ছিল শিপইয়ার্ডের লোহার রড, পাট্টা ও লাঠিসোঁটা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর ১২টার দিকে লাখেরা গ্রামে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের ইউনিফর্ম পরা শ্রমিকের দলটি লোহার রড, পাট্টা ও লাঠিসোঁটা নিয়ে লাখেরা গ্রামের ভেতর ঢুকে পড়ে। সশস্ত্র শ্রমিকদের রুদ্রমূর্তিতে গ্রামে ঢোকার দৃশ্য দেখে গ্রামবাসী ছোটাছুটি শুরু করে। শ্রমিকদলটি বিহার ও মন্দিরের ওপর হামলে পড়ে। বিহারের ভেতরে লুটপাট চালায়। তারা মন্দিরগুলোতে থাকা নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও মূল্যবান মূর্তি লুট করে এবং ছয়টি প্রতিমা ভেঙে ফেলে।
বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে হামলাকারীরা লোহার রড ও পাট্টা দিয়ে তিনা ভান্তে ও দুই প্রতিমা কারিগরকে পেটায়। পুলিশ জানিয়েছে, পটিয়ার এই হামলার সঙ্গে স্থানীয় কেউ জড়িত ছিল না। শুধু ওয়েস্টার্ন শিপইয়ার্ডের শ্রমিকরা পরিকল্পিতভাবে এই হামলায় অংশ নিয়েছে। ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সাখাওয়াৎ হোসেন তাঁর প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের বিহার ও মন্দিরে হামলা চালানোর কথা স্বীকার করে জানান, দুপুর ১২টার দিকে হঠাৎ করে শিপইয়ার্ডের ৫০-৬০ জন শ্রমিকের একটি দল অনুমতি ছাড়া ইয়ার্ডের মূল গেট ভেঙে বের হয়ে গিয়ে এ হামলা চালায়। বিকেল ৫টা থেকে তল্লাশি কার্যক্রম শুরু হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, ওয়েস্টার্ন মেরিনের বাইরে শ্রমিক ফেডারেশন নামে একটি সংগঠন এ ঘটনার পেছনে ইন্ধন দিয়েছে।
পটিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) আমিনুর রশীদ জানিয়েছেন, এ ঘটনায় সিসি ক্যামেরার সাহায্যে অপরাধী শনাক্ত করে ইতিমধ্যে ২৬ জনকে আটক করা হয়েছে।
বান্দরবানে ৩৫ জন আটক : রামুতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদর থেকে ৩৫ জনকে আটক করা হয়েছে। রবিবার সন্ধ্যায় বান্দরবান জেলা পুলিশ জানায়, একটি জিপে চড়ে রামু থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদরে পৌঁছালে রবিবার সকাল ৮টায় বিজিবি সদস্যরা সন্দেহভাজন হিসেবে তাঁদের আটক করেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁদের নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।
এদিকে রামুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বান্দরবানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। রবিবার বিকেলে কালেক্টরেট সভাকক্ষে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সম্প্রীতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বান্দরবান জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, কক্সবাজারসংলগ্ন নাইক্ষ্যংছড়ি, আলীকদম ও লামা উপজেলায় বৌদ্ধ বসতি এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তায় কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। নিষিদ্ধ করা হয়েছে যেকোনো ধরনের সভা-সমাবেশ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আশ্বাস : গতকাল দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর, শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার সিরাজুল হক খানসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে রামু চৌমুহনী স্টেশন চত্বরে এক সংক্ষিপ্ত সভায় দুই মন্ত্রী ও স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও আওয়ামী লীগ সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করতে ভিন্ন রাজনীতির কিছু নেতা-কর্মীসহ উগ্র মৌলবাদীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এ দেশে সব সম্প্রদায়ের সম-অধিকার ও ধর্ম পালনের অধিকার রয়েছে। পাশাপাশি ধর্মের মর্যাদা রক্ষা করাও সব সম্প্রদায়ের লোকদের সমদায়িত্ব। কিছু ব্যক্তির সামাজিক ওয়েবসাইটের বিষয়টিকে নিয়ে যারা বৌদ্ধ বিহারসহ বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে, তাদের দেশের প্রচলিত আইনের মাধ্যমে দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হবে।'
সভায় পুলিশ প্রশাসনের ব্যর্থতা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'কিছু উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তির দ্বারা সংঘটিত বিহারের ও বসতঘর পোড়ানোর ঘটনায় পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে অনেক অভিযোগ পেয়েছি। এসব অভিযোগ যথাযথভাবে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বলেন, 'অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সমৃদ্ধ এ দেশের সম্মানকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিনষ্ট করতে কিছু স্বার্থান্বেষী ও উচ্ছৃঙ্খল সংগঠন উঠেপড়ে লেগেছে। মুক্তিযুদ্ধের অর্জিত এ সম্মানকে ভূলুণ্ঠিত হতে দেওয়া যাবে না। এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ অঞ্চলের অসাম্প্র্রদায়িক চেতনাকে পুনরুদ্ধার করা হবে।'
পথসভায় আরো বক্তব্য দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল, সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম প্রমুখ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ, বিভাগীয় কমিশনার সিরাজুল হক খান, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নওশের আলী, জেলা পরিষদের প্রশাসক মোস্তাক আহমদ, উখিয়া-টেকনাফের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট আহমদ হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদ সিআইপি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা, সোনালী ব্যাংকের সাবেক পরিচালক সাইমুম সরওয়ার কমল, কক্সবাজার শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান প্রমুখ।
রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল বলেন, সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার জন্য কয়েকটি মহল উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই তাণ্ডবলীলা চালিয়েছে।
(প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন কক্সবাজারের তোফায়েল আহমদ, পটিয়ার আবদুল হাকিম রানা, টেকনাফের জাবেদ ইকবাল চৌধুরী, বান্দরবানের মনিরুল ইসলাম মনু ও চট্টগ্রামের শিমুল নজরুল)
No comments:
Post a Comment