Monday, October 01, 2012

রামুর পর উখিয়া, টেকনাফ, পটিয়াতে অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুরঃ আহত ২৫


কক্সবাজারের রামুর পর এবার উখিয়া ও টেকনাফের ২টি বৌদ্ধ মন্দির এবং বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালিয়েছে অজ্ঞাতপরিচয় দুর্বৃত্তরা। এছাড়া চট্টগ্রামের পটিয়াতেও একই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

উখিয়া ও টেকনাফে রোববার সন্ধ্যা ৭টার দিকে দুর্বৃত্তরা এ ঘটনা ঘটানো হয়। এ ঘটনায় পুলিশের ৪ সদস্যসহ ২৫ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এদিকে চট্টগ্রামের পটিয়াতে ঘটনাটি ঘটে রোববার সকালে।

উখিয়া উপজেলার রত্মাপালং এলাকার এক বাসিন্দা বাংলানিউজকে জানান, রোববার সন্ধ্যা ৭টার দিকে পশ্চিম রত্মা সুদর্শন বৌদ্ধ বিহারে একদল দুর্বৃত্ত অগ্নিসংযোগ করে লুটপাট শুরু করে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ও র‌্যাব ঘটনাস্থলে আসে।

এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে র‌্যাব গুলি চালায়। এতে ৩ জন আহত হয়েছেন। তবে তাদের নাম জানা যায়নি।

হলদিয়াপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন চৌধুরী মিন্টু বাংলানিউজকে জানান, এক দল দুর্বৃত্তের হামলায় এক এসআই ও আনোয়ার নামে এক পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন।

উখিয়া উপজেলার আওয়ামী লীগের সভাপতি আদিল চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, হামলাকারীরা বেশিরভাগই অপরিচিত এবং রোহিঙ্গা বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

এছাড়া একই সময়ে উখিয়া জাদী বৌদ্ধ বিহারেও ভাঙচুরের খবর পাওয়া গেছে। ওখানে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

এবিষয়ে কক্সবাজার জেলার পুলিশ সুপার সেলিম মো. জাহাঙ্গীর ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বাংলানিউজকে জানান, ঘটনাস্থলে পুলিশ রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।

এদিকে, টেকনাফ থেকে স্থানীয় লোকজন, পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রোববার সন্ধ্যায় টেকনাফের হোয়াইক্যং লম্বাবিল এলাকা থেকে একটি মিছিল বের করে হোয়াইক্যং বড়ুয়া অধ্যূষিত এলাকা লাতুরীখোলা  গ্রামের দিকে যেতে থাকে।

মিছিলটি ওই এলাকায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে বিপুল সংখ্যক লোকজন সমবেত হয়। তারা বড়ুয়া ও হিন্দু পাড়ায় গিয়ে একটি বড়ুয়া ও ৪টি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বসতবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়।

খবর পেয়ে হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির আইসি এসআই বখতিয়ারের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা করেন। এতে লোকজন আরও মারমুখি হয়ে উঠলে পুলিশ প্রায় ১৫ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে।

এতে আমতলীর আবুল কাশেমের ছেলে মো. জাহেদ (১৮), লম্বাবিলের মিয়ার ছেলে মো. জালাল (১৬), স্থানীয় জসিম উদ্দিনের ছেলে মো. করিম (১৮), আবদুল হাকিমের ছেলে মোস্তাক (২৫), মো. আলমের শিশুসন্তান পুতিয়া (৮), নুরুল আলমের ছেলে মো. হোছন (১৮), নুরুল ইসলামের ছেলে হাছান আলীসহ (১৮) আরও ৬/৭ জন গুলিবিদ্ধ হয়।

এছাড়া হোয়াইক্যং ইউপি চেয়ারম্যান ও জেলা জায়াতের রুকন নূর আহমদ আনোয়ারী, ৩ পুলিশ কনস্টেবল, সংবাদকর্মী রমজান উদ্দিন পটলসহ ২০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

এ খবর হোয়াইক্যং স্টেশনে পৌঁছালে উত্তেজিত লোকজন টায়ার জ্বালিয়ে টেকনাফ-কক্সবাজার সড়কে ব্যারিকেড দেয়।

রাত সোয়া ৯টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

এবিষয়ে টেকনাফ থানার পরিদর্শক (ওসি) মোহাম্মদ ফরহাদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বাংলানিউজকে জানান, ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ পুলিশ ঘটনাস্থলে যান। এতে সংঘর্ষ বাঁধে। এখন পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

কক্সবাজার সদর হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, এ ঘটনায় আহত উখিয়ার পুলিশ সদস্য আনোয়ার (৪৫), উখিয়ার বাসিন্দা শাহাব উদ্দিন (২৭) ও  নুর মোহাম্মদকে (২৩) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।  

এদিকে কক্সাবাজরের রামু উপজেলায় বৌদ্ধমন্দির ও বসতিতে হামলার ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার কোলাগাঁও ইউনিয়নে বৌদ্ধ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের চারটি মন্দিরে ভাংচুর ও লুটপাট চালিয়েছে দুস্কৃতিকারীরা।

একইসঙ্গে চারটি মন্দিরের আসবাবপত্রে আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। কোলাগাঁওয়ের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাটিতেও বর্তমানে চরম আতংক বিরাজ করছে বলে জানায় স্থানীয়রা।

চারটি মন্দির ভাংচুরের কথা স্বীকার করে পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোকেয়া পারভিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘কমপক্ষে পাঁচ শতাধিক লোক অতর্কিত এসে দু’টি বৌদ্ধ মন্দির এবং দু’টি হিন্দুদের মন্দিরে হামলা করেছে। চারটি মন্দিরই তছনছ করেছে। দুর্গা মন্দিরের বেশকিছু আসবাবপত্র তারা আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে।’

জেলা পুলিশের পটিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, রোববার সকাল ১০টার দিকে কয়েক’শ লোক কোলাগাঁও ইউনিয়নের লাখেরা গ্রামে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের একটি বড় মন্দিরে আক্রমণ চালায়। তারা মন্দিরের আসবাবপত্র ভাংচুরের পাশাপাশি সেখানে তছনছ চালায়।

প্রসঙ্গত, ফেসবুকে ট্যাগ করা একটি ছবিকে কেন্দ্র করে শনিবার দিনগত রাত সাড়ে ১১টা থেকে শুরু হওয়া এ হামলা অব্যাহত ছিল রোববার ভোর ৪টা পর্যন্ত।

এসময় রামু উপজেলার বৌদ্ধ ধর্মালম্বী অধ্যূষিত এলাকায় অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ভাঙচুর চালানো হয়। দুর্বৃত্তরা এ উপজেলার ৭টি বৌদ্ধ মন্দির, ৩০টি বসতঘর, দোকানে অগ্নিসংযোগ ঘটায়। এসময় আরও শতাধিক বাড়ি ও দোকানে হামলা, লুটপাট ও ভাঙচুর করা হয়।

পরিস্থিতি বর্তমানে থমথমে। ওই এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব অবস্থান করছে। এ ঘটনায় রোববার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর ও শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

No comments:

Post a Comment