Friday, September 28, 2012

লেখাপড়া না হওয়ায় স্কুলে যাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা

রামু উপজেলার গ্রামাঞ্চলের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সংকটে বিঘি্নত হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের পড়ালেখা। এমন বিদ্যালয়ও রয়েছে যেখানে সাড়ে ৩শ' থেকে ৫শ'র বেশি শিক্ষার্থীকে পাঠদান করছেন মাত্র দু'তিন শিক্ষক।

এতে মানসম্মত পাঠদান সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষক স্বল্পতার কারণে প্রাথমিক অবস্থার বেহাল দশা বিরাজ করলেও ছাত্রছাত্রীদের পাঠদানে শিক্ষকদের আপত্তি, শ্রেণীকক্ষের স্বল্পতা, ডেপুটেশনের দায়িত্ব পালনে আপত্তি, সমন্বয়ের অভাবসহ নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে উপজেলার ১১ ইউনিয়নের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। ফলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি বিদ্যালয় বিমুখ হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। এতে উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
এদিকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সমস্যাগুলো উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসে জানানোর পরও বছরের পর বছর অপেক্ষা করেও সমস্যার সমাধান হয় না। উপজেলার ১১ ইউনিয়নের প্রায় সব সরকারি ও রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একই অবস্থা। এ ছাড়া বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ থাকলেও অনেক শিক্ষক মাতৃত্ব ছুটিতে বা পিটিআইয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। ওই শিক্ষকদের সাময়িক শূন্য পদে নিয়োগের ব্যবস্থা না থাকায়, এতে মানসম্মত শিক্ষা প্রদান করা সম্ভব হয় না। সম্প্রতি নতুন নিয়োগ দিয়েও উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সংকটের সমস্যার সমাধান করা যাচ্ছে না। উপজেলার গ্রামাঞ্চলের বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকরা পাঠদানে অনাগ্রহ প্রকাশ করলেও এর সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না।
উপজেলার ১১ ইউনিয়নে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫৫টি, বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় ২০টি, কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩টি, ব্র্যাক পরিচালিত বিদ্যালয় ১৯টি ও এনজিও পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩টি ও কিন্ডারগার্ডেন স্কুল ১৭টি। এ সব বিদ্যালয়ের মধ্যে ৭৮টি সরকারি, বেসরকারি রেজিস্টার্ড ও কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৪৩ হাজার ৮৮২। ছাত্রছাত্রীর বিপরীতে শিক্ষক আছে ৪২৬ জন। এদের মধ্যে শূন্য পদে গত ২৬ আগস্ট ৪৪ জনকে নতুনভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
চেইন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১০২৪ জন। শিক্ষক আছেন ৯ জন। পানেরছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৮২১ জন। শিক্ষক আছেন ৮ জন। গোয়ালিয়া পালং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৮৮১ জন। শিক্ষক আছেন ৫ জন। দারিয়ার দীঘি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৮১২ জন। শিক্ষক আছেন ৭ জন। ঈদগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৯২৩ জন। শিক্ষক আছেন ৮ জন। জাতীয় পর্যায়ে ৫০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক থাকার বিধান থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। অন্যদিকে সদরের কাছাকাছি জারাইলতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৬৬৮ জন। শিক্ষক আছেন ১০ জন।
ঈদগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ বদরুদ্দিন বলেন, তার বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণীর দু'শাখায় ২১৪, দ্বিতীয় শ্রেণীর দু'শাখায় ২০৫ ও পঞ্চম শ্রেণীতে ১০৯ ছাত্রছাত্রী আছে। একটি শ্রেণীতে প্রতিদিন গড়ে ১শ'র উপরে ছাত্রছাত্রী উপস্থিত থাকে। ৪০ মিনিটের সময়সূচিতে শিক্ষকপ্রতি ৫০ ছাত্রছাত্রীকে পাঠদান করার নিয়ম থাকলেও আমাদের ১শ'র বেশি ছাত্রছাত্রীকে পাঠদান করা দুষ্কর হয়ে পড়ে। ফলে প্রতিটি ছাত্রছাত্রীকে পাঠদানে মনোযোগ দেওয়া সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। প্রায় শ্রেণীতে ১শ' ছাত্রছাত্রীর বসার জায়গা হয় না। অনেক বিদ্যালয়ের ভবন পুরনো হওয়ায় ঝুঁকির মধ্যে পাঠদান চলছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সেলিম জানান, প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সংকট প্রকট। ওইসব বিদ্যালয়ের শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার পর, বছর যেতে না যেতে শিক্ষকরা তদবিরের মাধ্যমে সুবিধামতো স্থানে বদলি হয়ে চলে যান। উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ফজলুল্লাহ মোহাম্মদ হাসান জানান, উপজেলা সদরের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গ্রামের বিদ্যালয়গুলোর চেয়ে শিক্ষকের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। উপজেলা সদর গ্রামাঞ্চলের বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকরা নিয়োগ পেলেও সেখান থাকতে চান না। শিক্ষা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) রাখাল চন্দ্র পাল জানান, একটি বিদ্যালয়ে ১০০-১৫০ ছাত্রছাত্রীর জন্য কমপক্ষে ৪ জন শিক্ষক দরকার। সে অনুপাতে বর্তমানের দ্বিগুণ শিক্ষক প্রয়োজন। দুই শিফটে বিদ্যালয়ের পাঠদানের ব্যবস্থা করে এ সমস্যা সমাধান করা গেলেও ৪০ মিনিটের পাঠদান সময়ে একজন শিক্ষককে ১০০ থেকে ১২৫ ছাত্রছাত্রীকে পাঠদান করতে হয়। এতে বহুমুখী শিখন পদ্ধতি অনুসরণ করা হলেও শতভাগ মানসম্মত পাঠদান করা সম্ভব হয় না। বিরাজমান এ সমস্যা সমাধান করা জরুরি। বিধি মোতাবেক শ্রেণীভিত্তিক যোগ্যতা ও বিদ্যালয় ভেদে ৮৫-৯৫ ভাগ মানসম্মত শিক্ষা অর্জিত হচ্ছে বলে জানান উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।

No comments:

Post a Comment