Saturday, December 04, 2010

চামড়া নিয়ে বিপাকে

চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। কোরবানির ঈদের সময় বেশি দামে চামড়া কিনে এখন বিক্রি করতে পারছেন না তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ, ট্যানারির মালিকরা চামড়া কিনছেন না। অন্যদিকে ট্যানারি মালিকদের দাবি, পাইকারি চামড়া ব্যবসায়ীরা যে দামে ঈদের সময় চামড়া কিনেছেন, সে দামে চামড়া কেনার সামর্থ্য নেই তাঁদের। এক পক্ষ এখন আরেক পক্ষকে দুষছে। এই চামড়া কেনাবেচার আড়ালে কেউ কেউ খুঁজতে চাইছে অদৃশ্য কোনো সিন্ডিকেটের ছায়া। বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের বাস্তবতায় এটা অস্বাভাবিকও নয়। যেকোনো বাজারে যখনই কোনো অস্থিরতা দেখা দেয়, তখন তার আড়ালে সিন্ডিকেটের অদৃশ্য হাতের ছোঁয়া আবিষ্কার হয়েই যায়।
চামড়া নিয়ে যে এমন অবস্থার সৃষ্টি হবে, সেটা কিন্তু অনেক আগেই আঁচ করা গিয়েছিল। এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় বিস্তর লেখালেখিও হয়েছে। এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করা হয়েছিল, যে অবস্থা চলছে, তাতে চামড়া পাচার হয়ে যেতে পারে। ঈদের তিন সপ্তাহ পরও দেখা যাচ্ছে, পাইকারি ব্যবসায়ীরা চামড়া বিক্রি করতে পারছেন না। যা বিক্রি হচ্ছে, তাতেও তাঁদের লোকসান হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের ক্ষোভটা এসে পড়ছে ট্যানারি মালিকদের ওপর। পাইকারি ব্যবসায়ীদের ধারণা, ট্যানারি মালিকরা ইচ্ছে করেই চামড়া কেনা বন্ধ রেখেছেন। চামড়া পচনশীল। নির্দিষ্ট একটা সময়ের মধ্যে পাইকারি ব্যবসায়ীদের চামড়া বিক্রি করতেই হবে। কাজেই ট্যানারি মালিকরা একজোট হয়ে দাম বেঁধে দিয়েছেন, এমনটিই ধারণা করছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। সেই দামে চামড়া বিক্রি করলে পাইকারি ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়বেন। অন্যদিকে কেনা চামড়া বিক্রি না করলেও বিপদ। কাজেই পাইকারি ব্যবসায়ীদের ভিন্ন পথ বেছে নেওয়াটা বিচিত্র কিছু নয়। কারণ ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হবে তাঁদের। অন্যদিকে ট্যানারি মালিকরা তাঁদের নির্ধারণ করে দেওয়া দামের বাইরে যেতে চান না। দুই পক্ষের এই টানাপড়েনের মধ্যে পড়ে অবিক্রীত থাকছে চামড়া। এদিকে দেশের চামড়ার দাম বেশি হওয়ায় ভারত থেকে চামড়া আনার জন্য ঢাকার বাইরে এলসি খোলা হয়েছে_এমন খবর এসেছে পত্রিকান্তরে।
চামড়া নিয়ে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তা নিরসন হওয়া দরকার। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো চামড়া কেনার জন্য ঋণ দিতে প্রস্তুত। এখন প্রয়োজন শুধু পাইকারি ব্যবসায়ী ও ট্যানারি মালিকদের মধ্যে সমন্বয় ও সমঝোতা। উভয়পক্ষের সমঝোতা হলেই চামড়া নিয়ে যে সংকট চলছে, তা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে পাওয়া যাবে। পাইকারি ব্যবসায়ীদের ব্যবসা শুধু নয়, চামড়াশিল্পের স্বার্থেও এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। দূর করতে হবে অস্থিরতা। আমরা আশা করব, সংশ্লিষ্ট মহল এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

No comments:

Post a Comment