Saturday, December 04, 2010

প্রতিমন্ত্রীর গাড়িতে হামলাঃ সাংসদ-স্থানীয় সরকার বিরোধ কাম্য নয়

মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী পর্যায়ের কারও গাড়িতে হামলার বিষয়কে কোনোভাবেই স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া যায় না। বুধবার শেরপুরে এমন ঘটনা ঘটেছে। হামলার শিকার হয়েছে পানিসম্পদমন্ত্রী মো. মাহবুবুর রহমানের গাড়ি। শেরপুর সদর উপজেলার চেয়ারম্যানকে সভামঞ্চে কথা বলার সুযোগ না দেওয়াকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা ঘটেছে। শুধু প্রতিমন্ত্রীর গাড়িতে হামলাই নয়, এ নিয়ে সংঘাত-সংঘর্ষে আহত হয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান, পুলিশ সুপার, সাংবাদিকসহ প্রায় ২৫ জন। আইনপ্রণেতা অর্থাৎ সাংসদ ও স্থানীয় সরকারের মধ্যে যে ভারসাম্যহীন ও বিরোধপূর্ণ পরিস্থিতি বজায় রাখা হয়েছে, তারই একটি দুঃখজনক বহিঃপ্রকাশ ঘটল এ ঘটনার মধ্য দিয়ে।
পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ঘটনার দিন শেরপুর সদর উপজেলায় বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙা অংশ ও ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে এ বিষয়গুলোতে উপজেলা চেয়ারম্যানের সংশ্লিষ্টতা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু উপজেলা চেয়ারম্যান ইলিয়াছ উদ্দিন অভিযোগ করেছেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার জনগণের সমস্যার কথা তিনি প্রতিমন্ত্রীকে দুবার বলার চেষ্টা করেও বলতে পারেননি। কারণ এর পেছনে রয়েছে স্থানীয় সাংসদ আতিউর রহমানের বিরোধিতা। এ নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের সমর্থকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের সংঘাত ও তার জের ধরে প্রতিমন্ত্রীর গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। বিরোধের বিষয়টিকে শুধু শেরপুরের ঘটনা হিসেবে না দেখে সামগ্রিকভাবে বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন।
দুই পক্ষ থেকে যতই অভিযোগ ও পাল্টা-অভিযোগ করা হোক, স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান ও স্থানীয় সাংসদের মধ্যে বিরোধের জের ধরেই এ ঘটনা ঘটেছে। আর এই বিরোধের মূল কারণ কর্তৃত্ব। আমাদের সংবিধানের ৫৯ নম্বর অনুচ্ছেদে প্রশাসনের সকল স্তরে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানের ওপর ‘স্থানীয় শাসন’ প্রতিষ্ঠার নির্দেশনা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এই নির্দেশনা উপেক্ষিত থেকেছে। নানামুখী চাপে শেষ পর্যন্ত উপজেলা নির্বাচন হলেও এই প্রতিষ্ঠানটিকে কার্যকর করতে সরকারের অনীহা ও টালবাহানার বিষয়টিই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। উপজেলা পরিষদে স্থানীয় সাংসদদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) প্রধান নির্বাহী করার মধ্য দিয়ে সরকার এ ক্ষেত্রে তার অবস্থান পরিষ্কার করেছে।
আমরা বুধবার শেরপুরে ঘটে যাওয়া সংঘাত-সংঘর্ষ ও প্রতিমন্ত্রীর গাড়িতে হামলার নিন্দা জানাই। স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান ও স্থানীয় সাংসদকে এ ঘটনার দায় নিতে হবে। তাঁরা দুজনই জনপ্রতিনিধি, নিজ এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা তাঁদের দায়িত্ব। তাঁরা দুজন যদি এ ব্যাপারে সচেতন থাকতেন, তবে এ ধরনের ঘটনা ঘটত না। তবে সবচেয়ে বড় দায়টি সরকারের, যারা স্থানীয় সরকার পর্যায়ে এ ধরনের একটি বিরোধপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে রেখেছে। আমরা আশা করব, সরকার বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে স্থানীয় সরকারকে কার্যকর করার উদ্যোগ নেবে।

No comments:

Post a Comment