Saturday, December 04, 2010

ঢাকা আন্তর্জাতিক বইমেলা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে গত বুধবার শুরু হইয়াছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বইমেলা। এই বৎসর মেলার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হইয়াছে রূপকল্প-২০২১ এবং গতবারের শেস্নাগান ছিল দিন বদলের জন্য বই। এই মেলা চলিবে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ষোলো দিনব্যাপী এই বইমেলায় তিনটি বিদেশী প্রতিষ্ঠানসহ ১৫১টি সংস্থা অংশগ্রহণ করিতেছে। নামে আন্তর্জাতিক হইলেও এখন পর্যন্ত এই বইমেলা সার্বিক অর্থে তাহা হইয়া উঠে নাই। প্রতিবেশি ভারতের বুক ট্রাস্ট ছাড়া বিদেশী কোনো প্রকাশনা সংস্থা এই মেলায় নাই। তবে ইরান কালচারাল সেন্টার মেলায় স্টল নিয়াছে। এই স্টলে ওই দেশের শিল্প-সাহিত্য এবং ইতিহাস-ঐতিহ্য সংক্রান্ত কিছু বই হয়তো পাওয়া যাইবে।
১৯৯৫ সাল হইতে প্রতি বৎসর সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্র এই মেলার আয়োজন করিয়া আসিতেছে। শুরুতে এই মেলার নাম ছিলো ঢাকা বইমেলা। ২০০৮ সাল হইতে আন্তর্জাতিক শব্দটি যোগ করা হইয়াছে, যদিও মেলাটি এখন পর্যন্ত বহির্বিশ্বের প্রকাশক, বই বিপণন সংস্থা এবং লেখকদের মনোযোগ খুব একটা আকর্ষণ করিতে পারে নাই। এমনকি বাংলাদেশের বাজারে বিদেশী যে সকল প্রকাশনা সংস্থার বই বহুল প্রচলিত, সেই সকল সংস্থারও প্রতিনিধিত্ব এই মেলায় নাই।

তবে, এখনই ইহা পুরাপুরি আন্তর্জাতিক রূপ লাভ করিতে সক্ষম না হইলেও, ভবিষ্যতে যে ইহা যথার্থ আন্তর্জাতিক হইয়া উঠিবে না, সে কথা বলা যায় না। অমর একুশে বইমেলাও শুরুতে ছিলো জাঁকজমকহীন। অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা যেমন ছিল হাতে গোনা, তেমনই দর্শক-ক্রেতার সংখ্যাও ছিলো নগণ্য। সেই একুশের বইমেলা এখন কী বিপুল ও বিশাল হইয়া গিয়াছে, তাহা কাহারও অজানা নহে। আন্তর্জাতিক বইমেলার ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকিলে একদিন হয়ত ইহাও বৃহৎ ও সার্থক রূপ লাভ করিবে।

ঢাকা আন্তর্জাতিক বইমেলা বৈশিষ্ট্যগত দিক দিয়া অমর একুশে গ্রন্থমেলা হইতে অনেকটাই ভিন্ন। এই মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা সংস্থাসমূহ কেবল তাহাদের নিজেদের প্রকাশিত গ্রন্থই প্রদর্শন ও বিক্রয় করিতে পারে। যথেষ্টসংখ্যক বই যেইসব প্রকাশনীর নাই, তাহারা এই মেলায় সাধারণত অংশগ্রহণ করে না। ফলে প্রকৃত প্রকাশকদের বই বিপণনে এই মেলা সবিশেষ সুযোগ আনিয়া দেয়। তাহাদের নিকট এই মেলার আলাদারকমের গুরুত্ব রহিয়াছে। কিন্তু, ঢাকা আন্তর্জাতিক বইমেলার একটি বড় সমস্যা এই যে, তাহার কোনো সুনির্দিষ্ট জায়গা নাই। একেক বৎসর একেক জায়গায় মেলা বসিয়া থাকে। গত বৎসর মেলা হইয়াছিল সোহরাওয়াদর্ী উদ্যানে। এইবার হইতেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে। এই মেলার জন্য একটি নির্দিষ্ট জায়গা থাকা দরকার । বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আন্তর্জাতিক কি জাতীয়, যেই পর্যায়েই হউক বইমেলা আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য হইল মানুষকে বইমুখী করা, বইয়ের পাঠক সৃষ্টি করা। জ্ঞানভিত্তিক উন্নত সমাজ বিনির্মাণে ্লবইয়ের কোনো বিকল্প নাই। বই সুন্দরতর জীবনের দিশা দেয়। বিকাশ ঘটায় জীবন বোধের। আমরা মনে করি, বইমেলা বইপড়া আন্দোলনেরই একটা অংশ। আমাদের বাংলা ভাষায় বহু-বিচিত্র বিষয়ে আরও অনেক ভাল বই চাই, ভাল পাঠক চাই। বিদেশী সাহিত্য-দর্শন এবং নিত্য-নূতন চিন্তার সহিত আমাদের পরিচিত হইতে হইবে। বই-ই হইতে পারে সেই পরিচয়ের বাহন। ঢাকা আন্তর্জাতিক বইমেলা এই ক্ষেত্রে কিছু না কিছু ভূমিকা যে রাখিয়া যাইবে তাহাতে কোনো সন্দেহ নাই।

No comments:

Post a Comment