Sunday, December 12, 2010

দুর্নীতির ব্যারোমিটার

দুর্নীতিতে সর্বোচ্চ স্থানটি ছিল বাংলাদেশের। এখন আর বাংলাদেশ সেই অবস্থানে নেই। অনেকটাই উত্তরণ ঘটেছে। এর পরও যা আছে, তাকেও সহনীয় পর্যায় বলার সুযোগ নেই। তবে ইউরোপ-আমেরিকায়ও যেখানে দুর্নীতির চিত্র দিন দিন স্ফীত হচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশের অবস্থানের উন্নতি হওয়াটা অবশ্যই গর্বের বিষয়। এ উন্নয়নের গতি মন্থর হওয়ার পরও তেমনি বলতে হবে।

বাংলাদেশের দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিক চিত্র কিন্তু আগের মতোই রয়ে গেছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) জরিপে অংশগ্রহণকারী জবাবদাতাদের মধ্যে ৮০ শতাংশ যখন বলে, বাংলাদেশে দুর্নীতি সবচেয়ে বেশি হচ্ছে পুলিশে; তখন মনে হতেই পারে, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নেতিবাচক অবস্থার জন্য এরাই সবচেয়ে বেশি দায়ী। সুতরাং দেশ থেকে দুর্নীতি কমিয়ে আনতে হলে অবশ্যই পুলিশ বিভাগের প্রতি অধিক নজর দিতে হবে। টিআইবির প্রতিবেদন প্রকাশের পর সরকারের তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া না পাওয়া গেলেও এটুকু বিশ্বাস করা যায়, সরকার প্রতিষ্ঠানটিকে দুর্নীতিমুক্ত করতে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে দ্বিধা করবে না। এমনিতেও টিআইবির প্রতিবেদনের আগে থেকেই দুর্নীতির অভিযোগ ছিল তাদের বিরুদ্ধে। তবে তাদের সঙ্গে জনপ্রশাসনকে বাদ দেওয়া যায় না। তাই শুধু পুলিশই নয়, জনপ্রশাসনকেও ঢেলে সাজাতে হবে। তবে আশার কথা হলো, সরকারের দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপের প্রতি জনগণের আস্থা এখনো ইতিবাচকই রয়েছে। ৬০ শতাংশ মানুষ এ প্রসঙ্গে এখনো সরকারের কার্যক্রমকে সমর্থন করে। তারা মনে করে, সরকার দুর্নীতি প্রতিরোধ করার জন্য যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তা যথাযথ। সরকারের প্রতি আস্থা থাকাটা দুর্নীতি প্রতিরোধের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। সারা বিশ্বে রাজনৈতিক দলগুলোকে দুর্নীতিবাজ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে ৭৯ শতাংশ জবাবদাতা। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জবাবদাতাদের জবাব পুলিশে সর্বাধিক, দ্বিতীয় জনপ্রশাসন আর তৃতীয় স্থানে রাজনৈতিক দলের নাম এসেছে। এ ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো এগিয়ে গেছে বিশ্বের অপরাপর দেশের রাজনৈতিক দলগুলো থেকে। জনগণের এ আস্থা বাংলাদেশের জন্য শুধু ইতিবাচকই নয়, দেশটির সরকারি দলের রাজনৈতিক অঙ্গীকার পূরণে সাফল্যেরও পরিচায়ক।
এ ক্ষেত্রে বিশ্ব জনমত যাচাইয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন দেশে জাতীয় সংসদের প্রতি মানুষের আস্থা হ্রাস পাচ্ছে। বাংলাদেশে বিরোধী দলের জাতীয় সংসদের অধিবেশন বর্জনের যে সংস্কৃতি চালু হয়েছে এটাও যে দুর্নীতি বৃদ্ধি পাওয়ার একটি কারণ। এতে সরকারের জবাবদিহিতার ক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে পড়েছে। আর প্রতিষ্ঠানগুলোতে দুর্নীতির হাত প্রসারিত হচ্ছে সময় থেকে সময়ে। তাই বাংলাদেশ থেকে দুর্নীতি কমিয়ে আনতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোকে সহনশীল হতে হবে। ক্ষমতাকে দেশের উন্নয়নের প্রয়োজনীয় মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। ক্ষমতার বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর এ জন্য সংসদে আসা প্রয়োজন।
জরিপ মাধ্যমে দুর্নীতির জন্য দায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো চিহ্নিতকরণের পাশাপাশি দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার ক্ষেত্রে সমাধানের কথাও বেরিয়ে এসেছে। জবাবদাতারা তাঁদের অভিমত ব্যক্ত করতে গিয়ে সরকারি নেতৃত্বের পাশাপাশি গণমাধ্যমকেও গুরুত্বপূর্ণ স্থান দিয়েছেন। গণমাধ্যম গণসচেতনতা তৈরিতে সরকারকে সহযোগিতা করতে পারে কিন্তু দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারকেই মূল ভূমিকা পালন করতে হবে। আর সে ক্ষেত্রে সরকারের নির্বাহী শাখাগুলোকে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে পারাটা খুবই জরুরি। এ মুহূর্তে পুলিশ, জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের প্রতি আরো বেশি নজর দেওয়া প্রয়োজন।

No comments:

Post a Comment