Sunday, December 12, 2010

জলপথে চাঁদাবাজি

লে কুমির, ডাঙায় বাঘ_বাংলায় এমন একটা কথা চালু আছে। চাঁদাবাজরা এখন সর্বত্র বিরাজমান। সড়কপথে যে চাঁদাবাজি হয় সেটা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। মালামাল পরিবহনে, কী যাত্রী পরিবহনে_যানবাহনকে পথে পথে চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা না দিয়ে পথ চলা যায় না। কালের কণ্ঠের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, জলপথও চাঁদাবাজমুক্ত নয়। সেখানেও ঘাটে ঘাটে চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা না দিলে নির্যাতনের শিকার হতে হয় নৌযানের চালক ও মাঝিদের। ৩০০ কিলোমিটার জলপথে বছরে অন্তত ৯০ কোটি টাকার চাঁদা আদায় করা হয় বলে কালের কণ্ঠের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত পর্যন্ত প্রায় ৩০০ কিলোমিটার জলপথ চাঁদাবাজ-মাস্তানরা নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। এদের প্রধান টার্গেট জ্বালানি ও নির্মাণসামগ্রী পরিবহনে ব্যবহৃত দেশি লাগসই প্রযুক্তির ইস্পাত নির্মিত নৌযান। কয়লা, পাথর, বালি, সিমেন্টবাহী শত শত নৌযান থেকে এরা নানা অজুহাতে চাঁদা তোলে। টাকা না দিলে মাঝি-মাল্লাদের নির্যাতন করা হয়। একেকটি মালবাহী নৌযানকে সীমান্ত থেকে ঢাকায় পেঁৗছাতে গড়ে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। সে হিসাবে একটি নৌযান বছরে ২৫-৩০টি ট্রিপ দিতে গিয়ে প্রায় তিন লাখ টাকা চাঁদা দেয়। পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে পরিবহন ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, এ রুটের প্রায় তিন হাজার নৌযান থেকে বছরে আদায় করা হচ্ছে কমপক্ষে ৯০ কোটি টাকা। নৌযান মালিক ও শ্রমিকরা দীর্ঘদিন থেকেই নৌপথে অরাজকতা বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছেন। নৌপথ অবরোধও করা হয়েছে। তাঁদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের তৎকালীন উপমহাপরিদর্শকের (অপরাধ) নির্দেশে ২০০৮ সালের ৬ নভেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে নৌপথে অপরাধ দমনে নৌপুলিশ ইউনিট গঠন, নৌথানা স্থাপন, শক্তিশালী নৌযান, জ্বালানির পরিমাণ ও লোকবল বৃদ্ধিসহ ১৫ দফা সুপারিশ করা হয়। দুই বছর পার হয়ে গেলেও এর কোনো সুপারিশ কার্যকর করা হয়নি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আবারও উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় নৌযান মালিক ও নৌপরিবহন শ্রমিক সমিতির পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।
দেশের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব যাঁদের ওপর অর্পিত, তাঁরা সে দায়িত্ব কতটুকু পালন করছেন_সে প্রশ্নটা এখানে অবশ্যই মুখ্য। পরিবহন খাতের চাঁদাবাজি অনেকটা বৈধতা পেয়েই গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে তাঁদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে সরকার বিপুল রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে। কারণ এ খাত থেকে সরকার প্রতিবছর ১০০ কোটি টাকার রাজস্ব পাচ্ছে। কাজেই সরকারের স্বার্থেই জলপথ চাঁদাবাজমুক্ত করা জরুরি।

No comments:

Post a Comment