Sunday, December 12, 2010

স্ত্রীর মর্যাদা আর অনাগত সন্তানের অধিকার পেলেন না পলি

পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা সুরাইয়া বেগম পলি। প্রথমবারের মতো মা হচ্ছেন তিনি। কিন্তু এ নিয়ে পলির আনন্দ নেই। আছে উৎকণ্ঠা! নির্যাতনকারী স্বামী অন্তঃসত্ত্বা পলিকে তালাক দিয়েছে। এখন প্রতারক স্বামীর বিচার আর অনাগত সন্তানের অধিকারের দাবিতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন পলি। মামলা করে ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে সংশয়ে তিনি। পলির অভিযোগ, স্বামী ইরফান হোসেন বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন করে অতিষ্ঠ করে তোলে তাঁর জীবন। একপর্যায়ে বিয়ের দুই মাসের মাথায় অন্তঃসত্ত্বা পলিকে তালাক দেয় ইরফান। কাফরুল থানায় এ বিষয়ে অভিযোগ করা হলেও মামলা নেয়নি পুলিশ। পরে আদালতে মামলা করেও সুরাহা পাচ্ছেন না পলি।

এ নির্যাতিত নারী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমার ওপর অত্যাচারের বিচার চাই। আমার অধিকার চাই। স্ত্রীর সম্মান যদি আমাকে না দেবে, তবে কেন বিয়ে করল? আমার সন্তানের কী হবে। নির্যাতন করে কেন আমাকে রাস্তায় ঠেলে দিল?'
জানা গেছে, ইরফানের সঙ্গে পলির মোবাইল ফোনে পরিচয় আর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ইরফান সাভারে একটি স্টুডিওতে ছবি তোলে। মিরপুর ১৩ নম্বর সেকশনের ৭ নম্বর রোডের ১০/১১ নম্বর বাসা তার। বাবার নাম নাজিমউদ্দিন। গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের উত্তর মতলবে। পলির বাবা
ফজলে আলম মারা গেছেন। চলতি বছরের ১১ জুন পলির ভাইরা ইরফানের সঙ্গে তাঁর বিয়ে দেন। গত ২২ আগস্ট ইরফান পলিকে তালাক দেয়।
পলি জানান, গত ১০ আগস্ট সাভারের নিউ ডিপ ক্লিনিক তাঁকে গর্ভবতী বলে ঘোষণা করে। তিনি এখন পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। বিয়ের সময় দুই লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে ইরফান। প্রথমে তাকে দেড় লাখ টাকার ফার্নিচার দেওয়া হয়। পরে চাহিদা অনুযায়ী টাকা না পেয়ে ইরফান পলির ওপর অমানুষিক নির্যাতন শুরু করে। তাঁকে শারীরিক নির্যাতন করে দেড় শ টাকার স্ট্যাম্পে স্বাক্ষরও নেয়। নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে পলি মিরপুরে তাঁর বোনের বাসায় আশ্রয় নেন। তিনি ইরফানের বিরুদ্ধে সাভার ও মিরপুর থানায় দুটি জিডি করেন। ১০ অক্টোবর কাফরুল থানায় অভিযোগ করলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। কাফরুলের জনকল্যাণ সমিতিতে পলি অভিযোগ করলে এক বিচার-সালিস বসে। গত ৯ অক্টোবর ওই সালিসে ইরফান হাজির হয়নি। এরপর গত ২৫ অক্টোবর নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে আদালতে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় ইরফানের বাবা ও মাকেও আসামি করা হয়। তাঁরা দুজন ইতিমধ্যে আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন ।
পলি আরো জানান, তিনি জানতেন না ইরফান তাঁকে তালাক দিয়েছে। স্থানীয় ৪ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনারের কার্যালয়ে বিচার দিতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন যে তাঁকে তালাক দেওয়া হয়েছে। তালাকের নোটিশে ইরফান উল্লেখ করে, বনিবনা হয় না, স্বামীর অবাধ্য, পরকীয়া সম্পর্ক, শরিয়তবিরোধী চলাফেরা ও উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন।
আদালতের নির্দেশে পলির দায়ের করা মামলার তদন্ত করছেন কাফরুল থানার উপ-পরিদর্শক জাহিদুল ইসলাম। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'মূল আসামি ছাড়া চারজনই জামিন নিয়ে এসেছে। মূল আসামিকে ধরতে ৯ বার বাসায় রেইড দিয়েছি আমরা। বাদীকে বলা হয়েছে, আসামির অবস্থা সম্পর্কে তথ্য দিতে। কিন্তু বাদী আমাদের সহায়তা করে না।'

No comments:

Post a Comment