Saturday, December 11, 2010

যে খবর নাড়া দেয়ঃ ‘অমানুষ’ গৃহপরিচারক

রিচারকেরা কি মানুষ? এর উত্তর একই সঙ্গে হ্যাঁ ও না। চীনের একটি রেস্তোরাঁয় মনুষ্য-পরিচারকদের জায়গা দখল করেছে রোবট-পরিচারক। কিন্তু বাংলাদেশের ঘরে ঘরে যে লাখ লাখ গৃহপরিচারক আছেন, তাঁরা কি মানুষ? মানুষ হলে কেন তাঁদের এমন দাসের জীবন?

গত বৃহস্পতিবারের প্রথম আলোর শিরোনাম ‘পরিচারকেরা কেউ মানুষ নয়’ পড়ে তাই চমকে যেতে হয়। সঙ্গে সঙ্গে মনে ভেসে ওঠে বাংলাদেশের ঘরে ঘরে গার্হস্থ্য শ্রম দেওয়া অসংখ্য নারী ও শিশুর কথা। মাঝেমধ্যেই তাদের কাউকে কাউকে বেঁধে রাখা, পিটিয়ে ক্ষতবিক্ষত করা, পোড়ানো, ছাদ থেকে ফেলে দেওয়াসহ অভিনব ধরনের অনাচারের শিকার হতে দেখা যায়। অল্পবয়সী মেয়েদের ওপর যৌন নির্যাতনও যেন অনেকটা ‘স্বাভাবিক’। তারা হয়তো মানুষই নয়। নইলে মানুষের সেবা করেও মানুষের জীবন তারা পায় না কেন?
রোবটের সুখ-দুঃখের অনুভূতি নেই। তারা কষ্ট পায় না, কেবল নষ্ট হয়ে যায়। আঘাত ও অপমানে কষ্ট পাওয়া মানুষের ধর্ম। তাই রোবট-পরিচারক বরং অনেক ভালো। কথা শুনবে, রা করবে না, নষ্ট হলে মেরামত করাও সহজ। কিন্তু মনুষ্য-পরিচারকেরা কষ্ট পায়, কাঁদে কিংবা প্রতিবাদ করে এবং পালায়। কেবল আহত-নিহত কিংবা ‘নিখোঁজ’ হলেই তারা সংবাদ হয়। পিটিয়ে কেবল ডাকাতই মারা হয় না এ দেশে, গৃহকর্মী নিধনও চলে।
অনেকে আবার কিছুটা সহানুভূতিশীল। তাঁদের চোখে গৃহপরিচারকেরা মানুষ হলেও পুরো মানুষ নয়। কেবল দেশেই নয়, বিদেশে কাজ করা বাংলাদেশি গৃহশ্রমিকদের অনেকেও এ রকম ‘অমানুষ’ গণ্য হন। কিন্তু যারা তাদের মানুষ মনে করে না, তারা কেমন মানুষ? যে মানুষ অপর মানুষকে দাস ভাবে, সেই মানুষ কি মানুষের মতো মানুষ?
—ফারুক ওয়াসিফ

No comments:

Post a Comment