Saturday, December 11, 2010

 ভাগ্যের হাতে বিশ্বকাপ ভেন্যু!

ড্রেসিংরুমের সিঁড়ি দিয়ে নেমে ভিআইপি গ্যালারির লোহার গেটের সামনে থেমে যাচ্ছেন সবাই। একবার মাঠের থকথকে কাদার দিকে তাকাচ্ছেন, আরেকবার পায়ের কেডসের দিকে। মাঠের কাদা-পানিতে সাধের কেডস জোড়া যদি নষ্ট হয়ে যায়! সাকিব আল হাসান বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিলেন। অন্যরা শেষ পর্যন্ত কেডসে কাদা মেখে মাঠে নামলেও সাকিব নামলেন স্লিপার পায়ে। মাঠ দেখে ফেরার সময় সেই স্লিপার জোড়া তুলে নিলেন এক হাতে, আরেক হাতে টেনে ধরলেন ট্রাউজার।

যেখানেই পা দিচ্ছেন, পায়ের চাপে দুদিক থেকেই যে ছলকে উঠছে পানি। সকালে সোয়া এক ঘণ্টার বৃষ্টি জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের মাঠকে দুপুর পর্যন্তও খেলার অনুপযুক্ত করে রাখল।
বিশ্বকাপ ভেন্যু পর্যবেক্ষণ করতে আইসিসির প্রতিনিধিদল এখন বাংলাদেশে। কাল ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম দেখার পর বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড ও হল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের দুটি ম্যাচের ভেন্যু জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম পরিদর্শনে আজ আসবে চট্টগ্রামে। আসার আগে আইসিসির লোকজন নিশ্চয়ই জেনে গেছেন, এ মাঠে পানি নিষ্কাশনব্যবস্থা বলতে কিচ্ছু নেই। নইলে সকালের ওই বৃষ্টির পর দুপুর নাগাদও পানি সরবে না কেন? ম্যাচ রেফারি ক্রিস ব্রড আর দুই দলের অধিনায়ক মাথার ওপর জ্বলজ্বলে সূর্য রেখেও কেন ন্যূনতম ‘টি-টোয়েন্টি’ ম্যাচ খেলার পক্ষেও একমত হতে পারবেন না?
এ নিয়ে মনে ক্ষোভ থেকে থাকলেও বাংলাদেশ দলের কোচ-খেলোয়াড়েরা মুখে ‘আবহাওয়ার ওপর তো কারও হাত নেই’ বলে এড়িয়ে যেতে চাইলেন। কিন্তু অ্যালান বুচারের তো সেই দায় নেই! জিম্বাবুয়ে দলের কোচ তাই বলে ফেললেন, ‘এ রকম মাঠে হয়তো ফুটবল ম্যাচও বাতিল করে দিতে হতো। ঘাসগুলো অনেক লম্বা এবং ঘন। আউটফিল্ড জঘন্য রকমের স্লো।’
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের মাঠের মতো পানি সরার জন্য মাটির নিচে নিষ্কাশনব্যবস্থা নেই এখানে। পানি সরার কথা মাঠের ঢাল দিয়ে গড়িয়ে। কিন্তু পর্যাপ্ত পরিচর্যার অভাবে মাঠের মাটি আলগা হয়ে গেছে। বড় হয়ে গেছে ঘাস। পানি গড়িয়ে যাবে কীভাবে? মাঠের অযত্ন-অবহেলাতেই কালকের ম্যাচটা বাতিল হওয়ার মূল কারণ।
এ জন্য অনেকেই দায়ী করছেন বিশ্বকাপের মাত্র মাস তিনেক আগে কিউরেটর পরিবর্তন করার সিদ্ধান্তকে। বিসিবির কিউরেটর শফিউল আলম গত প্রায় চার বছর এই মাঠের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁকে সরিয়ে মাস দেড়েক হলো কিউরেটর করা হয়েছে জাহিদ রেজাকে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বেলাল (শফিউল আলম) মাঠটাকে ঠিক রেখেছিল। নতুন কিউরেটর এসে সেভাবে মাঠের যত্ন নেননি। নেবেন কীভাবে? মাঠ সম্পর্কে তো তাঁর ভালো ধারণাই নেই! এ মাঠে অনেক দিন ধরে কাজ করায় মাঠটা সম্পর্কে বেলালের খুব ভালো ধারণা ছিল। বিশ্বকাপের আগে তাঁকে এখান থেকে সরানো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে।’ জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্টেডিয়ামের কিউরেটর পরিবর্তনের নেপথ্যে বিসিবির একজন ক্ষমতাশালী পরিচালকের ইচ্ছাই কাজ করেছে বেশি। গ্রাউন্ডস কমিটি কিউরেটর পরিবর্তনের পক্ষে না থাকলেও একরকম জোর করেই কাজটা করিয়ে নিয়েছেন ওই পরিচালক।
বিসিবির গ্রাউন্ডস কমিটির প্রধান শফিকুর রহমান এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। কালকের পরিস্থিতির জন্য তিনি দায়ী করেছেন নিষ্কাশনব্যবস্থাকেই। সেটাও যদি হয়, বিশ্বকাপের আগে কেন সেটি ঠিক করা হলো না? শফিকুর রহমানের ব্যাখ্যা, ‘বিশ্বকাপের আগে এত বড় কাজে হাত দেওয়া অসম্ভব ছিল। তবে বিশ্বকাপের পর ফতুল্লা এবং চট্টগ্রামের মাঠের ড্রেনেজ-ব্যবস্থাও আধুনিক করা হবে। আমরা ইতিমধ্যেই খুলনা স্টেডিয়ামের ড্রেনেজ-ব্যবস্থা আধুনিক করেছি।’
চট্টগ্রামে বিশ্বকাপের ম্যাচ দুটি হবে ১১ ও ১৪ মার্চ। সময়টা কালবৈশাখীর, বৃষ্টির আশঙ্কাও থাকবে তখন। আধুনিক নিষ্কাশনব্যবস্থা নেই বলে কি তাহলে এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে পণ্ড হয়ে যাবে বিশ্বকাপের ম্যাচও! শফিকুর রহমানের কথায় মনে হলো, এ মাঠে বিশ্বকাপের ম্যাচ দুটিকে ভাগ্যের হাতেই ছেড়ে দিচ্ছেন তাঁরা, ‘আমরা একটা চান্স নিচ্ছি। আশা করি, তখন বৃষ্টি হবে না...।’

No comments:

Post a Comment