Friday, February 11, 2011

সরকারের কর্মকাণ্ডে দল ও মহাজোটে অস্বস্তি

রকারের নানা কর্মকাণ্ডে ক্ষমতাসীন দল ও জোটে ক্ষোভ বাড়ছে। মহাজোটের শরিক দলের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতা-সাংসদেরাও এখন সরকারের ব্যর্থতার কথা বলছেন। চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট, শেয়ারবাজারে ধস ও রাস্তাঘাটের দুরবস্থা নিয়ে অস্বস্তিতে আছেন মহাজোটের সাংসদেরা। এলাকায় গেলে তাঁরা জনগণের প্রশ্নের মুখে পড়ছেন বলে জানিয়েছেন।

মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ সরকারের কর্মকাণ্ডে প্রকাশ্যেই হতাশা প্রকাশ করছেন। অপর দুই শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু সংবাদ সম্মেলন করে সরকারের বেশ কিছু ব্যর্থতা তুলে ধরেছেন।
আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কাজে সমন্বয় না থাকায় সরকারের নিয়ন্ত্রণ শিথিল হচ্ছে। তা ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ কিছু মন্ত্রণালয়ে ব্যবসায়ী-মন্ত্রীরা থাকায় সমস্যা হচ্ছে। এ কারণে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
যোগাযোগ করা হলে সরকারি দলের সাংসদ ফজলে রাব্বী মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, চাল-ডাল-তেলের দাম এক বছরে কয়েক দফা বেড়েছে। এগুলো নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। নির্বাচনী এলাকায় গেলে কথা শুনতে হয়।
সরকারি দলের আরেকজন সাংসদ ইমাজউদ্দিন প্রামাণিক বলেন, শেয়ারবাজার নিয়ে অনেক মানুষ সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন। চাল-ডালের দাম ক্রয়সীমার বাইরে চলে যাচ্ছে। সরকারকে এখনই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। একই দলের ইসরাফিল আলম বলেন, চালের দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষের কষ্ট বেড়েছে। এলাকায় গেলে মানুষ এসব নিয়ে নানা প্রশ্ন করে।
এ ছাড়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক সাংসদ বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, অসহনীয় বিদ্যুৎ-সংকট, শেয়ারবাজারে দরপতন সরকারের জনপ্রিয়তা কমিয়েছে। আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হবিগঞ্জের উপনির্বাচনে পরাজয় এটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। পৌরসভা নির্বাচনের ফলও সরকারি দল খুব একটা ভালো করেনি। আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও এর প্রভাব পড়তে পারে।
একজন সাংসদ বলেন, সাংসদদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মাসে অন্তত একবার বৈঠক করা উচিত। তাহলে মাঠের পুরো খবরটা তিনি জানতে পারবেন। বিভিন্ন সংস্থা থেকে আসা তথ্যের সঙ্গে তা মেলাতে পারবেন। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে বিদ্যুৎ-গ্যাসের সংযোগ বন্ধ থাকায় সারা দেশে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
স্পিকার আবদুল হামিদ শ্রীলঙ্কা সফরে যাওয়ার আগে গত মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, এটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই। সাধারণ মানুষের মধ্যে এ নিয়ে ক্ষোভ আছে। বিশ্ববাজারে দাম বাড়ল না কমল, তা গ্রামের সাধারণ মানুষের বিবেচনায় থাকার কথা নয়। তিনি বলেন, রাস্তাঘাট ভাঙাচোরার বিষয়ে তোফায়েল আহমেদের বক্তব্যকে টেবিল চাপড়ে সমর্থন করেছেন সাংসদেরা। জনগণের যেকোনো ভোগান্তি নিয়ে সংসদে আলোচনা হতে পারে।
আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা জানান, সরকারের সিদ্ধান্ত থাকার পরও দ্রব্যমূল্য সহনশীল রাখার কার্যকর পন্থা উদ্ভাবন করা যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ-সংকট নিরসনে দেরিতে পদক্ষেপ নেওয়ায় ভবিষ্যতে এ সমস্যার সমাধান হবে—এমনটা বিশ্বাস করতে পারছে না জনগণ। একইভাবে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলাও রোধ করা যাচ্ছে না।
আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের নেতারা মনে করেন, সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড গতানুগতিক। গত দুই বছরে চোখে পড়ার মতো কোনো উন্নয়ন সরকার দেখাতে পারেনি। অনেক পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবায়ন কম। তাঁদের মতে, সরকারের ভুল সংশোধন করে ব্যর্থতা কাটিয়ে আগামী দিনে পথ চলা উচিত। এটাই গণতান্ত্রিক সরকারের ধর্ম।
জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু প্রথম আলোকে বলেন, মহাজোটের শরিকদের রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগাতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। ঐক্যবিরোধী একলা চলার নীতি প্রাধান্য পেয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একজন প্রবীণ নেতা ও সাংসদ প্রথম আলোকে বলেন, রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জন করতে হলে রাজনৈতিক সরকার দরকার। আমলাতান্ত্রিক সরকার দিয়ে রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। তা ছাড়া সরকারের সঙ্গে দল ও জোটের একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে।
তবে কয়েকজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী মনে করেন, জোট ও দলের মধ্যে ক্ষুব্ধ অংশটি সরকারের ব্যর্থতার কথা প্রচার করছে। সরকারের অনেক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। পর্যায়ক্রমে সব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হবে।
স্বতন্ত্র সাংসদ ফজলুল আজিম প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি দলের সদস্যদের মনেও অনেক ক্ষোভের কথা রয়েছে। কিন্তু তাঁরা তা বলতে পারছেন না। এলাকায় গেলে সাধারণ মানুষ নিশ্চয়ই চাল-ডালের দাম বাড়ার কারণে কষ্টের কথা তাঁদের বলেন। তিনি বলেন, সরকার বিরোধী দলকে আশ্বাস দিচ্ছে যে, সংসদে এলে সব কথা বলার সুযোগ দেওয়া হবে। কিন্তু এখন সরকারি দলই সে সুযোগ পাচ্ছে না।

No comments:

Post a Comment