Thursday, February 17, 2011

অপূরণীয় ক্ষতি

বার বিমান দুর্ঘটনা। এবার বরিশালে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান আছড়ে পড়ল। নিহত হলেন বিমানের দুই বৈমানিক। এ নিয়ে গত ৩৮ বছরে দেশে বিমান দুর্ঘটনায় ২২ বৈমানিকসহ ৭৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। বিমানবাহিনীর এই প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় দুই পাইলটের মৃত্যু দুঃখজনক।

বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার সঠিক কোনো কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, বড় কোনো সমস্যার কারণেই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে। বিমানবাহিনীর প্রধানও তেমনটি বলেছেন। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ বিষয়ে বিশদ জানা যাবে।
প্রাপ্ত খবরে দেখা যাচ্ছে, বিমানবাহিনীর যে প্রশিক্ষণ বিমানটি গত সোমবার বরিশালে বিধ্বস্ত হয়েছে, সেটি ২০ বছর আগে কেনা। এ ধরনের বিমান বিমানবাহিনীতে আরো আছে। বাংলাদেশে পিটি-৬ মডেলের বিমানের এটাই প্রথম দুর্ঘটনা। নিয়মিত প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে বিমানটি নিয়ে বিমানবাহিনীর দুই স্কোয়াড্রন লিডার আকাশে উড়েছিলেন। তাঁদের বরিশাল বিমানবন্দরে যাওয়ার কথা ছিল। সে অনুযায়ী যশোর বিমানঘাঁটি থেকে বরিশাল বিমানবন্দরকে জানানোও হয়েছিল। বরিশাল বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ থেকে জানা গেছে, প্রশিক্ষণ বিমানটি বিমানবন্দরে অবতরণের কোনো সংকেত দেয়নি। রানওয়েতে না নেমে বেরিয়ে যাওয়ার সময় বিমানটি একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে বিধ্বস্ত হয়। এভাবে রানওয়ে স্পর্শ না করে উঠে যাওয়াকে প্রশিক্ষণের ভাষায় বলে 'কাট অ্যান্ড গো'। ধারণা করা যেতে পারে, এটা বৈমানিকদের, বিশেষ করে যুদ্ধবিমানের বৈমানিকদের বিশেষ ধরনের দক্ষতা। প্রশিক্ষণ বিমানে উড়তে গিয়ে সে দক্ষতার পরিচয় দিতে চেয়েছিলেন দুই বৈমানিক। সে সময় কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিতে পারে। সেই যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিমানটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় যেতে ব্যর্থ হয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে বিধ্বস্ত হতে পারে। দুর্ঘটনার আগে ও পরে চারটি বিমান বরিশাল থেকে ঘুরে গেছে। সেই বিমানগুলো দুর্ঘটনায় পড়েনি। দুর্ঘটনায় পড়েছে এই বিমানটি।
আগেই বলা হয়েছে, সামরিক বা বেসামরিক বিমানের দুর্ঘটনা এটাই প্রথম নয়। বিশেষ করে সামরিক প্রশিক্ষণ বিমানের দুর্ঘটনা আগেও ঘটেছে। বিমানবাহিনীর যে দুই কর্মকর্তা এই বিমানের বৈমানিক হিসেবে ছিলেন, তাঁরা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ভেতর দিয়ে বিমানবাহিনীতে এসেছিলেন। তাঁদের স্বপ্ন ছিল অনেকটা পথ যাওয়ার। তাঁদের পরিবারও তাঁদেরকে ঘিরে স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু একটি দুর্ঘটনা সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। একই সঙ্গে হয়েছে রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি। যেকোনো দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। একটি দুর্ঘটনা একটি পরিবারকে অসহায় অবস্থায় ঠেলে দেয়। এর আগেও অনেক সামরিক বিমান ও হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়েছে। হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যশোর এরিয়ার জিওসি ও একজন লে. কর্নেল নিহত হন। গত সেপ্টেম্বরে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান চট্টগ্রামে বিধ্বস্ত হয়। দেখা যাচ্ছে, বিমান দুর্ঘটনা ঘটছেই; বিশেষ করে প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনাকবলিত হচ্ছে।
বিষয়টির দিকে সবারই দৃষ্টি দেওয়া দরকার। একের পর এক প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় দেশ ও নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। যেসব প্রশিক্ষণ বিমান আছে, সেগুলো ঠিকমতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই উড্ডয়নের অনুমতি দিতে হবে। দুর্ঘটনা হঠাৎ করেই ঘটে, কিন্তু একটু সাবধানতা অবলম্বন করলে তা রোধ করা যায়। প্রশিক্ষণ বিমানের ক্ষেত্রে এই সাবধানতা আরো জরুরি। বিমানের কারিগরি দিকগুলো বিশেষভাবে পরীক্ষা করতে হবে। সংশ্লিষ্ট সবারই এ ব্যাপারে কঠোর সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

No comments:

Post a Comment