Thursday, February 17, 2011

জিম্মি নাবিকদের মুক্ত করুন

ত ৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশের পতাকাবাহী এমভি জাহান মনি সিঙ্গাপুর থেকে সুয়েজ খাল হয়ে ইউরোপের উদ্দেশে যাওয়ার পথে আরব সাগরে প্রবেশ করলে লাক্ষা দ্বীপপুঞ্জের কাছে সোমালি জলদস্যুরা একে ধাওয়া করে। জাহাজটি দখল করে তারা সোমালি উপকূলে নিয়ে যায় এবং ৬২ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।

পণ্যবোঝাই জাহাজটিতে ২৫ জন নাবিক এবং জাহাজের প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রীও রয়েছেন। কিন্তু বেশ কয়েক দিন পার হয়ে গেলেও এখনো সরকার বা জাহাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউ এ সমস্যার কোনো সমাধানে পেঁৗছতে পারেনি। পরিস্থিতি খুব আশাপ্রদ নয় দেখে নাবিকদের নিকটাত্মীয়রা রবিবার সংবাদ সম্মেলন করে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেন। তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন যেকোনো মূল্যে নাবিকদের জীবিত ফিরিয়ে আনার। এখন শুধু নাবিকদের আত্মীয়স্বজনই নয়, গোটা দেশ তাকিয়ে আছে প্রধানমন্ত্রী কী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। এ কথা ঠিক, এমন তীব্র ও বিব্রতকর অবস্থায় বাংলাদেশকে কখনো পড়তে হয়নি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এ ধরনের সংকটে কী করণীয়, তাও বোধ করি বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ভালো করে জানা ছিল না। ব্রিটেন, ভারত, রাশিয়া, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিশালী দেশগুলোকে প্রতিনিয়তই সোমালি জলদস্যুদের মোকাবিলা করতে হচ্ছে। বিগত দিনে সোমালি জলদস্যুদের দমন করতে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও রাশিয়া যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছে। ব্রিটিশ নৌবাহিনী সোমালি উপকূলে অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু কিছুতেই জলদস্যুদের দমন করা যাচ্ছে না। বরং জার্মানির মতো বিশ্বের অনেক শক্তিশালী দেশ মুক্তিপণ দিয়ে জানমাল রক্ষা করতে বাধ্য হয়েছে। তাই বলে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে কেন? বাংলাদেশকে তার নিজের মতো করেই জলদস্যুদের হাত থেকে জানমাল রক্ষার চেষ্টা চালাতে হবে। প্রথমেই সরকারকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে, মুক্তিপণ দিয়ে নাবিকদের রক্ষা করা হবে কি না। যদি সরকার মুক্তিপণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে দ্রুত সেটা সোমালি জলদস্যুদের অবহিত করতে হবে। আর যদি মুক্তিপণ না দিয়ে সোমালিয়া সরকার ও বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে চায়, তাহলে দেশগুলোর সঙ্গে দ্রুত আলোচনা করতে হবে। সর্বোপরি কী ধরনের সিদ্ধান্ত সরকার গ্রহণ করছে, তা সাধারণ মানুষকে তাৎক্ষণিক জানাতে হবে। সরকারের মনে রাখা দরকার, বিষয়টি শুধু নাবিকদের আত্মীয়স্বজন নয়, সারা দেশের মানুষের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। সোমালি জলদস্যুদের হাত থেকে দেশের ২৬ জন নাগরিককে উদ্ধারের চেষ্টার ওপর সরকারের পররাষ্ট্রবিষয়ক ভাবমূর্তি অনেকটা নির্ভর করছে। এমভি জাহান মনিতে জিম্মি নাগরিকরা কোনো দুর্ঘটনার শিকার হলে সরকারকে দেশের মানুষের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। মোট কথা, যে করেই হোক, দেশবাসী দেখতে চায়, তাদের নাগরিকরা অক্ষত অবস্থায় ফিরে এসেছে। মানবিক বিবেচনাকেই জিম্মি সমস্যার সমাধানে সর্বোচ্চ স্থান দিতে হবে। উল্লেখ্য, নেদারল্যান্ডস, ব্রিটেন, জার্মানির মতো দেশগুলো বিগত দিনে মুক্তিপণ দিয়ে তাদের নাগরিকদের ছাড়িয়ে নিয়েছে। সুতরাং এ সম্ভাবনার কথাও সরকারকে মাথায় রাখতে হবে।

No comments:

Post a Comment