Thursday, February 09, 2012

যুবলীগ নেতা দিদার হত্যাঃ পরিবার ও গ্রামবাসী আতঙ্কে

সন্ত্রাসীদের গুলিতে যুবলীগ নেতা দিদার খুন হওয়ার পর কক্সবাজারের মহেশখালীর ডেবাংগাকাটা গ্রামবাসী ও পরিবারে আতঙ্ক বিরাজ করছে। হত্যাকাণ্ডের ৩০ দিন অতিবাহিত হলেও কোনো ঘাতককে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি।

উল্টো এ হত্যায় জড়িত সালাহ উদ্দিন বাহিনীর সন্ত্রাসীরা এলাকায় তাণ্ডবলীলা চালাচ্ছেন। তাদের হুমকি ধামকিতে নিহত দিদারের স্ত্রী সন্তান ও প্রতিবেশীরা চরম আতঙ্কে রয়েছেন।

এদিকে এ হত্যা মামলা নথিভুক্ত না করায় হাইকোর্ট ডিভিশনের একটি দ্বৈত বেঞ্চ ৬ ফেব্রুয়ারি মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রঞ্জিত কুমার বড়ুয়াকে শোকজ করেছে। আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে হাজির হয়ে শোকজের জবাব দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

অপরদিকে গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেছেন, সন্ত্রাসীরা এলাকার লবণের মাঠ, পানের বরজ, স্থানীয় বাজার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত চাঁদাবাজি করে চলেছে। রাতের বেলায় তারা এলাকায় অস্ত্রের মহড়া দিয়ে দিদার হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে পুলিশ ও সাংবাদিকদের কাছে মুখ না খোলার জন্য হুমকি দিচ্ছে। এ নিয়ে যারা বাড়াবাড়ি করবে তাদের পরিণতিও দিদারের মতোই হবে বলেও তারা জানাচ্ছে।

জানা গেছে, দিদার হত্যার বিচার চেয়ে প্রশাসনের কাছে ধর্না দেয়ায় সন্ত্রাসীরা ৩১ জানুয়ারি স্থানীয় ইউপি মেম্বার আলমগীরের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।

উল্লেখ্য, ৮ জানুয়ারি ফজরের নামাজের পর উপজেলার বড় মহেশখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ফোরকান আহমদের বড় ছেলে যুবলীগ নেতা দিদারকে ডেবাংগাকাটা গ্রামে তার বাড়ির কাছেই সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে। এর পরপরই র‌্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে। খবর পেয়ে মহেশখালী থানার পুলিশও ঘটনাস্থলে পৌঁছে। এসময়  দিদারের লাশ ও কয়েকটি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে।

দিদারের পরিবারের দাবি র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে উদ্ধারকৃত অস্ত্রগুলো ফেলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।

সম্প্রতি একদল সাংবাদিক ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলে গ্রামের নারী-পুরুষ অনেকেই সেদিনের লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামবাসীরা জানান, এ পৈশাচিক হত্যার পর প্রশাসনের কেউ খবর নিতে আসেনি। সাংবাদিকরাই প্রথম এসেছে। তাদের কাছে এ বিষয়ে মুখ খুললে বিপদে পড়ার আশঙ্কা করেন গ্রামবাসী।

দিদারের ছোট বোন রিজিয়া তার ভাইয়ের হত্যার বিচার দাবি করে পরিবারের অপরাপর সদস্যদের নিরাপত্তার জন্য আবেদন জানান।

বড় মহেশখালী ইউনিয়নের সংরক্ষিত আসনের ইউপি সদস্য জয়নাব বেগম তার এলাকায় সন্ত্রাসী সালাহ উদ্দিন বাহিনীর নানা অপকর্ম ও অপরাধের কথা স্বীকার করে জানান বর্তমানে এলাকাবাসী তাদের জানমাল নিয়ে উদ্বিগ্ন।

মহেশখালী থানার এসআই জহির বলেন, “ইউপি সদস্য আলমগীরের বসতবাড়ি ও সালাহ উদ্দিনের গোয়াল ঘরে ৩১ জানুয়ারি রাতে কে কারা অগ্নিসংযোগ করে। আমি মামলা দুটি তদন্ত করছি। তবে ঘটনার ব্যাপারে একে অপরকে দায়ী করছে।”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ইউপি সদস্য আগে মামলা করেন পরে সালাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে  পাল্টা মামলা দায়ের করা হয়।

ইউপি সদস্য আলমগীর জানান, তার ভাই দিদারকে হত্যার পর সন্ত্রাসীরা ওইদিন রাতে তার বসতবাড়ি পুড়িয়ে দেয়।

এস আই জহির জানান, সালাহ উদ্দিন একজন তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। তিনি  ৮ জানুয়ারি থেকে পলাতক রয়েছেন। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই ইকবাল জয়নাল দিদার হত্যা নিয়ে র‌্যাব একটি এজাহার দায়ের করেছে।

বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে।

মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রণজিত বড়ুয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দিদার হত্যার ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এদিকে দিদার হত্যার মামলা নথিভুক্ত না করায় মহেশখালী থানার ওসি রঞ্জিত বড়ুয়াকে শোকজ করেছে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি ওসিকে স্বশরীরে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সোমবার বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের সমন্বয় গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

নিহত দিদারের পিতা ফোরকান আহমদের দায়ের করা একটি রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের বেঞ্চ এ শোকজ করেন। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি), কক্সবাজার জেলার পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্টদের আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

No comments:

Post a Comment