Friday, May 25, 2012

দ্রোহ ও প্রেমের কবি নজরুলের জন্মবার্ষিকী আজ

‘মহাবিদ্রোহী রণক্লান্ত/আমি সেই দিন হব শান্ত,/ যবে উত্পীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না-/অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না’ বলেছিলেন সাম্য, দ্রোহ ও প্রেমের কবি কাজী নজরুল ইসলাম।

আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ তাঁর ১১৩তম জন্মজয়ন্তী। এ বছর তাঁর কালজয়ী কবিতা ‘বিদ্রোহী’র প্রকাশনার ৯০ বছর পূর্তি হচ্ছে। এ বিষয়টি জন্মজয়ন্তীতে যোগ করেছে বিশেষ মাত্রা।
বরাবরের মতোই সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সারা দেশে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনটি উদ্যাপিত হবে। শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় জাতি স্মরণ করবে জাতীয় কবিকে।
কাজী নজরুল বাংলা ১৩০৬ সালের ১১ জ্যৈষ্ঠ (১৮৯৯ সালের ২৪ মে) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি যেমন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শোষণের শৃঙ্খল ভাঙার আহ্বান জানিয়ে কবিতা ও গান লিখেছেন, তেমনি লিখেছেন প্রেম-সাম্যের গান ও কবিতা। তাঁর কবিতা ও গান আমাদের স্বাধীনতাসংগ্রামেও অনুপ্রেরণা জুুগিয়েছে। তাঁর লেখা ‘চল চল চল’ বাংলাদেশের রণসংগীত। গান ও কবিতার মতো তাঁর রচিত গল্প, নাটক, উপন্যাসও বাঙালির অনন্ত প্রেরণার উৎস হয়ে আছে।
বাংলায় সর্বোচ্চসংখ্যক তিন সহস্রাধিক গানের স্রষ্টা কাজী নজরুল ইসলাম। নিজস্ব ধারার সংগীত রচনা করেছেন তিনি। প্রকৃত অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্ভাসিত কবি মানুষের সংকীর্ণতা, দীনতা, মূঢ়তা, নিচতাকে মনেপ্রাণে ঘৃণা করেছেন।
‘দুখু মিয়া’ বাংলার দামাল ছেলের প্রতীক। তিনি বিদ্রোহী, তিনি সংগ্রামী, তিনি প্রেমিক, তিনিই শান্তির বর্তাবাহক। কবি নজরুল তাঁর প্রত্যয়ী ও বলিষ্ঠ লেখনীর মাধ্যমে এ দেশের মানুষকে মুক্তিসংগ্রামে অনুপ্রাণিত করেছেন, জাগ্রত করেছেন জাতীয়তাবোধ। কবির কলম শাসকের অস্ত্রের চেয়ে বেশি শক্তিমান ছিল।
স্বাধীনতার পর সৃষ্টিশীল এই মহান কবির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তাঁর প্রতি সম্মান জানাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কবি ও তাঁর পরিবারকে কলকাতা থেকে ঢাকায় এনে স্থায়ীভাবে বসবাসের ব্যবস্থা করেন। তাঁকে এ দেশের জাতীয় কবির মর্যাদায় ভূষিত করা হয়। বাংলা ১৩৮৩ সালের ১২ই ভাদ্র কবি মৃত্যুবরণ করেন। ‘মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই’ তাঁর গানের কথা স্মরণে রেখে তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে সমাহিত করা হয়। আজ তাঁর সেই অন্তিম শয্যা ছেয়ে যাবে অগণিত অনুরাগীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার ফুলে ফুলে।
কাজী নজরুল ইসলামের ১১৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রী পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান তাঁর বাণীতে বলেন, ‘সাম্য ও মানবতার কবি নজরুল বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাসে একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাঁর বর্ণাঢ্য কর্মজীবন ও সৃজনশীল কর্ম আমাদের অন্তহীন অনুপ্রেরণার উৎস। কবির ক্ষুরধার অগ্নিঝরা লেখনী শোষিত-নির্যাতিত ও বঞ্চিত ব্যক্তিদের অধিকার আদায়ে আমাদের সোচ্চার করে, শিক্ষা দেয় অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেন, ‘বাংলা সাহিত্যে কবি কাজী নজরুল ইসলাম এক অবিস্মরণীয় নাম। কালজয়ী প্রতিভার অধিকারী নজরুল ছিলেন সাম্য, মানবতা, তারুণ্য ও দ্রোহের কবি। তিনি ছিলেন বাংলা গানের বুলবুল।’
বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া বলেন, ‘জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যের অবিসংবাদিত প্রাণপুরুষ। লেখনীর মাধ্যমে তিনি জুলুম-অত্যাচার-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।’

জন্মজয়ন্তী উদ্যাপনে বিভিন্ন কর্মসূচি
নজরুলজয়ন্তী উপলক্ষে আজ সকাল সাড়ে ছয়টায় কবির মাজারে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হবে। বাংলাদেশ-ভারত যৌথ আয়োজনের পাশাপাশি রাজধানীতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন নজরুলজয়ন্তী পালন করবে।
বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানমালা আজ সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের আইন ও বিচার এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়বিষয়ক মন্ত্রী সালমান খুরশিদ। তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে এতে নজরুলবিষয়ক স্মারক বক্তৃতা দেবেন নজরুল গবেষক ও অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম।
বিকেলে দুই দিনের নজরুলজয়ন্তীর অনুষ্ঠান শুরু হবে শিল্পকলা একাডেমীতে। এতে রয়েছে গান, নৃত্য, কবিতা আবৃত্তি ও নাটক মঞ্চায়ন। এ ছাড়া দুই দিনই শিল্পকলা একাডেমী লবিতে নজরুল ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে নজরুলসংক্রান্ত পুস্তক প্রদর্শনীর আয়োজন রাখা হয়েছে।
নজরুলজয়ন্তীতে দুই দিনব্যাপী বর্ণিল অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে ছায়ানট। নৃত্য-গীত, কবিতাপাঠ ও বক্তৃতা দিয়ে সাজানো হয়েছে এসব অনুষ্ঠান।
প্রতিবছরের মতো এবারও চ্যানেল আই নিজম্ব প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নজরুল মেলা। মেলার খোলা মঞ্চ থেকে পরিবেশিত হবে নবীন-প্রবীণ শিল্পীদের পরিবেশনায় নজরুলসংগীত, নৃত্যনাট্য, শিশুনৃত্য ইত্যাদি। থাকবে নজরুলের কবিতা থেকে চিত্রশিল্পীদের চিত্রাঙ্কন।
তিন দিনব্যাপী নজরুলজয়ন্তীর অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে নজরুল একাডেমী। আজ এর শেষ দিন। আজ বিকেলে মগবাজারে একাডেমী প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিতব্য অনুষ্ঠানের মধ্যে থাকবে একাডেমীর শিক্ষার্থীদের মানোন্নয়নমূলক অনুষ্ঠান ও উন্মুক্ত নজরুল মঞ্চ। এতে অভ্যাগত ব্যক্তিরা নজরুলবিষয়ক পাঠ কিংবা পরিবেশনা উপস্থাপন করবেন। প্রায় শতবর্ষ আগের কবি নজরুলের সঞ্চৃতি নিয়ে এ বছর ত্রিশালের চারটি স্থানে পালিত হবে নজরুলজয়ন্তী উৎসব। ইতিমধ্যে অনুষ্ঠান শুরুর এক দিন আগেই জমে উঠেছে নজরুল মেলা। এ বছর কবির সঞ্চৃতিবিজরিত দরিরামপুর নজরুল মঞ্চে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।

No comments:

Post a Comment