Saturday, June 02, 2012

সেন্ট মার্টিনে অবাধে চলছে পাথর আহরণ

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিনে অবাধে পাথর আহরণ করায় জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে। সরকারিভাবে নিষিদ্ধ হওয়ার পরও একটি চক্র এভাবে পাথর আহরণ করছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় একটি চক্র শ্রমিক নিয়োগ করে প্রথমে আহরণ করে চূর্ণবিচূর্ণ করে। পরে ব্যবসায়ীরা এগুলো তাদের কাছ থেকে কিনে সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, হোটেল, কটেজ, বসতবাড়ি, রাস্তা, সীমানাপ্রাচীর ও দোকানঘর নির্মাণে ব্যবহার করছেন। কিন্তু সরকার কয়েক বছর আগে এই দ্বীপ থেকে পাথর আহরণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের টেকনাফ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অধিদপ্তর ১৯৯৫ সালে দ্বীপের সাড়ে সাত বর্গকিলোমিটার এলাকার ভূখণ্ডকে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করে শামুক, ঝিনুক, পাথর ও প্রবাল-শৈবাল আহরণ ও বিক্রি সমপূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মী আবদুল আজিজ ও জয়নাল আবেদীন জানান, দ্বীপের দক্ষিণপাড়া, পূর্বপাড়া (আশ্রয়ণকেন্দ্র), পূর্ব কোনারপাড়া, গলাছিরা, পশ্চিমপাড়া এলাকা থেকে অবাধে পাথর আহরণ করা হচ্ছে। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
গত ২৯ মে সরেজমিনে দেখা গেছে, দ্বীপের উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ দিকের সৈকত থেকে কয়েকজন শ্রমিক পাথর আহরণ করছে। দ্বীপের মাঝরপাড়া, দক্ষিণপাড়া, পূর্বপাড়ায় যত্রতত্র ফসলি জমি থেকেও বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পাথর আহরণ করা হচ্ছে। পশ্চিমপাড়া আশ্রয়কেন্দ্র-সংলগ্ন ফসলি জমি থেকে পাথর তুলছিলেন ২০-২৫ জন মানুষ। এঁদের মধ্যে আবদুল মতলব, মো. হারুন রশিদ ও আজারা খাতুন জানান, হোটেল মালিকের কাছে বিক্রির জন্য তাঁরা ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি থেকে পাথর তুলছেন। প্রতি টন পাথরের টুকরার জন্য তাঁরা ৩০ টাকা করে পান। স্থানীয় আবু জাফর, মৌলভী আবদুর রহমান, আলাউদ্দিন খানসহ কয়েকজন তাঁদের দিয়ে পাথর আহরণ করান।
আবু জাফর, মৌলভী আবদুর রহমান ও আলাউদ্দিন খান শ্রমিক নিয়োগ করে পাথর আহরণ করার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তাঁরা জানান, তাঁরা শ্রমিকদের কাছ থেকে পাথর কেনেন। মাঝরপাড়ায় দেখা গেছে, ফসলি জমিতে ৩০ জন নারী ও পুরুষ মাটির নিচ থেকে পাথর আহরণ করছেন। প্রথমে তাঁরা পাথরের ওপরের ও চতুর্দিকের মাটি সরিয়ে গর্ত খোঁড়েন। পরে লোহার রড দিয়ে পাথরের একটি স্থানে সাত-আট ইঞ্চি দীর্ঘ ও সরু একটি ছিদ্র করেন। এরপর ম্যাচের কাঠি থেকে সংগ্রহ করা বারুদ ওই ছিদ্রে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। পরে কেরোসিন ভেজানো সুতার এক মাথা বারুদের মধ্যে রেখে অন্য মাথায় আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। সুতা পুড়ে আগুন পাথরের ভেতর রাখা বারুদে স্পর্শ করা মাত্রই বিকট শব্দে পাথর ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।
পরিবেশ অধিদপ্তর টেকনাফ কার্যালয়ের জীববৈচিত্র্য কর্মকর্তা সাহিদ আল শাহীন জানান, ব্যাপকভাবে পাথর উত্তোলন করায় দ্বীপটি হুমকির মুখে পড়েছে। কিছুতেই পাথর উত্তোলন বন্ধ করা যাচ্ছে না। সেন্ট মার্টিন ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম জানান, এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ দেয়নি। অধিকাংশ সময় খবর পেলে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে আহরণকারীরা পালিয়ে যায়।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. জয়নুল বারী জানান, পরিবেশ আইন অমান্য করে পাথর আহরণের খবর পাওয়া গেছে। এসব বন্ধে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে উপকূলীয় ও জীববৈচিত্র্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের পরিচালক মো. জাফর ছিদ্দিক জানান, জেলা সদর থেকে এসব তদারকি করা কোনোভাবে সম্ভব হচ্ছে না। তাই দ্বীপে একটি স্থায়ী কার্যালয় করার পরিকল্পনা চলছে।

No comments:

Post a Comment