কক্সবাজারের রামু উপজেলা সদরে বৌদ্ধবিহার ও বৌদ্ধবসতিতে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাটি যেমন আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মিছিল থেকে শুরু হয়েছিল, তেমনি উখিয়ার কোর্টবাজারেও সহিংসতার শুরু হয়েছিল আওয়ামী লীগ নেতাদের মিছিল থেকেই।
প্রত্যক্ষদর্শীরা নিশ্চিত হয়েই এমন অভিযোগ তুলেছেন। ওই মিছিলে নেতৃত্ব দেন উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হামিদুল হক চৌধুরী ও উখিয়ার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক চৌধুরী। রামুতে সহিংসতার পরদিন, ৩০ সেপ্টেম্বর বিকালে কোর্টবাজার স্টেশনে মিছিলটি বের করা হয়। পরে ওই মিছিল থেকেই কোর্টবাজার-ভালুকিয়া সড়কের বৌদ্ধবিহারগুলোতে হামলা চালানো হয়। আওয়ামী লীগ নেতাদের মিছিল থেকে বৌদ্ধবিহারে হামলা হলেও উখিয়া থানায় মামলা হয়েছে বিএনপি নেতাদের আসামি করে। উখিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সরওয়ার জাহান চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মাহমুদ চৌধুরীকে প্রধান আসামি করে মামলাটি করেন উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ আবুল হাশেম। এ মামলায় ১৫ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করে অজ্ঞাত ৩ হাজার এলাকাবাসীকে আসামি করা হয়েছে।
উখিয়া ও কোর্টবাজারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে রামু ও আশপাশের বৌদ্ধবসতিতে সহিংসতার পর ৩০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় উখিয়া উপজেলার অন্যতম প্রধান স্টেশন কোর্টবাজারে একটি প্রতিবাদ মিছিল বের করা হয়। ওই মিছিলের অগ্রভাগে ছিলেন উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হামিদুল হক চৌধুরী এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদুল হক চৌধুরী। মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সন্ধ্যার পরপর বের হওয়া মিছিলটি একপর্যায়ে কোর্টবাজার-ভালুকিয়া সড়কে অবস্থিত ‘পূর্ব রত্নাপালং সুদর্শন বিহারে’ হামলা চালায়। ওই সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে মিছিল ও হামলাকারীদের সংঘর্ষ হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ফাঁকা গুলিবর্ষণে গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন গুরুতরসহ ২০ জন আহত হন।
উখিয়া থানা সূত্র জানায়, এ ঘটনায় উখিয়া থানায় বিএনপি নেতাদের প্রধান আসামি করে ৩ হাজার মানুষের বিরুদ্ধে দুটি মামলা রুজু হয়।
উখিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সরওয়ার জাহান চৌধুরী জানান, মিছিল বের করেছিল আওয়ামী লীগ, অথচ মামলার আসামি হয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীরা।
তিনি দাবি করেন, বিরোধী দলকে ফাঁসানোর জন্য একটি ধর্মীয় সেন্টিমেন্টকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ নেতাদের নেতৃত্বে মিছিল থেকে বিক্ষুব্ধ জনতা বৌদ্ধমন্দিরে হামলা ও ভাংচুর করে। অথচ মন্দির ভাংচুর মামলায় আওয়ামী লীগ বা অঙ্গসংগঠনের কোনো নেতাকর্মীকে আসামি না করে পুলিশ বিএনপি নেতাদের ফাঁসিয়ে দিচ্ছে।
তার দাবি, পুলিশ তাদের ব্যর্থতা আড়াল করার এ অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি মনে করেন, রামুতে মন্দির ভাংচুরের ঘটনার পরপরই যদি উখিয়া থানা প্রশাসন সতর্কতা অবলম্বন করে মন্দিরগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করত, তাহলে মন্দির ভাংচুরের মতো এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটত না।
এ ব্যাপারে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অপ্পেলা রাজু নাহা বলেন, ‘বিএনপির অভিযোগ নিয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই।’
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ নেতাদের নেতৃত্বে মিছিল থেকে বৌদ্ধবিহারের হামলার ঘটনা নিয়ে স্থানীয় পত্রিকায় খবর ও ছবি ছাপা হয়েছে।
No comments:
Post a Comment