Wednesday, December 08, 2010

ট্রেন উদ্ধার কাজে সেনাবাহিনী

রসিংদীতে দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেন উদ্ধার কাজে নেমেছে সেনাবাহিনীর একটি দল। এছাড়া ঢাকা ও আখাউড়া থেকে দুটি উদ্ধারকারী ট্রেন ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছেছে। বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে নরসিংদীর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক মনিরুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এ তথ্য জানান। সন্ধ্যায় নরসিংদী রেলস্টেশনে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ পর্যন্ত সাতজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আরো অনেক যাত্রী হতাহত হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সন্ধ্যা পৌনে ৫টার দিকে আন্তনগর ট্রেন চট্টলা এক্সপ্রেস ও মহানগর গোধূলীর মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিনিধি জানান, ঘটনাস্থলে আরো কয়েকটি লাশ দেখা গেছে। হতাহতের সংখ্যা অনেক হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নরসিংদীর পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট আক্কাস উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, সংঘর্ষে একটি ট্রেন আরেকটি ট্রেনের ওপর ওঠে গেছে। এখন পর্যন্ত সাতজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে চারটি লাশ নরসিংদী সদর হাসপাতাল এবং তিনটি ঘটনাস্থলে রয়েছে। তিনি জানান, উদ্ধার কাজ চলছে। এই রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক টি এ চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "এখন পর্যন্ত নিহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। আমারা ঘটনাস্থলে যাচ্ছি। পরে বিস্তারিত জানানো হবে।" তিনি জানান, চট্টলা এক্সপ্রেস চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসছিলো। অন্যদিকে মহানগর গোধূলী ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাচ্ছিলো।
নরসিংদী রেলওয়ের কর্মকর্তাদের পাওয়া যাচ্ছে না। বিক্ষুব্ধ জনতা স্টেশন ঘেরাও করে রেখেছে। বহু হতাহতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। নরসিংদীর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক মনিরুজ্জামান জানান, উদ্ধার কাজ পুরোদমে শুরু হলে আরো কিছু লাশ পাওয়া যেতে পারে।
নরসিংদী রেলস্টেশনের এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চট্টগ্রাম থেকে আসা চট্টলা এক্সপ্রেস নরসিংদী স্টেশনে না দাঁড়িয়ে সরাসরি প্রধান রেলপথ হয়ে ঢাকা চলে যাওয়ার কথা ছিলো।
অন্যদিকে মহানগর গোধূলী এই ট্রেনটিকে পাশ দেওয়ার জন্য স্টেশনে দাঁড়িয়ে ছিলো। কিন্তু সংকেত ভুল করায় একই লাইনে চট্টলা ট্রেনটি চলে আসে। এতে দুটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। রেলের উপসহকারী পরিচালক দিলীপ কুমার বোসের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি উদ্ধারকারী দল সরঞ্জাম নিয়ে ঘটনাস্থলে রওনা হয়েছে। দিলীপ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "ঘণ্টা খানেকের মধ্যে আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাবো।"
যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের জানান, উদ্ধারকারী একটি ট্রেন সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় নরসিংদীর উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। রাত সাড়ে ১১টার মধ্যে দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেন দুটি উদ্ধার করে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ঘটনার খবর পাওয়ার পরই যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, সড়ক ও রেলপথ বিভাগের সচিব মোজাম্মেল হক খান এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক টি এ চৌধুরী ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন বলে তিনি জানান।
নরসিংদী সদর হাপাতালের জরুরি বিভাগের কর্মচারী কামাল জানান, হাসপাতালে এ পর্যন্ত আহত ১৭ জনকে আনা হয়েছে। এর মধ্যে তিনজনকে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা হচ্ছে। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রতিনিধি জানান, দুর্ঘটনায় আহত চট্টলা এক্সপ্রেসের চালক রফিক উদ্দিনসহ (৫০) পাঁচজনকে সেখানে ভর্তি করা হয়েছে।
বাকিরা হলেন- যাত্রী মাহবুব (২২), মাঈনুদ্দিন (৩০), হুমায়ুন (২৪) ও রেলওয়েল নিরাপত্তাকর্মী মো. জসিম (২৫)। রফিক উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রেলপথটির সংকেত পেয়েই তিনি ট্রেন চালিয়ে আসেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ট্রেনে সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনায় শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি উদ্ধার কাজে অংশ নিতে সামরিক ও বেসামরিক কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। আহতদের যথাযথ চিকিৎসা দেওয়ার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।

No comments:

Post a Comment