Sunday, December 26, 2010

বিচার বিভাগ সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্তঃ টিআইবির তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম হাফিজউদ্দিন খান, নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান ও সিনিয়র ফেলো ওয়াহিদ আলমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আমলি আদালত। কুমিল্লার ১ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক সাইদুর রহমান আজ রোববার এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। অন্যদিকে চট্টগ্রামের দুটি আদালতে ওই তিনজনের বিরুদ্ধে আজ সমন জারি করা হয়েছে।

কুমিল্লা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য তৌহিদুর রহমান আজ সকালে একটি মানহানির মামলা করলে আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
সম্প্রতি প্রকাশিত টিআইবির জরিপ প্রতিবেদনে বিচার বিভাগকে হেয় করার অভিযোগে মামলাটি করা হয়।
অন্যদিকে এই তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিচারিক হাকিম আদালতে মামলা করেন আইনজীবী মো. মজিবুল হক। বাদীর অভিযোগ, টিআইবির প্রতিবেদনের মাধ্যমে বিচার বিভাগকে বিতর্কিত করা হয়েছে। আইনজীবীরা বিচার বিভাগের অংশ। একজন আইনজীবী হিসেবে এ প্রতিবেদনের কারণে তাঁর সম্মানহানি হয়েছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক কেশব রায় চৌধুরী এই তিনজনের বিরুদ্ধে সমন জারি করে আগামী ৩০ জানুয়ারি আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন।
একই সঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালতে একই অভিযোগে মোহাম্মদ মহিউদ্দিন নামে অপর একজন আইনজীবী আরেকটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় বিচারক মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমান এই তিন কর্মকর্তাকে আগামী ১৩ জানুয়ারি আদালতে হাজির হওয়ার সমন জারি করেন।
গত বৃহস্পতিবার সেবা খাতে দুর্নীতিসংক্রান্ত টিআইবির প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়, দেশের ১৩টি সেবা খাতের মধ্যে বিচার বিভাগে গিয়ে সবচেয়ে বেশি হয়রানি, অনিয়ম, ঘুষ দেওয়া তথা দুর্নীতির শিকার হয়েছে সাধারণ মানুষ। ২০০৯-১০ সালে বিচারপ্রার্থীদের ৮৮ শতাংশ শুনানির সময় নির্ধারণ থেকে শুরু করে নথিপত্র গায়েব এবং উেকাচ দেওয়াসহ নানা অনিয়মের শিকার হয়েছে। নিম্ন আদালত থেকে শুরু করে উচ্চ আদালত—বিচার বিভাগের প্রতিটি স্তরে ঘুষের দৃষ্টান্ত থাকলেও জরিপে শীর্ষে রয়েছেন উচ্চ আদালত।
২০০৯ সালের ৯ জুন থেকে এ বছরের ২০ জুলাই পর্যন্ত দেশের সব বিভাগীয় শহর ও গ্রামাঞ্চলের ছয় হাজার খানার (পরিবার) ওপর পরিচালিত জরিপের ভিত্তিতে ‘সেবা খাতে দুর্নীতি: জাতীয় খানা জরিপ ২০১০’ প্রকাশ করে। প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, ২০০৭ সালের খানা জরিপে ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ পরিবার বিচার বিভাগের দুর্নীতির শিকার হয়েছিল। কিন্তু এ দফায় তা আরও বেড়েছে। জরিপে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের ১০ দশমিক ৯ শতাংশ বিচার বিভাগ থেকে সেবা নিয়েছে। তাদের ৮৮ শতাংশ দুর্নীতির শিকার হয়েছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে খানা জরিপের ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুদকের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান জানান, টিআইবি দুর্নীতির যে চিত্র প্রকাশ করেছে, দেশে তার চেয়েও বেশি দুর্নীতি হচ্ছে। ২০০৭ সালে বিচার বিভাগ স্বাধীন ছিল না। কিন্তু সাধারণ মানুষের মতে, এখন স্বাধীন বিচারব্যবস্থায় দুর্নীতি-অনিয়ম বেড়েছে।

No comments:

Post a Comment