Sunday, December 26, 2010

ঝিনাইগাতী থেকে আবার গোলাবারুদ উদ্ধার by দেবাশীষ সাহা রায়

৩ হাজার গুলি উদ্ধারের এক সপ্তাহের মাথায় আবার শেরপুরের সীমান্তবর্তী গ্রাম থেকে গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে পিস্তলের গুলি, গ্রেনেড ছাড়াও সাতটি ‘মাইন জাতীয় বিস্ফোরক’ রয়েছে বলে বিডিআর সূত্র জানিয়েছে। গতকাল শনিবার সকালে বিডিআরের একটি টহল দল ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের ভারতীয় সীমান্তবর্তী বাকাকুড়া গ্রামের জঙ্গল থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় এসব গুলি, বিস্ফোরক ও অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধার করে।
এর মধ্যে ভারতের আসাম রাজ্যের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার (ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম) কিছু কাগজপত্রও রয়েছে। তাই উদ্ধার করা গুলি-বিস্ফোরক উলফা সদস্যদের ফেলে যাওয়া বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা ধারণা করছেন।
এর আগে সর্বশেষ ১৮ ডিসেম্বর একই গ্রামের একটি পরিত্যক্ত ঘর থেকে রাইফেলের ১৩ হাজার ৬৮০টি গুলি উদ্ধার করে পুলিশ। তবে উভয় ঘটনায় কেউ গ্রেপ্তার হয়নি বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
গতকালের উদ্ধার সম্পর্কে স্থানীয় বিডিআর সূত্র জানায়, বেলা পৌনে ১১টায় ঝিনাইগাতী নকসী সীমান্ত ফাঁড়ি থেকে বিডিআরের একটি দল নিয়মিত টহলের অংশ হিসেবে বাকাকুড়া গ্রামের গারো পাহাড় এলাকায় যায়। তারা ভারতীয় সীমান্তের কাছাকাছি ঝোড়ারপার জঙ্গলে কয়েকটি ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখে। ব্যাগগুলো খুলে তারা গোলাবারুদ ও কাগজপত্র পায়।
বিডিআরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উদ্ধার করা সামগ্রীর মধ্যে একটি গ্রেনেড, ৯৩টি পিস্তলের গুলি ও একটি ম্যাগাজিন, সাতটি ‘মাইন জাতীয় বিস্ফোরক’, চারটি রাইফেল ও মেশিনগানের গুলি, পিস্তলের ক্লিনিং রড পাঁচটি, মেশিনগানের গুলি রাখার বেল্ট, চারটি মোবাইল ফোনসেট, বিভিন্ন কোম্পানির মোবাইল ফোনের ১৯টি সিম কার্ড, ওয়াকিটকি সেটের ব্যাটারি চারটি, দুটি অ্যান্টেনা, দুটি ডিজিটাল মাল্টিমিটার, ভারতীয় মুদ্রা ১০৭ রুপি, পাঁচটি সিডি ডিস্ক, ১০টি কম্পিউটার ডেটা কেব্ল, তিনটি দিনপঞ্জি, ‘সংযুক্ত মুক্তিবাহিনী অসম’ (উলফা) লেখা অহমিয়া ভাষার আটটি বই ও সংগঠনটির বিভিন্ন কাগজভর্তি ছয়টি ফাইল, কিছু জমির দলিলদস্তাবেজ, একটি মোটরসাইকেলের লাইসেন্স (ঢাকা মেট্রো-হ-১৯-৪৭৫২) ইত্যাদি রয়েছে।
নকসী সীমান্ত ফাঁড়িতে গিয়ে উদ্ধার করা কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, অহমিয়া ভাষায় উলফার বিভিন্ন পুস্তিকা ছাড়াও প্রচারপত্র, শপথনামা, আর্থিক খরচের হিসাব ও জমি কেনার দলিলও রয়েছে। একটি প্রচারপত্রে ২০১০ সালের ৭ এপ্রিল উলফার ৩১তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে দলের ভাইস চেয়ারম্যান প্রদীপ গগৈর বক্তব্য লেখা ছিল।
৪৫ রাইফেল ব্যাটালিয়নের অপারেশন কর্মকর্তা মেজর শাহেদ মেহের প্রথম আলোকে বলেন, উদ্ধার করা এসব সামগ্রী বাংলাদেশের তৈরি নয়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এগুলো ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার হতে পারে।
ঝিনাইগাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রব প্রধান বলেন, এসব গোলাবারুদ উদ্ধারের ঘটনায় বিডিআরের পক্ষ থেকে মামলা করার প্রক্রিয়া চলছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রগুলো জানায়, এর আগেও বিভিন্ন সময়ে ঝিনাইগাতী এলাকা থেকে অস্ত্র, গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। ২০০৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর বিডিআরের সদস্যরা বাকাকুড়া গ্রামের একটি বাড়িতে মাটি খুঁড়ে প্লাস্টিকের ড্রামভর্তি ২৯ হাজার গুলি উদ্ধার করে। তখন রাসেল সাংমা নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করে বিডিআর। একই বছরের ১৬ ও ১৭ সেপ্টেম্বর একই এলাকা থেকে আরও ১০ হাজার গুলি উদ্ধার করা হয়।
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, ঝিনাইগাতী গারো পাহাড় এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে উলফার তৎপরতা ছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাদের তৎপরতা আর দেখা যাচ্ছে না। এর মধ্যে এই এলাকা উলফার সামরিক কমান্ডার হিসেবে পরিচিত ‘ক্যাপ্টেন’ রঞ্জু চৌধুরীকে গত ১৭ র‌্যাব গ্রেপ্তার করে।

No comments:

Post a Comment