Thursday, December 23, 2010

পৌরসভা নির্বাচনঃ বিএনপির একক প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত by রফিকুল ইসলাম মন্টু

পৌরসভা নির্বাচনে জয়লাভের লক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামলেও প্রার্থী মনোনয়নে চারদলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে সমন্বয় নেই প্রধান বিরোধী দল বিএনপির। স্থানীয়ভাবে সমঝোতার মাধ্যমে শরিকদের সমর্থন আদায়ের সুযোগ রাখা হলেও এখন পর্যন্ত প্রার্থী মনোনয়নে সমন্বয় হয়নি। ফলে বিএনপি ও জোটের প্রধান শরিক জামায়াতে ইসলামী নিজেদের মতো করে প্রার্থী দিচ্ছে। অন্যদিকে সারা দেশে অন্তত শতাধিক পৌরসভায় বিদ্রোহী প্রার্থীদের সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে বিএনপি।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই এ নির্বাচনে আনুষ্ঠানিকভাবে জোটগত প্রার্থী না দিতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সুনির্দিষ্টভাবে এ নির্বাচনের বিষয়ে শরিকদের সঙ্গে কোনো বৈঠক করেননি। সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি পর্যবেক্ষণ কমিটি করে দিয়েছেন তিনি। এ কমিটির অধীনে কেন্দ্রীয় নেতারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করছেন।
জানা যায়, পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর চারদলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন খালেদা জিয়া।
ওই বৈঠকে সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হলেও পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে বিশেষ কোনো আলোচনা হয়নি। জোটের শরিক দলগুলোর কোনো কোনো নেতা বৈঠকে খালেদা জিয়ার কাছে পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জোটগতভাবে এ নির্বাচন না করার পক্ষে মনোভাব ব্যক্ত করেন। পরে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার, নজরুল ইসলাম খান ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য একটি কমিটি গঠন করে দেন খালেদা জিয়া।
আরো জানা যায়, এরই মধ্যে ২৫০ পৌরসভায় বিএনপি দলীয়ভাবে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। জোটগতভাবে প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত না থাকায় জোটের অন্য শরিক জামায়াতে ইসলামীও নিজের মতো করে প্রায় ১০০ পৌরসভায় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। জামায়াত ছাড়া অন্য কোনো দলের আলাদা প্রার্থী নেই।
বিএনপির নির্বাচন পর্যবেক্ষণ কমিটির প্রধান এম কে আনোয়ার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'পৌরসভা নির্বাচনে মনোনয়নের বিষয়ে শরিক দলের সঙ্গে স্থানীয়ভাবে আলোচনার সুযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে সমর্থন আদায়ের জন্য দলীয় প্রার্থীদের বলা হয়েছে। মাঠপর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। চেয়ারপারসন আমাকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। এ কমিটির অধীনে বিভাগীয় কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। ওই কমিটি সব পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে।'
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, 'পৌরসভা নির্বাচনে মাঠপর্যায়ে কোনো সমস্যা হয়ে থাকলে তা মাঠেই সমাধান করার নির্দেশ রয়েছে। এ বিষয়ে স্থানীয় নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জোটগতভাবে কোনো প্রার্থী দেওয়া হচ্ছে না। দলগতভাবে সবাই প্রার্থী মনোনয়ন করবে। এরপর সমঝোতার মাধ্যমে একজন প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়া হবে। আমার জানা মতে, কোথাও বিশেষ কোনো সমস্যা হয়নি। তা ছাড়া এ নির্বাচন এখনো অনেকটা নির্দলীয় মেজাজেই আছে।'
দলীয় সূত্রে জানা যায়, মাঠপর্যায়ে প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়টি সমন্বয় করার জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের অঞ্চল ভাগ করে দিয়েছে বিএনপি। ঢাকা বিভাগে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ, বরিশালে মির্জা আব্বাস, চট্টগ্রাম-১ অঞ্চলে এম মোরশেদ খান, চট্টগ্রাম-২ অঞ্চলে ড. খন্দকার মোশররফ হোসেন, খুলনা বিভাগে নজরুল ইসলাম খান, সিলেটে শমসের মবিন চৌধুরী ও রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিভাগীয় কমিটিগুলোর কাজ সমন্বয় করছেন দলের মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন। আঞ্চলিক কমিটি থেকে প্রার্থীদের তালিকা নিয়ে তা চেয়ারপারসনের কাছে জমা দেবেন মহাসচিব। আজ বৃহস্পতিবার চেয়ারপারসন চীন থেকে ফিরলে প্রার্থীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তাঁর কাছে দেওয়া হবে।
বিএনপির একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতা জানান, নির্বাচন বিধি অনুযায়ী এ নির্বাচন জোটগতভাবে করার সুযোগ নেই। সে কারণে বিএনপি জোটগতভাবে এ নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ার পরিকল্পনা নেয়নি। ফলে এ নির্বাচনে কেন্দ্রীয়ভাবে তেমন কোনো কাজ নেই। স্থানীয়ভাবে শরিক ও সমমনা দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার সুযোগ রাখা হয়েছে। নির্বাচনী বিধি বিবেচনায় রেখে পৌর নির্বাচনে তফসিল ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ জোটগতভাবে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিলে বিএনপি নির্বাচন কমিশনের কাছে এ বিষয়ে আপত্তি জানায়। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে বিএনপির প্রতিনিধিদল সব পর্যায়ে নির্বাচনী বিধি যথাযথভাবে পালনের ক্ষেত্রে নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানায়।
মাঠপর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জোটের শরিকদের মধ্যে শুধু জামায়াতে ইসলামী এককভাবে প্রার্থী মনোনয়ন দিচ্ছে। প্রায় ১০০ পৌরসভায় চেয়ারম্যান পদে জামায়াতের একক প্রার্থী রয়েছে। অন্যদিকে বিএনপি দলীয়ভাবে প্রার্থী মনোনয়ন করলেও অন্তত শতাধিক পৌরসভায় দলের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। এগুলোর মধ্যে রাজশাহী, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, পাবনা, জামালপুর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালী, টাঙ্গাইল, দিনাজপুর, বরিশাল, চাঁদপুরসহ কয়েকটি জেলা উল্লেখযোগ্য। এর ফলে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ও জামায়াতের প্রার্থীদের সঙ্গে সমঝোতায় আসা যাবে কি না, সেটাই পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক সিনিয়র নেতা এ প্রসঙ্গে বলেন, 'বিষয়টি স্থানীয়ভাবেই সমাধান করা হবে। এ সমস্যা সমাধানে দলীয় সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অনেক স্থানে আলোচনা হচ্ছে। সব স্থানেই যে সমাধান হবে, তা নয়। কোনো কোনো পৌরসভায় কিছুটা সমস্যা থেকেও যেতে পারে।'
খুলনা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, 'খুলনা ও যশোর এলাকার প্রার্থী বাছাই হয়েছে, তালিকাও কেন্দ্রে পেঁৗছানো হয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় সমস্যা রয়েছে। কোথাও কোথাও দলের সিদ্ধান্তের বাইরেও প্রার্থী হয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। অবশ্যই সমস্যার সমাধান হবে। তার পরও দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে কেউ প্রার্থী হলে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
জোটের শরিক বিজেপি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, 'পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে আমার এলাকা ভোলায় বিএনপির সঙ্গে কোনো সমস্যা নেই। ভোলা সদরের একটি পৌরসভায় বিএনপির একজন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। তাঁর সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা চলছে।'

No comments:

Post a Comment