Sunday, July 31, 2011

চাই দ্রুততম ও নিরাপদ ব্যবস্থা

বাই একবাক্যে স্বীকার করেন, একটি দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রধান মানদণ্ডগুলোর একটি এর যোগাযোগ ব্যবস্থা। শুধু সড়ক পথই নয়, রেল, নৌ ও আকাশ পথে কত দ্রুত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে মানুষ ও মালপত্র পরিবহন করা যায় তা একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সূচক। বাংলাদেশের বাস্তবতায় রেলপথে যাতায়াতের সুযোগ সীমিত।

নৌপথ একদা এ দেশে মূল যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হলেও নাব্যতা হারিয়ে অনেক নৌপথই পরিত্যক্ত হতে বসেছে। আকাশ পথে যোগাযোগের সুযোগ এখানে আর্থসামাজিক কারণেই অনেক সীমিত। সবেধন নীলমণি সড়ক ব্যবস্থাই আমাদের যোগাযোগের মেরুদণ্ড। সাম্প্রতিককালে কানেকটিভিটি বলে যে ধারণার কথা বলা হচ্ছে তা বাস্তবায়নে মূল ভূমিকা আমাদের প্রেক্ষাপটে সড়ক অবকাঠামোরই। এখন বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম কেন্দ্রে পরিণত হওয়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। আশা করা হচ্ছে খুব শীঘ্র আমাদের রাস্তাঘাট, বন্দর আন্তর্জাতিক ব্যবহারকারীদের জন্যও উন্মুক্ত হবে। এ পরিস্থিতিতে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার হাল-হকিকত বিচার করা খুবই প্রয়োজন। অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য, অবাধ পণ্য পরিবহন, দ্রুততম ও নিরাপদ যোগাযোগ ও স্থানান্তরের স্বার্থেও সড়ক ব্যবস্থার তত্ত্বতালাশ প্রয়োজন। ফলে খুবই সঙ্গত প্রশ্ন হলো, আমাদের সড়ক ব্যবস্থার বর্তমান পরিস্থিতি কী? শনিবারের সমকালে দেশের মহাসড়ক নিয়ে যে প্রতিবেদন ও বিশেষ আয়োজন প্রকাশিত হয়েছে তা পড়ে যে কেউ বলবেন, সড়ক অবকাঠামোর এখন বেহাল দশা। প্রায় সব বিভাগীয় ও জেলা শহরের সঙ্গে ঢাকার সংযোগ সড়কগুলোর অবস্থা শোচনীয়। এমনকি বন্দর ও বাণিজ্যিক শহর চট্টগ্রামের সঙ্গে ঢাকার সংযোগ সড়কটির অবস্থাও ভীষণ হতাশাজনক। অধিকাংশ সড়ক খানাখন্দে পরিপূর্ণ। ভাঙাচোরা কিছু সড়ক দ্রুত যান চলাচলের অনুপযুক্ত শুধু নয়, এগুলো ব্যবহার করাও কষ্টকর। সড়কের অনেক স্থানে নির্মাণ ত্রুটি আছে, আছে অপরিকল্পিত স্থাপনাও। মহাসড়ক দখল করে অবৈধভাবে বাজার বসানোর উদাহরণও এন্তার। যানজট না থাকলেও এসব সড়ক পেরোতে গড়ে দুই থেকে চার ঘণ্টা সময় বেশি লাগে। আর কয়েক কিলোমিটারব্যাপী যানজট থাকলে তো কথাই নেই। দ্রুত পেঁৗছানোর স্বপ্ন সুদূরপরাহত, গন্তব্যে পেঁৗছাতে অনেক শ্রমঘণ্টা অপচয় হবে এটাই এখন নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘার মতো লেগে আছে দুর্ঘটনার উপদ্রব। যে দিন দেশে কোনো দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটে না সেদিনটিকে সৌভাগ্যজনক ও ব্যতিক্রম বলেই অভিহিত করা হয়। চালকদের অসতর্কতা, লাইসেন্সবিহীন চালক, ওভারটেকিং, বেপরোয়া গাড়ি চালনার পাশাপাশি এর জন্য দায়ী বেহাল সড়কও। দেশে রাস্তার দৈর্ঘ্য বড়, কিন্তু রাস্তায় সুষ্ঠু তদারকির জন্য পর্যাপ্ত হাইওয়ে পুলিশিংয়ের ব্যবস্থা নেই। যেটুকু ব্যবস্থা আছে তাও কতটা ক্রিয়াশীল সে প্রশ্ন বারবার ওঠে। ফলে দুর্ঘটনা এখন নিত্যসঙ্গী। একটি মালবাহী ট্রাক বা যাত্রীবাহী বাস রাজধানীর উপকণ্ঠে পেঁৗছানোর পর বা রাজধানী থেকে বেরুবার পথে প্রায় প্রতিটি রাস্তায় দীর্ঘ সময়ের যানজটে পড়তে বাধ্য। আর রাজধানীর ভেতরের যানজটের কথা তো বলাই বাহুল্য। পরিস্থিতি থেকে স্পষ্ট যে, আমাদের সড়ক ব্যবস্থা একবিংশ শতাব্দীর উন্নয়নকামী একটি দেশের সড়ক ব্যবস্থা নয়। এমন যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে পশ্চাৎগতি ছাড়া অগ্রগতি সম্ভব নয়। তাই সড়ক সংস্কারে দ্রুত মনোযোগ দরকার। দ্রুত বড় আকারের পরিকল্পনা হাতে নিয়ে দেশের সড়কপথের সংস্কার ও নির্মাণ কাজ শেষ করা দরকার। দেশের উন্নয়নের জন্য নতুন পথ ও নতুন সেতু আমাদের আরও দরকার। কিন্তু বিদ্যমান পথগুলো ব্যবহারের অনুপযুক্ত হলে তার চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে? ফলে আমরা মনে করি, সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো দ্রুত নিরাপদ, সাবলীল ও দ্রুততম সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য তৎপর হবে।

No comments:

Post a Comment