'একসময় সাগর ও নদীর তীর ছিল ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা, নিরাপদ ছিল পাহাড়। সাগর উন্মত্ত হলে, নদীর তীর ভাঙলে মানুষ আশ্রয় নিত পাহাড়ে।
পাহাড়ই ছিল এখানকার সাইক্লোন শেল্টার। কিন্তু এখন সবই যেন উল্টাপাল্টা। পাহাড় এখন সবচেয়ে অনিরাপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোথায় যাবে মানুষ?' সাগরপারের বাসিন্দা কঙ্বাজারের প্রবীণ শিক্ষাবিদ মোসতাক আহমদ গত কয়েক দিনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রসঙ্গে দীর্ঘশ্বাস ফেলে কালের কণ্ঠকে বলেন এ কথা।

কঙ্বাজার-বান্দরবানের সীমানাসংলগ্ন এলাকা কঙ্বাজারের রামু, উখিয়া, চকরিয়া ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা ও আলীকদম উপজেলার বিস্তীর্ণ পাহাড়ি এলাকা গত দুই দিন পাহাড়ি ঢলে লণ্ডভণ্ড হয়েছে। অনেক পাহাড় ধসে গেছে। ঢলের পানিতে এসব এলাকার শত শত মাটির ঘর মিশে গেছে মাটির সঙ্গে।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী গ্রামের একই পরিবারের সাতজন মঙ্গলবার প্রাণ হারিয়েছে এ রকম একটি মাটির ঘর ধসে পড়ায়। পাহাড়ি এলাকায় বসবাসরত বাঙালিদের পাশাপাশি আদিবাসীরাও এখন আতঙ্ক ও চিন্তায় পড়েছে আকস্মিক এই পাহাড়ি দুর্যোগ নিয়ে। বাইশারী মধ্যম চাকপাড়ার বাসিন্দা উসালা চাক (৫০) বলেন, 'পাহাড়ে বর্ষণ হয় বটে, সেই বর্ষণের পানি তৎক্ষণাৎ নেমে যায়। কিন্তু এবার পানিতে ডুবে গেছে পাহাড়ি এলাকা। এ এলাকায় শতাধিক চাক ও মুরুং উপজাতির ঘর মঙ্গলবারের বর্ষণজনিত দুর্যোগে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে।' লামার ফাইতং এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম জানান, একদম নীরবেই পাহাড়ে এই দুর্যোগ আঘাত হেনেছে। এ রকম সাধারণত হয় না। এই দুর্যোগে পাহাড়ের রাবার বাগান থেকে শুরু করে উপজাতিদের জুম চাষেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
কঙ্বাজারের রামু উপজেলার ঈদগড়ের হাসনাকাটা গ্রামের ৯৫ বছর বয়সী ফরিদুল আলম বলেন, 'বন্যা হয় নিচু এলাকায়, এখন সেই বন্যা পাহাড়ে আঘাত করায় হতবাক হয়েছি। আমরা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি ডেকে আনছি পরিবেশ নষ্ট করে।'
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোকতার আহমেদ গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'একটি দেশে ২৫ ভাগ বনাঞ্চল থাকা প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের তা নেই। তদুপরি আমাদের পাহাড়গুলোতে বন না থাকায় সামান্য বর্ষণেই মাটি ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। ফলে নতুন নতুন দুর্যোগের সৃষ্টি হচ্ছে।'
No comments:
Post a Comment