Friday, June 29, 2012

কক্সবাজারে বন্যার পানি কমলেও বাড়ছে দুর্ভোগ

কক্সবাজার জেলায় সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি হলেও বন্যাকবলিত এলাকার লোকজনের দুর্ভোগ  কমছে না। বিশুদ্ধ পানিসহ পর্যাপ্ত খাবারের অভাবে প্লাবিত মানুষের ভোগান্তি বেড়েই চলেছে।

এছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মানুষ অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। যদিও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩৯ মেট্রিক টন চাল, ২১ লাখ টাকা, ৪২ বস্তা চিড়া ও ৫০০ কেজি গুড় ত্রাণ হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ইতোমধ্যে কক্সবাজার থেকে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত প্রত্যাহার করা হয়েছে। একই সঙ্গে নতুন কোনো সংকেত দেওয়া হয়নি।

বুধবার সকাল থেকে কক্সবাজারের বৃষ্টিপাত কমে গেছে। বুধবার পুরোদিন বিরতি দিয়ে হালকা বৃষ্টি হলেও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বৃষ্টিপাত হয়নি। ফলে, কক্সবাজার জেলার ৮ উপজেলার প্লাবিত এলাকা থেকে বন্যার পানি নেমে যাচ্ছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. জয়নুল বারী বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, টানা ৫ দিনের বৃষ্টিতে জেলার ৫২টি ইউনিয়ন পানিতে প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত এলাকার প্রায় ২০ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন।

তিনি জানান, এর মধ্যে ২১টি ইউনিয়ন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এসব ইউনিয়নে জরুরি ভিত্তিতে ৩৯ মেট্রিক টন চাল, ২১ লাখ টাকা, ৪২ বস্তা চিড়া ও ৫০০ কেজি গুড় ত্রাণ হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এসব ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে।

টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢল ও জোয়ারের পানিতে কক্সবাজার সদর, পেকুয়া, চকরিয়া, কুতুবদিয়া, রামু, মহেশখালী, টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলার প্লাবিত হয়। প্লাবিত এলাকার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন। প্লাবিত এলাকার সকল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বৃষ্টিপাত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জেলার প্রধান নদী বাঁকখালী, মাতাহুরীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাঁও ফরিদ কলেজ সংলগ্ন সেতুতে ফাটলের কারণে এখনো কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এছাড়া অন্য কয়েকটি সড়কেও যানচলাচল বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে, বন্যায় রামু উপজেলার ৯৯টি ওয়ার্ড পানিতে প্লাবিত হয়েছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো.জয়নুল বারী, ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার উত্তম কুমার পাল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. জসীম উদ্দিন, রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দেবী চন্দসহ বিভিন্ন কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবার রামুর বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন । বন্যাকবলিত এলাকায় হাজার হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু খাদ্য ও পানি সংকটে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন।

এবিষয়ে কাউয়াখোপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা নুরুল হক বাংলানিউজকে জানান, কাউয়াখোপ এলাকায় হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। বেশিরভাগ মানুষ ঘরের চালে (ছাদে) আশ্রয় নেন। সরকারিভাবে ব্যবস্থা না থাকায় তারা নিজ উদ্যোগে স্পিডবোট ভাড়া করে উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছেন।
বর্তমানে এ ইউনিয়নের প্রতিটি ঘরে ঘরে খাদ্য ও পানি সংকট চলছে। সরকারিভাবে ৮ বস্তা চাল-ডাল ও ৩ বস্তা চিড়া বরাদ্দ পাওয়া গেছে।

রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল বাংলানিউজকে জানান, বর্তমানে বন্যাকবলিত এলাকায় খাবার সংকট খুব প্রকট। এ সংকট মোকাবেলায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

উখিয়া উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়ে ওই এলাকায় ২৫টির বেশি চিংড়ি ঘের তলিয়ে গিয়ে লাখ লাখ টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে।

উখিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মাহমুদুল হক চৌধুরী, ইউপি চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন মিন্টু বন্যা দুর্গত এলাকার মানুষকে সাইক্লোন সেল্টারে আশ্রয় দিয়ে খাবার বিতরণসহ বিভিন্ন ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পুনর্বাসনের জন্য তালিকা তৈরি করতে ইউপি চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

চকরিয়া উপজেলায় বন্যায় প্রায় ৪ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চকরিয় পৌর শহরের ১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে পৌর বাণিজ্যিক কেন্দ্র ও পৌর শহর ৭/৮ ফুট পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। মাতামুহুরী নদীর দুই তীরের কয়েক শ ঘরবাড়ি, সহস্রাধিক গরু, ছাগল ও অসংখ্য হাসমুরগি পাহাড়ি ঢলের পানিতে ভেসে গেছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার, চকরিয়া, মহেশখালী সড়ক, চিরিংগা-পেকুয়া সড়কের বেশ কয়েকটি স্থানে ঢলের পানি উপচে পড়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

চকরিয়া পৌরসভা ও উপজেলার কয়েকটি এলাকায় পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জাফর আলমের উদ্যোগে লঙ্গরখানা খুলে মানুষকে খাবার দেওয়া হচ্ছে।

চকরিয়ার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. জহিরুল হক বাংলানিউজকে জানান, চকরিয়ায় প্রায় ৪০ হাজার একর চিংড়ি ঘেরের ৫ শতাধিক চিংড়ি ঘের ও সহস্রাধিক পুকুর পাড় উপচে শতকোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। চকরিয়া বিমানবন্দরে সেনাক্যাম্পে ঢলের পানি ঢুকে তাদের স্থাপনাগুলো ৩ ফুট পানির নিচে রয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও পরিষদ থেকে ৫ হাজার কেজি চিড়া, ২ হাজার কেজি গুড় ও ৮ টন চাল বানভাসীদের মধ্যে বিতরণ করেছেন।

পেকুয়ায় শতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। প্লাবিত এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

পেকুয়ার মগনামার চেয়ারম্যান শহিদুল মোস্তফা বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, প্রায় ৫ চেইন বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়ে পুরো মগনামা ইউনিয়নে জোয়ার-ভাটা চলছে।

উজানটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান এটিএম শহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, বিচ্ছিন্ন দ্বীপ করিয়ারদিয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। ওই এলাকায় এখন বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে।

পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর-ই খাজা আলামীন বাংলানিউজকে জানান, বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজনকে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। সরকারিভাবে ৭ টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে।

প্রসঙ্গত, টানা বৃষ্টিতে পাহাড় ধস, বজ্রপাতে কক্সবাজারের ৪৪ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। মারা গেছে, অসংখ্য গবাদিপশু।

No comments:

Post a Comment