Friday, June 29, 2012

কক্সবাজারে পানি কমলেও অন্তহীন দুর্ভোগে মানুষ

কক্সবাজারে বন্যার পানি নেমে গেলেও তার ধ্বংসলীলার চিহ্ন রেখে গেছে। ভেঙে বিলীন হয়ে গেছে বেড়িবাঁধ, রাস্তা, কালভার্টসহ মানুষের ঘর-বাড়ি।

বাঁকখালী নদী দিয়ে ভেসে যাচ্ছে শত শত মৃত গবাদিপশু। বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের অভাবে চারদিকে চলছে বনভাসি মানুষের হাহাকার।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল, রাজারকুল দক্ষিণ মিঠাছড়ি, কাউয়ারখোপ, রশিদনগর, খুনিয়াপালং, চাকমারকুল, জোয়ারিয়ানালা, গর্জনীয়া, কচ্ছপিয়া, ঈদগড় ইউনিয়নের প্রায় পাঁচশতাধিক গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়। তবে পানি নেমে গেলেও রয়ে গেছে অন্তহীন দুর্ভোগ।

রামু উপজেলার রাজারকুল এলাকার হাসমত আলী (৬৩) বাংলানিউজকে জানান, ৪/৫ ফুট পানিতে তলিয়ে ছিল পুরো এলাকা। এর ওপর পানির প্রচণ্ড স্র্রোত। ঘরের চাউনিতেই আশ্রয় নিয়েছিলেন পরিবারের ৫ সদস্যকে নিয়ে। সে সময় তার মতো এলাকার শত শত পরিবার আশ্রয় নিয়েছিলেন ঘরের ছাউনি, আশ্রয় কেন্দ্রে ও উঁচু কোনো জায়গায়। একদিন পানিবন্দি থাকার পর যখন পানি নেমে গেলো তখন দেখি চারদিকে শুধুই ধ্বংসের চিহ্ন।

পাহাড়ি ঢলের পানি ও পললে তলিয়ে গেছে রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ থেকে কক্সবাজার সদর উপজেলার চাঁন্দের পাড়া পর্যন্ত বাঁকখালী নদীর দু`তীরের শতাধিক একর বীজতলা ও সবজি ক্ষেত। ফলে ওইসব এলাকায় চলছে কৃষকের হাহাকার। পানিতে মারা পড়েছে শতাধিক পোল্ট্রি ফার্মের কয়েক হাজার মুরগী। নদীতে ভাসছে মৃত গরু-ছাগল ও হাঁস-মুরগী। মাছের ঘের ও পুকুর একাকার হয়ে গেছে পানির সঙ্গে।

রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল, রাজারকুল, দক্ষিণ মিঠাছড়ি, কাউয়ারখোপ, রশিদনগর, খুনিয়া পালং, চাকমারকুল, জোয়ারিয়ানালা, গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া ও ঈদগড় ইউনিয়নের ৯৯টি ওয়ার্ডের সহস্রাধিক গ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। স্রোতের তোড়ে এসব এলাকার শত শত গ্রামীণ সড়ক বিলীন হয়ে গেছে। যার কারণে মানুষকে এখন হেঁটেই পৌঁছতে হচ্ছে গন্তব্যে। এসব সড়কের প্রায় এক ডজন ছোট-বড় কালভার্ট পানির তোড়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

বিলীন হওয়া সড়কে উপড়ে পড়েছে গাছপালা ও বৈদ্যুতিক খুঁটি। বাঁকখালী নদীর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের ভূতপাড়ায় দু`টি, হাইটুপী, তেমুহনী, অফিসেরচর আতিক্কাবিবির ঘাট, অফিসেরচর ডাকবাংলো এলাকা, রাজারকুল, চাকমারকুল মিস্ত্রিপাড়া, নয়াপাড়া, চরপাড়াসহ অন্তত ১৫টি স্থানে বাঁধ ও সড়ক ভেঙে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়েছিল।

জানা যায়, রাস্তা ও কালভার্ট বিধ্বস্ত হওয়ার কারণে চলাচল বন্ধ রয়েছে রামু চৌমুহনী-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়ক, রামু-মরিচ্যা আরাকান সড়ক, রশিদনগর-ধলিরছড়া সড়ক, চেইন্দা-রাজারকুল সড়ক, ঈদগাঁহ-ঈদগড়, তেচ্ছিপুল-লম্বরীপাড়া সড়কসহ রামুর ছোট-বড় শতাধিক সড়কে।

দুর্গত এলাকার মানুষ জানিয়েছে, খাবার ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে অনেকেই অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। সরকারি-বেসরকারি কোনো ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছেনি অনেক এলাকায়। ব্যক্তি উদ্যোগে কেউ চিড়া, গুড়, বিস্কিট, মুড়ি দিলেও তা খুবই অপ্রতুল। দুর্গত এলাকায় চলছে মানুষের হাহাকার।

জেলার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর মোশতাক আহমদ বাংলানিউজকে জানান, এ রকম ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি রামুতে এই প্রথম। বর্তমানে বন্যাকবলিত প্রতিটি ঘরে ঘরে চলছে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট।

রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল বাংলানিউজকে জানান, স্মরণকালের ভয়াবহ এ বন্যায় ৪ লাখ মানুষ পানিবন্দি ছিল। এখনও বেশিরভাগ মানুষ পানিবন্দি। উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের রাস্ত-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, মৎস্য ও পোল্ট্রি খামার, অসংখ্য বসতঘর বন্যায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। কিছু এলাকায় পানি নামতে শুরু করলেও বর্তমানে সবখানেই খাদ্য সংকট চরম আকার ধারণ করেছে।

এদিকে, চকরিয়ায় দু`লক্ষাধিক মানুষ সড়ক ও বেড়িবাঁধের ওপর মানবেতর বসবাস করছে। চকরিয়া-বাঁশখালী আঞ্চলিক সড়কের চকরিয়া অংশে প্রায় ৩০ হাজার বানভাসি মানুষ গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি, মালামাল নিয়ে খোলা আকাশের নিচে দিনাতিপাত করছেন।

পেকুয়ায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও প্রায় শতাধিক গ্রামের মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

পেকুয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবুল কালাম মিয়াজী বাংলানিউজকে জানান, উপজেলার ৭ ইউনিয়নের ৯৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা, ৬৫ হাজার লোক ও ১৫ হাজার পরিবারের বসতবাড়ি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

পেকুয়া উপজেলা চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ রাজু বাংলানিউজকে জানান, পেকুয়া উপকূল থেকে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। এ পর্যন্ত সরকারিভাবে ৫৯ টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে।

No comments:

Post a Comment