Sunday, July 03, 2011

জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মেলেনি চট্টগ্রামবাসীর

লাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে মুুক্তি পাচ্ছে না চট্টগ্রামবাসী। বিগত তিন সরকারের আমলেও নাগরিক এই দুর্ভোগের সমাধান হয়নি এবং ভবিষ্যতেও স্থায়ী কোনো সমাধানের লক্ষণ নেই। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে টানা তিন ঘণ্টায় মাত্র ৬৫ মিলিমিটারের বৃষ্টি ও সাগরের জোয়ারের মিলিত প্রভাবে জলমগ্ন হয়েছে নগরীর নিচু এলাকা। এ ছাড়া থেমে থেমে দিনভর বৃষ্টি হওয়ায় অনেক জায়গায় তা দীর্ঘমেয়াদি জলাবদ্ধতারও সৃষ্টি করেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, গতকাল সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত পতেঙ্গা বিমানবন্দরে ৩০ মিলিমিটার ও আমবাগান কেন্দ্রে ৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। কিন্তু সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত আরো বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ায় বিমানবন্দর কেন্দ্রে ৫৫ মিলিমিটার ও আমবাগান কেন্দ্রে ৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। পতেঙ্গা আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বিশ্বজিৎ চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এখন মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে এবং আরো কয়েক দিন তা অব্যাহত থাকতে পারে।' তবে গতকাল দুপুরের পর বৃষ্টির মাত্রা কমে এসেছে।
চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে প্রতিবছর বর্ষাকালীন বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা দেখা দিত এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা ও পাহাড়ধসের পর তা বন্ধে বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র এম মঞ্জুর আলম জলাবদ্ধতাকে ইস্যু করে নির্বাচনে জয়ী হলেও তা সমাধানে এখনো সফল হননি।
জলাবদ্ধতা নিরসনে নতুন খাল খননের পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র এম মঞ্জুর আলম বলেন, টানা বৃষ্টির পাশাপাশি সাগরের জোয়ার মিলিত হওয়ায় নগরীর নিচু এলাকাগুলোতে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করেছে। কর্ণফুলী নদীর ক্যাপিটেল ড্রেজিং না হওয়া পর্যন্ত জোয়ারের এই সমস্যা থেকে চট্টগ্রামবাসী শিগগিরই মুক্তি পাচ্ছে না। তবে তা কমিয়ে আনতে বিভিন্ন খালের মুখে স্লুইস গেইট দেওয়া ও সিল্টট্র্যাপগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
কালভার্ট নির্মাণ ও নালা অপরিষ্কার থাকার কারণে নিচু এলাকা ছাড়া অন্যান্য এলাকায় জলাবদ্ধতা হচ্ছে জানিয়ে মঞ্জুর আলম বলেন, বৃষ্টিপাতের কারণে নির্মাণকাজ শেষ করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া নালা ও খালের মুখ আটকে যাওয়ায় পানি সহজে নামতে পারছে না। এ ছাড়া পাঁচ বছরের কাজ অবশ্যই এক বছরে শেষ করা যাবে না।
আগ্রাবাদ সিডিএ, ছোটপুল পুলিশ লাইন, হালিশহর কে-ব্লক ও এল-ব্লক এলাকায় বৃষ্টির পানির সঙ্গে জোয়ারের মিলিত প্রভাবে দীর্ঘমেয়াদি জলাবদ্ধতা দেখা গেলেও চকবাজার, মুরাদপুর ও বহদ্দারহাট প্রভৃতি এলাকায় সকালে জলাবদ্ধতা ছিল। সকালে চকবাজারের কাঁচাবাজার এলাকায় কোমর সমান পানি ওঠায় কাঁচাবাজারের শাকসবজি, পানসহ বিভিন্ন দ্রব্য পানিতে ভাসতে থাকে। মাইনুদ্দিন নামের এক সবজি ব্যবসায়ী বলেন, বিএনপি সরকারের আমলেও আমরা পানি খেয়েছি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও বাদ যাইনি এবং সর্বশেষ এই মহাজোট সরকারের সময়েও আমরা পানির (জলাবদ্ধতা) দুর্ভোগ থেকে মুুক্তি পাইনি। এখন বৃষ্টি হলেই পানি জমবে বলে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকি।
এ ছাড়া কেবি আমান আলী রোড, কাতালগঞ্জ, বহদ্দারহাট বারইপাড়া, শুলকবহর ও মুরাদপুরের মোহাম্মদপুর এলাকায় পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বহদ্দারহাট ও মুরাদপুর এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে দুটি নতুন খালের সুপারিশ বাস্তবায়ন না হওয়ায় জলাবদ্ধতা দুর্ভোগের সুরাহা হচ্ছে না জানিয়ে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী এম আলী আশরাফ বলেন, 'নতুন খাল খনন বা পুরনো খাল সংস্কার না করে শুধু বালি ও মাটি উত্তোলন করে জলাবদ্ধতা নিরসন করা যাবে না।'
আলী আশরাফ আরো বলেন, গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিভিন্ন খালের উভয় পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালানো হলেও তা পরে বন্ধ হয়ে যায়। জলাবদ্ধতা নিরসনে সবার আগে মুরাদপুরে সিডিএ এভিনিউ রোডের সমান্তরালে ও বহদ্দারহাটে খাজা রোডের সমান্তরালে দুটি খাল খনন করতে হবে।

No comments:

Post a Comment