Friday, October 05, 2012

উখিয়া-টেকনাফে বিরোধী নেতারা আত্মগোপনে

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে বৌদ্ধ মন্দিরে হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতার এড়াতে জামায়াত ও বিএনপি নেতারা এখন গা-ঢাকা দিয়েছেন।

এ দুই উপজেলায় ৯টি বৌদ্ধ মন্দির এবং অর্ধশত ঘরবাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও অগি্নসংযোগ করা হয়েছে। ৬টি মামলায় এ পর্যন্ত ৭২ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এদের জামায়াত-বিএনপির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
কক্সবাজার জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি এবং উখিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শাহজালাল চৌধুরীকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জহিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, বুধবার সকাল থেকেই তিনি উপজেলা পরিষদের অফিসে আসছেন না। তার নামে বরাদ্দকৃত সরকারি গাড়ির চাবিও তিনি অফিসে জমা দিয়েছেন। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও এখন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, উখিয়ায়
মন্দিরে হামলাসহ সহিংস ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে জামায়াত নেতা শাহজালাল চৌধুরীকে আসামি করা হয়েছে। গ্রেফতার এড়াতে তিনি এখন গা-ঢাকা দিয়েছেন। একই সঙ্গে আত্মগোপনে চলে গেছেন তার ভাই উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সরওয়ার জাহান চৌধুরী। এই নেতার মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
সূত্র জানিয়েছে, বুধবার থেকে এলাকায় দেখা যাচ্ছে না স্থানীয় জামায়াত নেতা জানে আলম, বিএনপি নেতা সুলতান মাহমুদ চৌধুরী, সুলতান মেম্বার, সাইফুল ইসলাম, আবদুর রহিম, মনজুর আলমসহ আরও অনেক নেতাকর্মীকে।
উখিয়ায় বৌদ্ধ মন্দির, বসতবাড়িতে অগি্নসংযোগ, ভাংচুর, লুটপাটের ঘটনায় উপজেলা চেয়ারম্যান ও জামায়াত নেতা অ্যাডভোকেট শাহ জালাল চৌধুরী এবং তার ভাই উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সরওয়ার জাহান চৌধুরীকে প্রধান আসামি করে মামলা করেছে পুলিশ। এর পরপরই আতঙ্কিত বিএনপি জামায়াত নেতাকর্মীরা পালিয়ে যান।
উখিয়া থানার ওসি অপ্পেলা রাজু নাহা জানান, কোটবাজারে সহিংস হামলায় পুলিশের ৫ সদস্যকে গুরুতর আহত করার ঘটনায় বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সরওয়ার জাহান চৌধুরীসহ নেতাকর্মীদের আসামি করে একটি মামলা করেছে পুলিশ। পশ্চিম হলদিয়া পালং দীপংকর বৌদ্ধবিহার পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় ওই বিহারের অধ্যক্ষ বিমল জ্যোতি মহাথেরো বাদী হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ও জামায়াত নেতা অ্যাডভোকেট শাহজালাল চৌধুরীসহ ২৬ জনকে আসামি করে উখিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওসি জানান, আসামিদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বসতবাড়িতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। উখিয়া উপজেলায় সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা বলবৎ রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম জানান, উখিয়ার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। সংখ্যালঘুদের আতঙ্কিত না হওয়ার অনুরোধ জানান ইউএনও।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে উখিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ইমাম সমাবেশ করা হয়েছে। এতে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাহমদুল হক চৌধুরী, রাজাপালং ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, রত্নাপালং ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল কবির চৌধুরী, হলদিয়া পালং ইউপি চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন মিন্টু, জালিয়া পালং ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন চৌধুরী, উখিয়া থানার ওসি অপ্পেলা রাজু নাহা, উপজেলা ইমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা কারি কামাল উদ্দিন প্রমুখ। সভায় বক্তারা এলাকায় সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।
টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের বৌদ্ধ মন্দির ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় ২টি মামলা হয়েছে। এ পর্যন্ত ১৮৯ জন গ্রেফতার হয়েছে। পুলিশ এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, এ এলাকায় সহিংস ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছে জামায়াতের জেলা নেতা ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনেয়ারী। পুলিশের দায়েরকৃত দুটি মামলাতেই তাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেল থেকেই ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনেয়ারীকে এলাকায় দেখা যাচ্ছে না। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও বন্ধ রয়েছে। টেকনাফ উপজেলাতেও সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৮ পর্যন্ত ১৪৪ ধারা অব্যাহত রয়েছে।
সমকালে প্রকাশিত সংবাদ সম্পর্কে এমপি লুৎফুর রহমান কাজলের বক্তব্য : বুধবার সমকালে প্রকাশিত 'হামলাকারীদের তালিকা পুলিশের হাতে, ফেঁসে যাচ্ছেন এমপি কাজল' শীর্ষক সংবাদের একাংশের প্রতিবাদ জানিয়েছেন কক্সবাজার সদর রামু আসনে বিএনপির এমপি লুৎফুর রহমান কাজল। প্রতিবাদে তিনি বলেছেন, '২৯ সেপ্টেম্বর রাত ১২ টায় রামুর ইউএনওর ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। রামু চৌমুহনীতে একটি সমাবেশে রামু উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজল উপস্থিত জনতাকে শান্ত করতে বক্তব্য রাখছিলেন। পরে আমিও জনতাকে শান্ত থাকার জন্য আহ্বান জানাই। পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হলে আমি ফোনে ইউএনওকে ১৪৪ ধারা জারির অনুরোধ করি। পুলিশ সুপারকে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠাতে বলি। অথচ সেদিনের সত্য ঘটনা সমকালের সংবাদে ভিন্নভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। প্রকাশিত সংবাদে আমার সামনে-পেছনে ২০/২৫টি মোটরসাইকেল বহরের কথা হয়েছে। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। সেদিন রাতে আমার গাড়ির সামনে-পেছনে মোটরসাইকেল আরোহী কোনো সমর্থক ছিল না। যা প্রশাসনের সঠিক ও সুষ্ঠু তদন্তে বেরিয়ে আসবে।

No comments:

Post a Comment